.png)
জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর মিরপুর ইসিবি চত্বরে হামলার ঘটনার অভিযোগে দায়ের করা হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় পিবিআই তদন্তে দেখা গেছে, মামলার অনেক বাদী ও সাক্ষীর অস্তিত্বই নেই। এর কারণে তদন্ত শেষে এসব মামলায় ‘অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ফাইনাল রিপোর্ট’ দেওয়া হচ্ছে। পিবিআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত তদন্ত করা মামলার প্রায় ৫৬ শতাংশে এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
মামলার প্রেক্ষাপটে মো. আব্দুল আজিজ ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট মিরপুর ইসিবি চত্বরে হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার অভিযোগ তুলে আদালতে হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করেন। মামলায় আড়াইশ জনকে আসামি করা হয়। কিন্তু পিবিআই তদন্তে আবিষ্কার করে, বাদী আব্দুল আজিজের নাম-ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং উল্লেখিত মোবাইল নম্বর ভুয়া। মামলায় যে সাক্ষীদের নাম দেওয়া হয়েছে, তাদেরও কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
পিবিআই প্রধান (অতিরিক্ত আইজি) মো. মোস্তফা কামাল বলেন, “মামলাগুলোয় শত শত লোককে আসামি করা হয়েছে। ঘটনা ঢাকার, অথচ চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার মানুষকে ঢাকার মামলায় নাম দেওয়া হয়েছে। যারা কখনো ঢাকায় আসেননি। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে যাতে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার না হন। কিছু মামলা প্রত্যাহার হয়েছে। কিছু মিথ্যা মামলা আছে।”
আইনজ্ঞরা জানিয়েছেন, নিরপরাধ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ঢুকিয়ে হয়রানি করলে তাদের জন্য আইনি সুরক্ষা রয়েছে। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী যুগান্তরকে বলেন, “যারা মিথ্যা মামলা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।”
পিবিআই ১৯২টি সিআর মামলা তদন্ত করেছে। এর মধ্যে ২৯টি হত্যা, বাকিগুলো হত্যাচেষ্টা ও অন্যান্য ধারার। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৭৮টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। নিষ্পত্তিকৃত মামলার মধ্যে ৩৪টি প্রমাণিত, বাকি ৪৪টি অপ্রমাণিত, আপস বা প্রত্যাহারকৃত। প্রমাণিত মামলার অনেক আসামি ভুয়া, কোনো মামলার ৯০ শতাংশ আসামি ভুয়া হওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে।
পিবিআই-এর তদন্তে দেখা গেছে, ৭৮টি নিষ্পত্তিকৃত মামলার ২৭টি প্রমাণিত হয়নি, ১৭টি বাতিল বা রিকলমূলে নিষ্পত্তি, আর ২৪টি মামলা বাদী প্রত্যাহার করেছেন। সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “পিবিআই-এর বিশ্লেষণ স্পষ্ট করে দিয়েছে ৫৬ শতাংশ মামলা প্রমাণ হয়নি। এগুলো বহু আগে থেকেই মিথ্যা বলে আসা হয়েছে। মূলত এসব মামলা চাঁদাবাজি বা রাজনৈতিক স্বার্থে দায়ের করা হয়েছে।”
উল্লেখযোগ্য কিছু মামলায় প্রমাণিত হলেও আসামিদের অধিকাংশের সঙ্গে ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। উদাহরণস্বরূপ, গুলশান সিআর মামলা ৪৪৪৮/২০২৪-এর ৭৭.৪২ শতাংশ, তুরাগ ০৩/২০২৫-এর ৯০.৪০ শতাংশ, বাড্ডা ৫৪১/২০২৪-এর ৫৫.৭০ শতাংশ এবং যাত্রাবাড়ী ৭৭০/২০২৪-এর ৪৮ শতাংশ আসামি ভুয়া।
পিবিআই তদন্তে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জুলাই আন্দোলনের মামলায় অধিকাংশ অভিযোগ মিথ্যা বা ভিত্তিহীন। রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে নিরপরাধ মানুষকে আনা হয়েছে আসামির তালিকায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও সরকার ভুয়া আসামিদের নাম বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
বর্তমানে সারা দেশে জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় ১ হাজার ৭৮৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ১০৬টির চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, এবং ৪৩৭টি মামলায় ২ হাজার ৮৩০ জনের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। পিবিআই-এর অনুসন্ধান অনুযায়ী, অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া মামলার অধিকাংশ বাদী ও সাক্ষীর অস্তিত্ব নেই।