
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মূখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে চালানো সংগ্রামের মতোই গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে মৃত্যুর সাথেও লড়াই করে যাচ্ছিল। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে দেশবাসীকে কাঁদিয়ে অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ ভেরিফায়েড পেজে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পেজের এক পোস্টে বলা হয়েছে, “ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদীকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।”
হাদির ওপর হামলা ঘটে গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোড এলাকায়। ব্যাটারিচালিত রিকশায় থাকা অবস্থায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরে অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শেষমেষ উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয় এবং সেখানকার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে জানা গেছে, হামলার কয়েক মাস আগে থেকেই হাদির চলাচল, বাসা ও অফিসের রুট এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নজরদারি করা হচ্ছিল। গোয়েন্দারা চেষ্টা করছেন, এই দীর্ঘ প্রস্তুতির নেপথ্যে কারা জড়িত এবং কার স্বার্থে এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা উদঘাটন করতে।
র্যাব ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সূত্র জানিয়েছে, হামলার মূল আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান এলাকা ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া তার স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র-সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে। প্রথম দফায় মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের কর্নেল গলিতে ফয়সালের বোনের বাসার নিচ থেকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত দুটি আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিন ও ১১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে নরসিংদী থেকে আরও পাঁচটি অস্ত্র এবং ৪১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানিয়েছেন, হাদিকে গুলি করার ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ নরসিংদী সদর থানার তরুয়া এলাকার তরুয়া বিলের পানির মধ্য থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। হাদির ওপর গুলিবর্ষণে কার কী ভূমিকা ছিল এবং নেপথ্যে কারা জড়িত—সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এ পর্যন্ত র্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নান, সীমান্ত এলাকায় মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সঞ্জয় চিসিম ও সিবিরন দিও, ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও মোটরসাইকেলের মূল মালিক মো. কবির, এবং ফয়সালের বাবা হুমায়ুন কবির ও মা মোসাম্মৎ হাসি বেগম।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আবদুল হান্নানকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এছাড়া কবিরকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় হামলার নেপথ্য এবং যুক্ত আর সহযোগীদের শনাক্তকরণে তদন্ত জোরদার করা হয়েছে।