
‘বন্দে মাতরম’- ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় যে গানটি হয়েছিল সংগ্রামের মূল স্লোগান, সেটিকে কেন্দ্র করেই লোকসভায় তীব্র রাজনৈতিক তর্ক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অভিযোগ করেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যুক্তিতে কংগ্রেস গানটির ব্যবহারকে সীমিত করে সমঝোতায় গিয়েছিল, যা পরবর্তীতে দেশভাগের পথও প্রশস্ত করেছিল।
সোমবার (০৮ ডিসেম্বর) লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে মোদি এসব মন্তব্য করেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত গানটির ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অধিবেশনে দীর্ঘ আলোচনার আয়োজন করা হয়। কিছু স্তবক সরিয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দেখা দিলে এ বিষয়ে ১০ ঘণ্টার আলোচনার সময় নির্ধারণ করা হয়। কংগ্রেসের পক্ষে আলোচনায় যোগ দেন লোকসভার উপনেতা গৌরব গগৈ ও সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
আলোচনার শুরুতেই মোদি প্রশ্ন তোলেন, “বন্দে মাতরমের প্রতি অবিচার করা হলো কেন?” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৩৭ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ আপত্তি তোলার পর জওহরলাল নেহরু সুভাষচন্দ্র বসুকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছিলেন, এই গানের প্রেক্ষাপট মুসলিম সমাজে ক্ষোভ তৈরি করতে পারে। পরে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে গানটির প্রয়োগ পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মোদির দাবি, “২৬ অক্টোবর ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে কংগ্রেস বন্দে মাতরম নিয়ে সমঝোতা করে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মুসলিম লীগের চাপে নতি স্বীকার করে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এটি কংগ্রেসের তোষণনীতির উদাহরণ।”
তিনি আরও বলেন, একসময় ভারতবর্ষের কেন্দ্রস্থল ছিল বাংলা, তাই ব্রিটিশরা অঞ্চলটিকে দুর্বল করতে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ ঘটায়। তখনও ‘বন্দে মাতরম’ আন্দোলনের শক্ত প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
তবে মোদির বক্তব্যের কড়া আপত্তি জানান লোকসভার উপনেতা ও আসামের সাংসদ গৌরব গগৈ। তার ভাষ্য, কংগ্রেসই এ গানকে স্লোগানের বাইরে নিয়ে জাতীয় গানের মর্যাদায় উন্নীত করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ১৮৯৬ সালে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুর করে ‘বন্দে মাতরম’ গেয়েছিলেন, যা ১৯০৫ সালের স্বদেশী আন্দোলনের অনেক আগের ঘটনা। স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে গানটির ব্যবহার বহুবার ঘটেছে বলেও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।
গৌরব গগৈ শেষ পর্যন্ত বলেন, “যতই চেষ্টা করা হোক, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর অবদান কলুষিত করার মতো কালিমা আরোপ করা যাবে না।”