
পবিত্র কুরআনের নামে শপথ করিয়ে মানুষকে বিশ্বাসে এনে প্রতারণা করত একটি সংঘবদ্ধ চক্র। অবশেষে সেই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর পিবিআই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি গণমাধ্যমে জানায়।
পিবিআই জানায়, চক্রটি উচ্চ বেতনের চাকরি ও লাভজনক ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের প্রলোভন দেখিয়ে সহজ-সরল মানুষদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিত। বিশ্বাস অর্জনের জন্য তারা ভুক্তভোগীদের দিয়ে কুরআন ছুঁইয়ে শপথ করাত এবং বলত, "আমরা সকলে এখন ভাই ভাই এবং আজ থেকে আমরা ব্যবসায়িক যৌথ পার্টনার।"
এই চক্রের সর্বশেষ শিকার হন মিজানুর রহমান নামে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যাংক কর্মকর্তা। একটি দৈনিকে প্রকাশিত চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে তিনি 'ব্রাদার্স গ্রুপ' নামে একটি প্রতিষ্ঠানে মাসিক দুই লাখ টাকা বেতন, গাড়ি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার আশায় যোগাযোগ করেন। এরপর চক্রের সদস্যরা তাকে ডেকে নেয় রাজধানীর কলাবাগানে এসেট ড্রিম ভিলার একটি ফ্ল্যাটে। সেখানে তাকে ব্যবসায়িক প্রস্তাব দিয়ে শপথ করিয়ে অংশীদার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শর্ত ছিল, এই বিষয়ে পরিবারের কাউকে কিছু জানানো যাবে না।
২১ জুন, একই ঠিকানায় এক ব্যক্তি ভারতীয় নাগরিক সেজে এসে নিজেকে ক্রেতা হিসেবে পরিচয় দেয় এবং কোটি টাকার রোলেক্স ঘড়ি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে। অগ্রিম হিসেবে তিন কোটি টাকার একটি চেকও দেয় সে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২৫ জুন মিজানুরকে ফ্ল্যাটে ডেকে ২০ লাখ টাকা নেয় চক্রটি। এরপর মিজানুর যখন চাকরি কিংবা ব্যবসায়িক লাভের বিষয়ে জানতে চান, তারা নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। অবশেষে ২৮ জুন ভোরে তারা গোপনে সেই ফ্ল্যাট ছেড়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর মিজানুর পল্লবী থানায় অভিযোগ করেন, তার কাছ থেকে মোট ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) বিভাগ নিজ উদ্যোগে তদন্ত শুরু করে।
তদন্তে অগ্রগতি আসে ৩০ জুলাই, যখন মো. আব্দুল আজিজ নামে একজনকে আটক করা হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার সন্ধ্যায় চক্রের মূল হোতাসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। একই সময় আরেক ভুক্তভোগী, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ইলিয়াস খানকেও একই কৌশলে প্রতারণার শিকার করা হচ্ছিল। অভিযান চালিয়ে তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ ৭০ লাখ টাকা।
পিবিআই আরও জানিয়েছে, চক্রটি বারবার ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া করে অফিস স্থাপন করে। নিজেদেরকে বড় প্রতিষ্ঠানের মালিক বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। যারা যোগাযোগ করে, তাদেরকে সম্ভ্রম দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এরপর শুরু হয় প্রতারণার প্রক্রিয়া। ভুক্তভোগীদের বোঝানো হয় যে, মালিকরা দেশের বাইরে থাকে, বিশাল ব্যবসা পরিচালনা করে, এবং বিশ্বস্ত লোক প্রয়োজন। এরপরই অংশীদার হওয়ার প্রলোভনে বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে তারা হঠাৎ করেই গা ঢাকা দেয়। পুরনো নাম্বার ও সিম কার্ড বদলে নতুন নামে, নতুন জায়গায় আবারও শুরু হয় তাদের প্রতারণা।