
নোয়াখালীর হাতিয়ার নৌপথের দুরবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, “হাতিয়ার যাতায়াত ব্যবস্থা যেন ফিলিস্তিনের গাজার মতো। যেখানে জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। একজন রোগী বা কোনো গর্ভবতী মায়ের ইমার্জেন্সি নদী পারাপার হতে গিয়ে সন্তান হারাতে হয়। এমনকি মৃত্যু ঘটনাও ঘটে।”
শনিবার (৯ আগস্ট) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। হাতিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ নদীপথ বন্ধ করে নিরাপদ ফেরি সার্ভিস চালুর দাবিতে এই কর্মসূচির আয়োজন করে 'হাতিয়া সম্মিলিত সামাজিক সংগঠন'।
উক্ত মানববন্ধনে অংশ নেন হাতিয়ার প্রায় পাঁচ শতাধিক বাসিন্দা, যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে একত্রিত হন।
বক্তারা জানান, নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে জেলা সদর মাইজদী ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী ও বিপুল পরিমাণ পণ্য এই পথে যাতায়াত করে।
কিন্তু ফেরির অভাবে এখনো এই রুটে চলাচল করছে ছোট ট্রলার ও স্পিডবোট—যা যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় যখন ট্রলার চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তখন হাতিয়া মূল ভূখণ্ড থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাতিয়ার নৌপথে যাত্রীদের সঙ্গে প্রায়শই অমানবিক আচরণ, হয়রানি এবং জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায়ের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে রোগী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা নিয়মিতভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
তারা অবিলম্বে দ্বীপের সঙ্গে নিরাপদ ফেরি যোগাযোগ চালুর জোর দাবি জানান এবং দাবি আদায়ে প্রয়োজন হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
হাতিয়া সম্মিলিত সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ক ডা. মো. জোবায়ের বলেন, “হাতিয়ার জীবনমান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে নৌপথ অপরিহার্য, আর নিরাপদ যাতায়াতে ফেরির কোনো বিকল্প নেই। প্রধান উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে দ্রুত ফেরি চালুর জোর দাবি জানাচ্ছি।”
আরেক সমন্বয়ক মো. আয়াত হোসেন জুয়েল বলেন, “ফেরি হাতিয়ার প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার।”
অন্য দুই সমন্বয়ক ইসমাইল হোসাইন তাফসির ও মো. আলীও সতর্ক করে বলেন, ফেরি চালু না হলে আরও বৃহৎ কর্মসূচি দেওয়া হবে।
অধ্যাপক নঈম শামীম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা বিপি সাজ্জাদ, জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট শাহ মাহফুজুল হক চৌধুরী, ঢাকাস্থ হাতিয়া দ্বীপ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন যতন, হাতিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফাহিম উদ্দিন, ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আরেফিন আলী ও সদস্য সচিব রিয়াজ মাহমুদ, জামায়াতের নেতা তাফসির এবং ‘হাতিয়ার কথা’ পত্রিকার সম্পাদক মো. কেফায়েত প্রমুখ।