
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) বাসচালক ও হেলপারদের বিরুদ্ধে অভিনব কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে তেল চুরির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীদের বহনকারী সাদা রঙের ‘মধুমতি’ নামের বাসের চালক মোহাম্মদ ইলিয়াস কাঞ্চন (৩০) এবং তার হেলপার মো. আলাউদ্দিন (৩৫) যৌথভাবে তেল চুরির সঙ্গে জড়িত - এমন একটি ভিডিও ফুটেজ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বুধবার (১২ নভেম্বর ২০২৫) নোয়াখালীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অফিসের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসের (নম্বর: নোয়াখালী-স ১১-০০০২) তেলের ট্যাংক থেকে পাইপের সাহায্যে বালতিতে তেল নামাচ্ছিলেন অভিযুক্ত দুইজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত পাম্প থেকে তেল নেওয়ার পর কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে পাইপ দিয়ে তেল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হতো। পরিবহন পুলের একাধিক সূত্র মনে করছে, অভিযুক্ত দুজনের বাইরে আরও একটি সিন্ডিকেট এই চুরির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
তথ্য অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সাধারণত একটি বাসের ট্যাংকে ২৫০-৩০০ লিটার তেল ধারণক্ষমতা থাকে। পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ নোয়াখালী পাম্প স্টেশন থেকে তেল নিলেও চালক ও হেলপার প্রকৃত প্রয়োজনের তুলনায় ৫০-৮০ লিটার কম তেল নিতেন; কিন্তু বিলে ২৫০ লিটার সম্পূর্ণ তেল নেওয়ার কথা উল্লেখ করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন শাখা বিল পরিশোধ করলে, সেই অর্থ থেকে চক্রের সদস্যরা এবং পাম্প স্টেশনের সংশ্লিষ্টরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিত বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই পাম্প স্টেশন থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দেয়।
এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় সোনাপুর পাম্প স্টেশন (দত্তের হাট, সদর, নোয়াখালী) থেকে তেল নেওয়ার চুক্তি করে। কিন্তু সেখান থেকে আগের মতো তেল কম নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় বাসে ফুল ট্যাংক তেল ভরে অন্য জায়গায় দাঁড় করিয়ে পাইপসহ বিভিন্ন উপায়ে ট্যাংক থেকে তেল বের করে স্থানীয় লোকজন বা পাম্পে বিক্রি করত চক্রটি।
তেল চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে চালক ইলিয়াস কাঞ্চন প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে দায় স্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমি আগে কখনো এমন কাজ করিনি। আমার হেলপার (মো. আলাউদ্দিন)-এর পরামর্শেই এসব করেছি।”
এই বিষয়ে হেলপার আলাউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি ফোনে এসব বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।”
তেল চুরি চক্রের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবহন পুলের পরিচালক, সহযোগী অধ্যাপক ড. কাওসার হোসেন বলেন, “অভিযোগটি আমরা শুনেছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত করে তাদের সবাইকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। এছাড়া এই দুইজনের বাইরে কারও বিরুদ্ধেও অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”
নোবিপ্রবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) জনাব তামজীদ হোসাইন চৌধুরী বলেন, “আমরা এ বিষয়ে এখনো কিছু জানি না। আপনারা যেহেতু জানিয়েছেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।”