
একাধিক মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার ও বিপুল পরিমাণ টাকা পাচারের অভিযোগে পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিস সরাফাতসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিআইডি। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা এই মামলাটি বুধবার ২৬ নভেম্বর রাজধানীর গুলশান থানায় দায়ের করা হয়। উদ্যোগ নেয় সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
শুক্রবার ২৮ নভেম্বর সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক তদন্তে তারা জানতে পারেন, ২০০৮ সালে নাফিস সরাফাত তার সহযোগী ড. হাসান তাহের ইমামকে নিয়ে রেইস ম্যানেজমেন্ট নামে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির লাইসেন্স নেন। প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরুর পর ২০১৩ সালের মধ্যে তারা ১০টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনার দায়িত্ব পান, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১৩টিতে। অভিযোগ অনুযায়ী, এসব ফান্ডই পরবর্তীতে অবৈধ ব্যক্তিগত লাভ তোলার প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে।
তদন্তে দেখা যায়, নাফিস সরাফাত তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ ও ড. হাসান তাহের ইমামের সঙ্গে ফান্ডের অর্থ ব্যবহার করে তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) শেয়ার কেনেন এবং সেভাবেই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে জায়গা পান। একইভাবে কৌশলে আঞ্জুমান আরা শহীদও সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক হন। এরপর তারা মাল্টি সিকিউরিটিজ নামে একটি ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং সেই লাইসেন্স ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে ফান্ডের বড় অঙ্কের অর্থ নিজেদের দখলে নেন। পাশাপাশি পদ্মা ব্যাংকের অর্থ ব্যবহার করে স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি নামে আরও একটি ফান্ডে বিনিয়োগ করেন, যার আড়ালে চলত নানা অনিয়ম।
জসীম উদ্দিন খান জানান, তদন্তে এমনকি দেখা গেছে, নকল কাগজপত্র তৈরি, ব্যাংক হিসাব খোলাসহ রাজউক থেকে একাধিক প্লট দখলের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড় করিয়ে বিদেশে অর্থ পাচারের পথও তৈরি করেছিলেন তারা।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে নাফিস সরাফাত ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বেস্ট হোল্ডিংসের বন্ডে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে চাপ প্রয়োগ, বিদেশে অর্থ পাচার এবং একাধিক বাড়ি-ফ্ল্যাট কেনার অভিযোগ প্রকাশ পেলে সিআইডি তদন্ত শুরু করে। ওই অনুসন্ধানে দেখা যায়, নাফিস সরাফাত, আঞ্জুমান আরা শহীদ, তাদের ছেলে রাহীব সাফওয়ান সারাফাত চৌধুরী ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নামে তফসিলি ব্যাংকে মোট ৭৮টি হিসাব পরিচালিত হয়েছে। এসব হিসাবে প্রায় ১৮০৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা জমা এবং ১৮০৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা উত্তোলনের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে শুধুমাত্র নাফিস সরাফাত, আঞ্জুমান আরা শহীদ এবং রাহীব সাফওয়ানের নামে ২১টি হিসাব এখনো সক্রিয়, যেখানে টাকার পরিমাণ মাত্র ২ কোটি ২১ লাখ।
তদন্তে আরও জানা যায়, নাফিস সরাফাত ও আঞ্জুমান আরা শহীদের নামে কানাডা এবং ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্ধিত কোম্পানি রয়েছে। আঞ্জুমান আরা শহীদের নামে সিঙ্গাপুরের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে রয়েছে ১৫টি যৌথ হিসাব। রাহীব সাফওয়ানের নামে বিদেশি ব্যাংকে মোট ৭৬টি হিসাবের তথ্যও হাতে পেয়েছে সিআইডি। পাশাপাশি দুবাইয়ে নাফিস সরাফাতের একটি তিন রুমের ফ্ল্যাট ও পাঁচ রুমের একটি ভিলা থাকার প্রমাণ মিলেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে মোট ১ হাজার ৬১৪ কোটি ৬৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫৯ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগ নিশ্চিত হওয়ায় নাফিস সরাফাতসহ চার জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট মামলাটি দায়ের করেছে।