
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন। পুরো এলাকা ঘিরে স্থাপন করা হয়েছে নিরাপত্তা বলয়। জনসাধারণ ও সাংবাদিকদের প্রবেশের সময় করা হচ্ছে তল্লাশি।
সূত্র জানায়, রায়ের তারিখ ঘিরে সম্ভাব্য যেকোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি চালানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, “রায়ের দিন যাতে কেউ উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আদালতের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সে অনুযায়ী সাজানো হয়েছে।”
সকাল ১০টার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বেঞ্চে রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গত ২৩ অক্টোবর এ মামলার সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বিশ্বব্যাপী মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের বিচার প্রক্রিয়ার উদাহরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। পরে আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের কয়েকটি বিষয়ের জবাব দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর পর স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন পাল্টা যুক্তি দেন। শুনানি শেষে আজকের দিন রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের জন্য স্থির করেন ট্রাইব্যুনাল।
মামলাটিতে সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও অভিযুক্ত রয়েছেন। তিনি ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। প্রসিকিউশন শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ দণ্ড চাইলেও মামুনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। অন্যদিকে মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ তার খালাস চেয়েছেন। রায় ঘোষণার দিনই জানা যাবে সাবেক এই পুলিশপ্রধানের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে।
প্রসিকিউশন পক্ষ তাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যাকাণ্ড ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনা। মামলার অভিযোগনামা মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যেখানে তথ্যসূত্র রয়েছে দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠায়, জব্দতালিকা ও প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠায় এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠায়। এ মামলায় মোট ৮৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ১২ মে তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয়।
এদিকে শেখ হাসিনার রায় ঘোষণার তারিখ ঘিরে নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ দলটি লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে সারা দেশে আগুন সন্ত্রাস ও ককটেল হামলার মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে প্রসিকিউশন পক্ষ বলেছে, তারা এসব ঘটনায় কোনো ধরনের অনিরাপত্তা বোধ করছেন না।