
রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত জুলাই সনদকে সংবিধান সংস্কারের মূল ভিত্তি হিসেবে ধরে অন্তর্বর্তী সরকার আজ উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ অনুমোদন দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস একে দেশের জন্য “বিরাট খবর” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর সম্পন্ন হলে এটি শিগগিরই গেজেট আকারে প্রকাশ পাবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারের প্রস্তাব প্রণয়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রায় নয় মাস ধরে নিরলসভাবে কাজ করেছে। এই সময় কমিশন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ধৈর্য্যসহকারে রাজনৈতিক দলগুলো কমিশন কর্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। মতের পার্থক্য থাকলেও তা কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। অনেক বিষয়েই ঐকমত্যে আসতে পেরেছেন। দেশবাসী সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে এই পুরো কার্যক্রম দেখতে পেরেছেন। এটি বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে তো বটেই, পৃথিবীর অনেক দেশের জন্য এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এটি ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্যও আশাব্যঞ্জক। আমি ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দকে গণতান্ত্রিক চর্চার এই অসাধারণ আয়োজনকে সফল করার জন্য আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
তিনি আরও জানান, ঐকমত্য কমিশনের প্রণীত জুলাই সনদে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। এটিকে তিনি “একটি ঐতিহাসিক অর্জন” হিসেবে বর্ণনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কিছু প্রস্তাবে সামান্য মতভিন্নতা থাকলেও বেশিরভাগ বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে। “কেউ সংস্কারটা সংবিধানে করতে চেয়েছেন, কেউ আইনের মাধ্যমে করতে চেয়েছেন। কিন্তু সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা, নীতি ও লক্ষ্য নিয়ে কারো মধ্যে মতভেদ নেই,” উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর মতে, প্রকাশ্য বক্তব্যে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান যতটা ভিন্ন মনে হয়, জুলাই সনদ বিশ্লেষণ করলে সেই ব্যবধান অনেক কম বলে স্পষ্ট হয়।
ইউনূস বলেন, “বিবেচনায় রেখে এবং রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক স্বাক্ষরিত জুলাই সনদকে মূল দলিল হিসেবে ধরে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আজকের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫ অনুমোদন করেছে। এটি বিরাট খবর। প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর শেষে এটি ইতোমধ্যে গেজেট প্রজ্ঞাপন করার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।”