
ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের উত্তাপ বেড়েছে। ভোটের তারিখ ঠিক হলেও জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নানা শর্ত সামনে এনে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। তাদের দাবি সংস্কারের জুলাই সনদ নির্বাচনের আগে আইনগতভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ভোটের প্রস্তুতি নেওয়ার ঘোষণা আসার পরও নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ, সংশয় এবং প্রশ্ন থামছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, জামায়াত-এনসিপির অবস্থান মূলত বিএনপির ওপর চাপ তৈরির কৌশল হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শুরুতে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বিএনপি চাইছিল দ্রুত নির্বাচন, বিশেষত চলতি বছরের ডিসেম্বরে। কিন্তু গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছায় সরকার ও বিএনপি।
এই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে জামায়াত ও এনসিপি। তাদের অভিযোগ আলোচনায় অন্য দলগুলোকে সম্পৃক্ত না করে সরকার কেবল একটি দলের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। আগস্টে রোযার আগে ফেব্রুয়ারিতে ভোটের ঘোষণা এলেও দল দুটি নির্বাচনের আগে সংস্কার বাস্তবায়নের শর্তে অটল থাকে।
বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগহীন নির্বাচনে বিএনপি তুলনামূলকভাবে শক্ত অবস্থানে থাকলেও জামায়াত ও এনসিপি এখনো ভোটের রাজনীতিতে একক প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। ফলে আসন ভাগাভাগি বা রাজনৈতিক দরকষাকষির সুযোগ তৈরির জন্য তারা শর্তের জোর দিচ্ছে।
জামায়াতের অভিযোগ, লন্ডন বৈঠকের পর থেকে প্রশাসন বিএনপির প্রতি সহনশীল হয়ে উঠেছে, যা সমান সুযোগের পরিবেশ নষ্ট করছে। এনসিপি নেতা আখতার হোসেনের ভাষায়, “সংস্কার ও বিচারের বিষয় পাশ কাটিয়ে শুধু নির্বাচনে মনোযোগ দিলে মানুষের প্রত্যাশা ভেঙে যাবে।”
জুলাই সনদ আইনগতভাবে বাস্তবায়ন করে তবেই নির্বাচন
নির্বাচনের আগে থেকেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত
উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে আনুপাতিক ভোট (PR) পদ্ধতি চালু
সংস্কার ও সংবিধান সংশোধনে জাতীয় ঐকমত্য
এই দাবিতে ইসলামপন্থী আরও কিছু দল তাদের সঙ্গে রয়েছে। তবে বিএনপি PR পদ্ধতির বিরোধিতা করছে, এটিকে আলোচ্যসূচির বাইরের দাবি বলেও মন্তব্য করেছে।
জামায়াত ও এনসিপি নির্বাচনে না গেলে ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমে যাবে এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এতে বিএনপিও অস্বস্তিতে পড়তে পারে। বিএনপি নেতারা অবশ্য এটিকে "মাঠের বক্তৃতা" বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং বিশ্বাস করেন, ফেব্রুয়ারিতে সবাই ভোটে অংশ নেবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ভোটের সময় ঘোষণা হয়ে গেছে, এখন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তবে সেখানে সংবিধান সংস্কার আলোচনার বিষয় নয়।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, দাবি আদায়ের আন্দোলন যদি তীব্র হয়, নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। যদিও কোনো দলই চায় না নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে তার দায় তাদের কাঁধে আসুক।