
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি, লেখক ও রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর মৃত্যুর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ছয় পৃষ্ঠার লিখিত জবানবন্দি জমা দেন এবং এর ভিডিও রেকর্ডও করা হয়।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) উমরের মৃত্যুর পর তার সেই জবানবন্দি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেখানে তিনি মন্তব্য করেন, “শেখ হাসিনাকে যদি নরেন্দ্র মোদি মেরে ফেলে, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।”
জবানবন্দিতে উমর অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে শেখ হাসিনা বড় ধরনের নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন এবং ভারত সব সময় তাকে সমর্থন দিয়েছে। তিনি দাবি করেন, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর সঙ্গে শেখ হাসিনার গভীর সম্পর্ক ছিল, যা তাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে টানা ক্ষমতায় থাকতে প্রতিটি নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হওয়া সব নির্বাচনই তিনি নিজের অনুকূলে পরিচালিত করেছেন। উমরের ভাষায়, “২০১৪ সালে ভোটকেন্দ্রে ভোটার ঢুকতেই পারেনি, ২০১৮ সালে রাতের ভোট হয়ে গিয়েছিল, আর ২০২৪ সালেও একই চিত্র দেখা গেছে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে এর দাবিতে আন্দোলন করলেও ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে সেটি বাতিল করেন। কারণ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ জয়ের সুযোগ হারাবে বলে তিনি মনে করেছিলেন।
প্রয়াত এই রাজনীতিক অভিযোগ করেন, প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে শেখ হাসিনা ঘুষ, সুবিধা ও সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি ভয়-ভীতি প্রদর্শনের পথও নিয়েছিলেন। তার দাবি, এসব নিয়ন্ত্রণের কারণেই আওয়ামী লীগ বারবার নির্বাচনে জয়ী হয়েছে, যদিও বাস্তবে তাদের জনসমর্থনের ভিত্তি ছিল দুর্বল।
উল্লেখ্য, বদরুদ্দীন উমর গত ২২ জুলাই শ্বাসকষ্ট ও নিম্ন রক্তচাপের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। দশ দিন চিকিৎসা শেষে বাসায় ফেরার পর রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর শ্যামলীর একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।