
গুম ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে ঘিরে কৃত্রিম উত্তেজনা তৈরি করে জনদৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
বুধবার ২৪ ডিসেম্বর দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাম্প্রতিক উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “আমরা বারবার বলার চেষ্টা করেছি আদালতের পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। কিন্তু আসামিপক্ষের আইনজীবী দাবি (ক্লেইম) করার চেষ্টা করেছিলেন যে তিনি একজন সিনিয়র আইনজীবী। অথচ আমরা রেকর্ড ঘেঁটে দেখলাম তিনি ২০২৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হয়েছেন। অথচ দাবি করছেন তিনি একজন সিনিয়র আইনজীবী। তাকে রেসপেক্ট (সম্মান) করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনারস অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার-১৯৭২-এ বলা আছে, যেটার মাধ্যমে আইনজীবীদের শৃঙ্খলা রক্ষা করা হয়। সেখানে আর্টিকেল ২৬-এ খুব পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে চিফ প্রসিকিউটর অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ ধারণ করেন। তাকে সেই পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল যখন কোনো আদালতে শুনানির জন্য দাঁড়াবেন, তখন কোনো আইনজীবী আর দাঁড়াতে পারবেন না। অর্থাৎ আমি যখন কোর্টে যুক্তিতর্কের জন্য দাঁড়াবো, সেখানে অন্য পক্ষের যত আইনজীবী থাকুক- সিনিয়র বা জুনিয়র হোক; আমি দাঁড়ানো থাকা অবস্থায় কোনো আইনজীবী কথা বলতে পারবেন না। এটাই হচ্ছে আইন। আমি বসে গেলে তখন তারা তাদের আর্গুমেন্ট বা যুক্তিতর্ক করতে পারবেন। কিন্তু তারা সেই ডিসেন্সিটা (শিষ্টাচার) রক্ষা করেননি। উল্টো গণমাধ্যমের সামনে অভিযোগ করেছেন তিনি সিনিয়র আইনজীবী। তাকে মর্যাদা দেওয়া হয়নি। এটা হচ্ছে এক ধরনের হাইপ তৈরি করে এ বিচারের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা চালানো।”
গুম সংক্রান্ত মামলার ভয়াবহতা তুলে ধরে তাজুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশে হাজারও মানুষকে গুম করা হয়েছে। তাদের মধ্যে শত শত মানুষকে গুমপূর্বক হত্যা করে লাশ বিভিন্ন নদী-নালা, খাল-বিল, সাগরে, জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এমন কঠিন মামলার বিচার যখন হচ্ছে, আসামিরা তাদের বারবার তাদের পরিচয়... তারা যখন পুলিশ হিসেবে এই অপরাধটা করেছেন, র্যাবে থেকে করেছেন, সেই জিনিসটা ভুলে গিয়ে বারবার তারা বলার চেষ্টা করছেন আমরা সেনাবাহিনীর অফিসার। অথচ সেনাবাহিনীর বিচার এখানে হচ্ছে না। তারা যখন অপরাধগুলো করেছেন তারা কখনও সেনা কমান্ডের অধীনে ছিলেন না। সেনাবাহিনীর পোশাকে ছিলেন না। শৃঙ্খলার মধ্যে ছিলেন না। তারা ছিলেন পুলিশ সদস্য। অথচ এই সেনা পরিচয়কে বাইরে ব্যবহার করার মাধ্যমে তারা মামলাটাকে সেন্সেটাইজ করার চেষ্টা করেছেন। এটা অসৎ উদ্দেশ্যে করছেন আসামিপক্ষের এই আইনজীবীরা।”
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের শাসনামলে টিএফআই সেলে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়ার পর সূচনা বক্তব্যের তারিখ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে আদালতে বাদানুবাদের পরিস্থিতি তৈরি হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।