
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে র্যাবের টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক-বর্তমান সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে আগামী ২১ জানুয়ারি প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হলো।
এদিন মামলার ১০ জন সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন। অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, শাইখ মাহদীসহ অন্যরা। গ্রেপ্তার ও পলাতক আসামিদের পক্ষে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নেন।
শুনানির শুরুতে আসামিপক্ষের করা অব্যাহতির আবেদন খারিজ করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে চারটি অভিযোগে সবার বিরুদ্ধে বিচার শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়।
সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল চত্বর ও আশপাশের এলাকায় ছিল কড়া নিরাপত্তা। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করেন। সকাল ১০টার পর ঢাকার সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তারা হলেন— র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।
এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ সাতজন এখনো পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন— শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ এবং র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম।
এর আগে, গত ১৪ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার তিন আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ। সাতজনের পক্ষে ব্যারিস্টার তাবারক হোসেন ভূঁইয়া এবং আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এম হাসান ইমাম শুনানি করেন। তিনজনের পক্ষে সুজাদ মিয়া এবং শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী মো. আমির হোসেন আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
উল্লেখ্য, গত ৩ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি শেষ করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানিতে তিনি টিএফআই সেলের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে গুমের শিকার ব্যক্তিদের দীর্ঘদিনের অমানবিক পরিণতির নানা বিবরণ উপস্থাপন করেন এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষাপটে একটি নতুন বাস্তবতার কথাও তুলে ধরেন।