নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) তারুণ্যের উৎসব উদযাপন, কৃতী শিক্ষার্থী ও গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) নোবিপ্রবির বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ মোহাম্মদ রুহুল আমিন অডিটোরিয়ামে বৃহত্তর নোয়াখালী কল্যাণ সমিতি, ঢাকা’র আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব জনাব মো. ইসমাইল জবিউল্লাহ।
বৃহত্তর নোয়াখালী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মির্জা গালিব আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব জনাব রেহানা পারভীন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জনাব মো. মিজানুর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (অর্থ ও ক্রয়) অধ্যাপক মোহাম্মদ মনির হোসেন পাটওয়ারী। অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে ছিলেন নোবিপ্রবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ মুরাদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক সচিব জনাব মো. ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, প্রথমেই ২৪-এর ছাত্র জনতার বিপ্লবে যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের এবং শহিদ ওসমান হাদির বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমি গর্বিত কারণ আমি নোয়াখালীর সন্তান। ভুলে গেলে চলবে না আমরা বাংলাদেশেরও নাগরিক। তাই অন্য জেলার সঙ্গে আমরা বৈষম্য করবো না। আমরা যে যেখানে আছি সেখান থেকে যদি নিজের অঞ্চলকে সাহায্য করতে পারি তাহলে প্রতিটি অঞ্চল আলোকিত হবে। যারা আজকে কৃতী শিক্ষার্থী হিসেবে এখানে সংবর্ধিত হয়েছো তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। তোমরা প্রযুক্তির যুগে পড়াশোনা করছো এবং একে কাজে লাগিয়ে তোমরা যে এগিয়ে যাচ্ছো এজন্য আমরা আনন্দিত। তোমাদের চিন্তা-ভাবনা খুবই সুন্দর। তোমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে এক ক্লিকেই পুরো বিশ্বকে হাতের নাগালে পাচ্ছো। তবে অভিজ্ঞদের অভিজ্ঞতাকেও কাজে লাগাতে হবে। ভবিষ্যতের পরিবর্তিত বাংলাদেশের জন্য প্রবীণদের অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের সংযোগ স্থাপন করতে হবে। তবেই বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত সাফল্যে পৌঁছাবে।
এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নৈতিক মূল্যবোধ পরিবারের কাছ থেকে গ্রহণ করবে এবং একে অনুশীলন করতে হবে। নমনীয় থাকতে হবে, তবেই সাফল্য আসবে। তোমাদের মনে রাখতে হবে জীবন একটি শেখার জায়গা। তাই আইন কানুন এবং বিধি নিষেধ তোমাদের মেনে চলতে হবে। যে কোনো কাজ করতে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, আজকের আগত এবং সংবর্ধিত অতিথিদের স্বাগত। আজকে যারা সংবর্ধিত হচ্ছেন তাদেরকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি এবং বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতিকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি চব্বিশের বিপ্লবের সকল শহিদসহ শরিফ ওসমান বিন হাদির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। এ ধরণের সম্মাননার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনুপ্রাণিত হবে। আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলের শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছি। সম্প্রতি বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে নোবিপ্রবি জায়গা করে নিয়েছে। শিক্ষা এবং গবেষণায় আমরা উত্তরোত্তর এগিয়ে যাচ্ছি। আজকে নোয়াখালীর যেসব কৃতি সন্তান মঞ্চে আছেন তারাও আমাদের সহযোগী হবেন এ প্রত্যাশা করি।
এ সময় তিনি আরও বলেন, নোবিপ্রবির অবকাঠামোগত উন্নয়নে সম্প্রতি ৩৩৪ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে পাশ হয়েছে। আজকের যারা মঞ্চে রয়েছেন তাদের প্রত্যেকে এই প্রজেক্টের জন্য সর্বাতœক চেষ্টা করেছেন। এ জন্য আমি সবার প্রতি নোবিপ্রবির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। নোবিপ্রবিকে বিশ্বের দরবারে আরও উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এবং গ্লোবাল র্যাঙ্কিংয়ে সেরা পাঁচশো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস করি। উপাচার্য আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি নোয়াখালীবাসীর যে ঐক্য সে ঐক্যের মধ্যে দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চল সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আমাদের সন্তানরা যাতে ন্যায়ভিত্তিক, বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত একটি সমাজ গড়তে পারে আমরা অভিভাবক হিসেবে সেই চেষ্টাই করতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) ড. কাইয়ুম আরা বেগম তার বক্তব্যে বলেন, এই কৃতিত্ব ধরে রাখতে হলে তোমাদেরকে অনেক সাধনা করতে হবে। আমাদেরকে পৃথিবীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে চলতে হবে। কারণ মানুষ তার স্বপ্নের চেয়েও বড়। তাই তোমাদেরকে শুধুমাত্র নোবিপ্রবি কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে স্বপ্ন দেখলেই হবেনা, তোমাদেরকে স্বপ্ন দেখতে হবে হার্ভার্ড, এমআইটি’র মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হওয়া নিয়ে। তাহলেই বুঝবো যে শিক্ষাক্ষেত্রে তোমরা এগিয়ে গেছো। যে অভিভাবক এবং শিক্ষকরা এই শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার জন্য শ্রম দিয়েছেন তাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ আবু ইউছুফ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর সদস্য জনাব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন বৃহত্তর নোয়াখালী কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি জনাব মামুনুর রশীদ এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফারুক চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর নোয়াখালী কল্যাণ সমিতির ফারিয়া বিনতে গালিব নদী ও ইসতেখার আহমেদ নিপু।
বক্তব্য শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের মাঝে শুভেচ্ছা স্মারক ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। পরে নোবিপ্রবির ২০ জন শিক্ষার্থী ও নোয়াখালীর ১৮ টি স্কুলের জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সম্মাননা দেয়া হয়।