
বাংলাদেশে প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের জন্য রাজনৈতিক লড়াইয়ের বাইরে সাংস্কৃতিক সংগ্রামের ডাক দিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজুর রহমান সমাবেশে বলেন, “রাজনৈতিক লড়াই করে বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের সংগ্রাম শুরু হবে শহীদ ওসমান হাদির ইনকিলাব মঞ্চের সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মাধ্যমে। আগামীকাল (আজ শুক্রবার) বাম, শাহবাগি, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে, তাহলেই বাংলাদেশ প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করবে।”
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে শহীদ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে তার বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বিক্ষোভ মিছিলটি রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে শুরু হয় এবং এতে ছাত্রশিবির ছাড়াও অন্যান্য ছাত্র সংগঠন, যেমন জাকসু, ছাত্রশক্তি, আধিপত্যবাদবিরোধী মঞ্চসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ নেন।
মোস্তাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে আরও বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এই খুনি হাসিনার দল হাজার হাজার নিষ্পাপ ছেলেকে হত্যা করেও তৃপ্ত হয়নি, এখন বিদেশে বসে বিপ্লবীদের হত্যার ছক কষছে।”
তিনি বলেন, “আজ এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, শহীদ ওসমান হাদির রক্তের ওপর দিয়ে, শহীদদের রক্তের ওপর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। যেসব ভারতীয় বৈধ বা অবৈধভাবে বাংলাদেশে চাকরি করছে, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারতে পুশব্যাক করতে হবে। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যতক্ষণ না হাসিনাকে বাংলাদেশে হস্তান্তর করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের সম্পর্ক থাকতে পারে না।”
মোস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার দুপুরে তিনি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেন, যেখানে বলেন, “আমার বক্তব্য স্পষ্ট করেছি, শুধু রাজনৈতিক লড়াইয়ে প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হয় না। শহীদ ওসমান হাদি ভাই ইনকিলাব মঞ্চের মাধ্যমে ভারতীয় আধিপত্যবাদ এবং আওয়ামী প্রক্সি উদীচী, ছায়ানটের সাংস্কৃতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু করেছিলেন, সেই লড়াই আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। তাদের সকল আধিপত্যবাদী বয়ানকে তছনছ করতে হবে। ইট, পাথরের দেয়াল ভেঙে আধিপত্যবাদকে মোকাবিলা করা যায় না, সেটা হাদি আমাদের শিখিয়েছে।”
পরে সন্ধ্যায় আরেকটি পোস্টে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “গতকালের শহীদ ওসমান শরিফ হাদী ভাইয়ের মৃত্যুর পর প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশে আমার কিছু শব্দের জন্য স্পষ্টকরণ প্রদান করছি। 'তছনছ' শব্দটির মাধ্যমে ভাঙচুর বোঝানো হয়নি, বরং এর মানে ছিল শহীদ হাদির যে স্বপ্ন ছিল, নিয়মতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে বিকল্প কাঠামো গড়ে ফ্যাসিবাদী বয়ান মোকাবেলা করা। কিছু তাড়াহুড়ো করে শব্দচয়নে ভুল হয়েছে, তবে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার—আমরা নিয়মতান্ত্রিক পথেই আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে চাই। ইসলামী ছাত্রশিবির বহু জনশক্তির খুনের পরও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এসেছে।”
মোস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্যে তার রাজনৈতিক অবস্থান এবং প্রতিবাদী মনোভাব স্পষ্ট হলেও, তার ব্যবহার করা কিছু শব্দ এবং ভঙ্গি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, যা সামাজিক ও রাজনৈতিক স্তরে নানা প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।