
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে দীর্ঘ ১১ মাসের সংঘাতের পর গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা রাখাইনের মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এরপর থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকায় বেড়েছে উত্তেজনা ও আতঙ্ক। বিশেষ করে নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে প্রায়ই আরাকান আর্মির হাতে অপহরণের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশি জেলেরা।
সর্বশেষ ৯ দিনের ব্যবধানে আরাকান আর্মি ৫১ জন বাংলাদেশি জেলেকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে মিয়ানমারে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে টানা চার দিনেই অপহরণ হয়েছে ৪৬ জন। এখন পর্যন্ত একজন জেলেকেও ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, এসব অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ১৭ আগস্ট থেকে ২৬ আগস্টের মধ্যে। সর্বশেষ ২৬ আগস্ট নাফ নদের মোহনা থেকে দুটি মাছ ধরার ট্রলারসহ ১৩ জন জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।
ট্রলার মালিকদের দাবি, মিয়ানমার অংশে নাফ নদে এখন আরাকান আর্মির একচ্ছত্র আধিপত্য চলছে। ফলে, নদীতে মাছ ধরতে গেলেই জেলেরা অপহরণের শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় অপহৃত জেলেদের ফেরত দেওয়া হলেও তাদের মাছ ও জাল লুট করে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর কারণে জেলেদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। অপহৃতদের পরিবারগুলো চরম অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে।
কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট বিএন শাকিব মেহবুব বলেন, “বারবার জেলেদেরকে সতর্ক করার পরও তারা জলসীমা অতিক্রম করছে। এ কারণে এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে।” তিনি আরও জানান, নাফ নদে কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে এবং জেলেদের জলসীমানা অতিক্রম না করতে সতর্ক করা হচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “মূলত নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে ভাটার সময় জেলেদের নাইক্ষ্যংদিয়া হয়ে আসতে গিয়ে মিয়ানমারের জলসীমানা অতিক্রম করতে হয়। এ সুযোগে জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি।” তিনি আরও জানান, অপহৃতদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বিজিবি ও কোস্টগার্ড যৌথভাবে কাজ করছে এবং নাফ নদে টহল ও নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।