
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে স্বীকারোক্তি দেওয়ায় সাবেক পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করে। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। মোট ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়টি ছয়টি ভাগে বিভক্ত।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক বলেন, “চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এই মামলার বিচারে অবদান রেখেছেন। তিনি সম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে তৎকালীন পরিস্থিতি প্রকাশ করেছেন। তিনি স্বীকার করেন যে, ৩৬ দিনের আন্দোলনের সময় তিনি সকল ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার অবদান ট্রাইব্যুনালকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। তাই মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা ৫ বছরের কারাদণ্ডে সীমিত করা হয়েছে।”
মামলার অপর দুই আসামি ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। আদালত তাদের নামে দেশে থাকা সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, “শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান কামাল এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের অপরাধ সর্বোচ্চ সাজার যোগ্য। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের পলিয়ে যাওয়া বিষয়টিও অপরাধ প্রমাণ করে।”
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার ব্রিফিংয়ে জানান, পলাতক অবস্থায় থাকা আসামিরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন না।
এর আগে, গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। অভিযোগে তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এ অভিযোগগুলো হলো: ১৪ জুলাই গণভবনে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূলের নির্দেশ, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা, আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা।
১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিকভাবে এই পাঁচ অভিযোগের ভিত্তিতে তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক থাকলেও, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গ্রেফতারকৃত একমাত্র আসামি। সেই দিনই মামুন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দেন এবং রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন।