
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যার ঘটনা নিয়ে নতুন তথ্য সামনে এসেছে। ১৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের গুলিতে কীভাবে তিনি প্রাণ হারিয়েছিলেন এবং তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কীভাবে পুলিশ তাঁর লাশ ছিনিয়ে নেয়- এসব বর্ণনা দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী সাজু রায়।
রোববার (২৩ নভেম্বর) সাজু রায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০ নম্বর সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনাল-২-এ জবানবন্দি দেন। মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
২৬ বছর বয়সী সাজু রায় রংপুর শহরের বাসিন্দা। ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে বর্তমানে চাকরিপ্রত্যাশী। তিনি জানান, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় বাসা থেকে বের হয়ে রংপুর প্রেস ক্লাবে যান। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে মিছিল করছে দেখে তিনি মিছিলে যোগ দেন এবং পরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওনা হন।
দুপুর দেড়টায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে পৌঁছালে পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। সাজু বলেন, “মিছিলের পেছনে দাঁড়িয়ে পুলিশ ও ছাত্রদের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছিল। হঠাৎ পুলিশ আক্রমণ চালায়। সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হয়। আমাদের মধ্যে একজন ছাত্র আহত হয়—তার নাম মুন। আমরা সবাই আবার বিশ্ববিদ্যালয় গেটের দিকে ফিরে যাই।”
সাজু জানিয়েছেন, “গেটের ভিতর থেকে পুলিশ, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমাদের দিকে এগিয়ে আসে। আমরা পালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পুলিশ গুলি চালায়। তিনি হাতের লাঠি দিয়ে রক্ষা করতে চেষ্টা করেন এবং রোড ডিভাইডার পার হয়ে পড়েন। কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে তুলে পার্কের মোড়ে নিয়ে আসেন। আমরা তিনজন মিলে তাকে রিকশায় করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই।”
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং জানান, আবু সাঈদ মারা গেছেন। তার লাশ স্ট্রেচারে করে জরুরি বিভাগের নিচতলায় রাখা হয়। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা লাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিতে চাইলে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়। পরে তারা ডিসি অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেন। রাত ১০-১১টার দিকে পুলিশ লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছে বলে জানা যায়।
সাজু আরও বলেন, “প্রথম দফার লাঠিচার্জের সময় সরদারপাড়ায় আবু সাঈদের ওপর আঘাত করা হয়। পরে পুলিশের হামলার সময় শিক্ষক মশিউর ও আসাদুজ্জামানও উপস্থিত ছিলেন। প্রক্টর শরিফুল ইসলাম পুলিশের সঙ্গে কথা বলে চলে যান। গুলি করেছেন এএসআই আমির আলী ও কনস্টেবল সুজন। পুলিশ ও ছাত্রলীগের কিছু সশস্ত্র ব্যক্তি ঘটনাস্থলে ছিলেন।”
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সাজু রায়কে জেরা করা হয় পলাতক ২৪ আসামি ও গ্রেপ্তার আসামিদের আইনজীবীদের দ্বারা। আগামী সোমবার (২৪ নভেম্বর) পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ হবে।
মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- এএসআই আমির হোসেন, সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ।