
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে গ্রেপ্তার অধ্যাপক ড. এরশাদ হালিমের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। শুনানিতে তার পক্ষের আইনজীবী দাবি করেন, বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে এরশাদ হালিমকে ফাঁসানো হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক মেহেদী হাসান মিলন, আদালতে আসামিকে উপস্থিত করে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন। এসময় আসামিপক্ষ জামিন চান।
শুনানিতে আইনজীবী শ্যামল কুমার রায় বলেন, "মাননীয় আদালত, এজাহার দেখুন। ঘটনার এক মাস বিলম্ব করে মামলাটি করেছে। তবে এজাহারের সাথে কোনো ডাক্তারি রিপোর্ট দেন নাই। সেই ছাত্র তার আত্মীয় স্বজন বা পুলিশ কাউকে জানায় নাই। এই ঘটনার পরই তো তিনি বন্ধু, পুলিশ বা বিভাগের অন্য কাউকে জানাতে পারতেন। এজাহারে আছে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তবে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কি তা এজাহারে বলা হয় নাই। কিছু হলে সাধারণত ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলা হয়। এরশাদ স্যারের সঙ্গে কেন কথা বললেন তিনি।"
তিনি আরও যুক্তি দেন, "মূলত শিক্ষক এরশাদ গবেষণা নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করার কারণে বিভাগের শিক্ষকরা রাগান্বিত হন৷ খুব শিঘ্রই বিভাগের তার চেয়ারম্যান হওয়ার কথা৷ তিনি বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার। তিনি স্ত্রী সন্তানের সঙ্গে বাসায় থাকেন। এমন কোনো ঘটনা বাসায় ঘটার কথা না। আসামি ডায়াবেটিস, এজমাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তিনি নির্দোষ। তাকে জামিন দিলে পলাতক হবেন না।"
দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগের দিন রাত ১১টার দিকে শেওড়াপাড়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়। এরপর রসায়ন বিভাগের ওই শিক্ষার্থী থানায় মামলা করেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ভিকটিম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের (২০২২-২৩) শিক্ষাবর্ষের নিয়মিত ছাত্র। ২৬ সেপ্টেম্বর ল্যাব পরীক্ষায় ‘একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার’ পর তিনি এরশাদ হালিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এরশাদ সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তাকে ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাসায় যেতে বলেন। ছাত্রটি সেখানে গেলে তাকে যৌন নির্যাতন করা হয় এবং কাউকে কিছু না বলতে ভয় দেখানো হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, পরদিন পরীক্ষার বিষয়ে সহযোগিতার কথা বলে অধ্যাপক আবারও তাকে বাসায় যেতে বলেন, তবে ‘সমকামী আচরণের’ কারণে ছাত্রটি সেখানে যায়নি এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গ্রামে চলে যায়। পরে ফোনে তাকে ‘অশ্লীল ভাষায়’ গালাগাল করা হয় এবং বাসায় না গেলে ভয়ভীতি দেখানো হয়।
১০ অক্টোবর ঢাকায় ফিরে ছাত্রটি বাসায় যাওয়ার অনুরোধ পেলে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু পরিবারের পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি বাধ্য হয়ে আবারও বাসায় যান। অভিযোগ অনুযায়ী, সেদিন তাকে মারধর ও বিকৃত যৌন নির্যাতন করা হয়, এবং জ্ঞান হারানোর পর পরদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে তাকে হলে নামিয়ে দেওয়া হয়।