
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় যোগ দিল জামায়াত
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের দ্বিতীয় দিনের আলোচনা সভায় যোগ দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। বুধবার (১৮ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে শুরু হওয়া এ সভায় দলটির পক্ষ থেকে দুই শীর্ষ নেতা যোগ দেন। আজকের আলোচনার বিষয় জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি), রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, জেলা সমন্বয় কাউন্সিল। এইদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে যোগ দিতে থাকেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। গতকাল প্রথম দিনের আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামী উপস্থিত না হলেও আজ দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের যোগ দিয়েছেন।
.png)
সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে যাবে না বিএনপি, ইশরাক ইস্যুতে নমনীয় হবে
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার দ্বন্দ্ব জাড়াতে চায় না দলটি। তারা মনে করেন, বিগত কয়েক মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। লন্ডন বৈঠকের মধ্য দিয়ে সেই দূরত্ব কমে সমঝোতা সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটা বড় সুযোগ সৃষ্টা হয়েছে। এখন কোনো ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে গেলে নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। গত সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির নিয়মিত সভায় এই মুহূর্তে সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে দলের নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ না পড়ানোকে কেন্দ্র করে চলমান আন্দোলন থেকে সরে আসার মতামত দিয়েছেন স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ নেতা। বিএনপির স্থায়ী কমিটি দুইজন সদস্য জানান, মেয়র ইস্যুতে ইশরাক হোসেনের চলমান আন্দোলন ও নিজেকে নিজে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠকে করা নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। সেখানে বেশিরভাগ সদস্য এই আন্দোলন থেকে সরে আসার মতামত দিয়েছেন। তারা মনে করেন, এই আন্দোলন সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হবে। তবে, স্থায়ী কমিটির কোনো-কোনো সদস্য মনে করেন, আদালত ও নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশের পর ইশরাকে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানো এখানে ষড়যন্ত্র রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইশরাক ইস্যুতে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে মতামত এসেছে। তবে, এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আপাতত মেয়র ইস্যুকে কেন্দ্র করে চলমান আন্দোলন নমনীয় হবে বিএনপি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পর মঙ্গলবার (১৭ জুন) ইশরাক হোসেনের নগর ভবনে যাওয়া এবং বৈঠক করার ঘটনায় বিস্মিত হয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ইশরাক হোসেন ইস্যুতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছু জানাতে হলে দলের পক্ষে থেকে জানাবেন। স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকে লন্ডনে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে, এটা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা এগোয়নি। বৈঠকে শুরুতে লন্ডন বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে উল্লেখ করে সভায় তারেক রহমানকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। তবে, ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে সভায় তা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সুন্দর ও সৌহার্দপূর্ণভাবে বৈঠক শেষ করার জন্য আমরা অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এরপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বৈঠকে আলোচনা বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি। আমরা বিষয়টি জানতে চাওয়া এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় কিছু জানতে চায়নি। মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আলোচনা বিষয়ে যা জানানোর দরকার তা দলের মহাসচিব সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দিয়ে জানাবেন। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বুধবার (১৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হবে তাকে। বিএনপির চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, আজ সন্ধ্যা ৬টায় গুলশানের বাসা থেকে তাকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হবে। যুক্তরাজ্যে উন্নত চিকিৎসা শেষে গত ৬ মে সকালে দেশে ফেরেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে দেশে ফেরেন দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান।

মার্কিন দূতাবাসে জামায়াতের বৈঠক, যেসব বিষয়ে আলোচনা হলো
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক শাখাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিকেলে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেন মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক শাখাপ্রধান ম্যাথিউ বের এবং তার দুই সহকর্মী। জামায়াতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ। বৈঠকে জামায়াতের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার বিষয়ে দলটির দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানের সময়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার, দলীয় সংস্কার, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। জামায়াত নেতারা বৈঠকে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও সন্ত্রাস-চরমপন্থার বিরুদ্ধে দলটির ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন। উল্লেখ্য, আজই অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফা সংলাপ। তবে এ সংলাপে অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

শেখ হাসিনা ইচ্ছামতো দেশের ইতিহাস রচনা করেছিলেন: রিজভী
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের ইচ্ছামতো দেশের ইতিহাস ও পাঠ্যবই রচনা করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র থাকলে এমনটা সম্ভব হতো না। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এটি সম্ভব হতো না, যেটি শেখ হাসিনা করেছেন। প্রকৃত গণতন্ত্র আসলে প্রকৃত ইতিহাস রচনা হবে, প্রকৃত গবেষণা হবে। যে গবেষণার ফলাফল দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে পারবো। মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আমরা বিএনপি পরিবারের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সংকট এখনো কাটেনি। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা এবং প্রতিষ্ঠিত করতে এখনো অনেক কাজ বাকি। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনে তা সুপ্রতিষ্ঠিত করা, গণতন্ত্রের সৌধ নির্মাণ করা- এ কাজগুলো আমাদের করতে হবে। আর আমাদের গণতন্ত্র বিনির্মাণে তারেক রহমান যে ভূমিকা রাখবেন, সে আভাস আমরা পাচ্ছি। রিজভী বলেন, গত ১৬ বছর শেখ হাসিনা বিএনপির বিরুদ্ধে ভয়ংকর অপপ্রচার চালিয়েছেন। সেই অপপ্রচার বর্তমানেও চলছে। এ সময় গণতন্ত্র ফেরাতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপির এ নেতা বলেন, ফ্যাসিবাদের নির্যাতনের হাত থেকে ডা. জুবাইদা রহমানের মতো মানুষও রেহাই পাননি। একটি প্রখ্যাত পরিবারের সন্তান ডা. জুবাইদা রহমান। তার নামেও মিথ্যা মামলা দিয়েছে। অথচ তিনি বিনম্র আন্তরিকতার একজন মানুষ, রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধের অনন্য একজন মানুষ, তাকেও তারা ছাড় দেয়নি। তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক সিনিয়র সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম রনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে নেতারা বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন এবং তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়ায় অংশ নেন।

‘কোরআনের শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি ন্যায়ের পথে অগ্রসর হতে পারে না’
কোরআনের শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি প্রকৃত উন্নয়ন ও ন্যায়ের পথে অগ্রসর হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। মঙ্গলবার (১৭ জুন) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত কোরআন অলিম্পিয়াডের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। শিবির সভাপতি বলেন, ‘কোরআন অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে আমরা হাজারো শিক্ষার্থীকে কোরআনের পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি— এটাই আমাদের সাফল্য। আমরা চাই, দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীর হৃদয়ে কোরআনের আলো পৌঁছে যাক।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই আয়োজন শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং কোরআনকে ভালোবাসার একটি আন্দোলন। ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন আরও বড় পরিসরে করা হবে ইনশাআল্লাহ।’ শাখা সভাপতি হেলাল উদ্দিন রুবেল সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি হাফেজ দেলোয়ার হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মানবাধিকার সম্পাদক সিফাতুল আলম ও ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক ডা. রেজোয়ান। সিফাতুল আলম বলেন, ‘শিক্ষার সঙ্গে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের সমন্বয় ছাড়া একটি জাতি টিকে থাকতে পারে না। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা শুধু জ্ঞান নয়, কোরআনের নীতি অনুসারে জীবন গড়ুক। ছাত্রশিবির সেই পথেই কাজ করে যাচ্ছে।’ ডা. রেজোয়ান বলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সবসময়ই শিক্ষার্থীদের কল্যাণ ও মানসিক বিকাশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কোরআন অলিম্পিয়াড তার একটি বাস্তব উদাহরণ। আমরা চাই, আমাদের শিক্ষার্থীরা কোরআনের আলোয় আলোকিত হয়ে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুক। ভবিষ্যতেও এমন উদ্যোগ আরও ব্যাপক পরিসরে আয়োজন করা হবে।’ এবারের কোরআন অলিম্পিয়াডে মোট তিন হাজার ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করে, যা একটি নতুন মাইলফলক। দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতিযোগীরা অংশ নেয় এবং চূড়ান্ত পর্বে প্রতিটি গ্রুপ থেকে ৩০ জন করে মোট ৬০ জন বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া সকল অংশগ্রহণকারীদের জন্য ছিল সম্মাননাপত্র।

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সব পক্ষের প্রতিনিধিত্ব নেই: এনসিপি
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করা এবং বহুল আলোচিত ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুতের লক্ষ্যে মঙ্গলবার (১৭ জুন) থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোকে কোন পদ্ধতিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ডাকছে, তা সুস্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম। এ দিন রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বিরতিতে এনসিপির পক্ষ থেকে এ কথা বলেন তিনি। এনসিপির এই নেতা বলেন, ঐকমত্য কমিশন যাদের আহ্বান করেছে, দেশের শতভাগ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব তারা করতে পারছে না। যদি এসব রাজনৈতিক দল জন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আসতে পারতো, তাহলে গণ–অভ্যুত্থানের আগে ৫৪ দল মিলে যে আন্দোলন করেছিল, সেটা ফলপ্রসূ হতো। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে তিন ধরনের অংশীজন ছিল উল্লেখ করে আরিফুল ইসলাম বলেন, সব রাজনৈতিক দল মিলে একটি স্টেকহোল্ডার, জনতা আরেকটি স্টেকহোল্ডার এবং সব শিক্ষার্থী মিলে আরেকটি স্টেকহোল্ডার ছিলেন। কিন্তু আলোচনায় শুধু রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিয়েছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু কোনো রাজনৈতিক দলের চেষ্টায় হয়নি উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, এখানে সব পেশাজীবী এবং জনতার অংশগ্রহণ ছিল, যাদের আসলে কোনো প্রতিনিধি নেই। আরিফুল ইসলাম বলেন, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিভিন্ন দলকে কোনো একটি বড় দলের সুপারিশে ডাকা হচ্ছে কি না, সেটা নিয়ে তার দল জাতীয় নাগরিক পার্টির মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। তিনি বলেন, শুধু একটি দলের বক্তব্যের প্রতি এসব দলের হ্যাঁ অথবা না–বোধক সমর্থন থাকে। যখনই বিপরীত কোনো মন্তব্য আসে, তখন সেখানে হট্টগোলের চেষ্টা করা হয়। জাতীয় সংসদে নারী আসন নির্ধারণের বিষয়ে এনসিপির মতামত তুলে ধরে আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা চাই, নারীদের আসন ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হোক। তবে পদ্ধতি এবং সংখ্যা নিয়ে আলোচনা চলমান আছে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে এনসিপির অবস্থান তুলে ধরে এনসিপির এই নেতা বলেন, আমরা ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পক্ষে ছিলাম। তবে ঐকমত্যের স্বার্থে অর্থবিল ও আস্থা ভোট বাদে অন্য বিষয়ে দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়া যাবে বলে মত দিয়েছি আমরা।

সংস্কারের মধ্য দিয়ে নতুন গন্তব্যে পৌঁছাতে চায় বিএনপি : সালাহউদ্দিন আহমেদ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ আজ বলেছেন, সংস্কার করার মধ্য দিয়ে নতুন গন্তব্যে পৌঁছাতে চায় বিএনপি। আজ রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমীতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা পর এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, "আমরা চাই সংস্কারের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের নতুন গন্তব্যে পৌঁছাই, এবং আমাদের সেই শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করি। আলোচনার মাধ্যমে অন্ততপক্ষে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সকলে মিলে দাঁড়াতে চাই, যেন সংস্কারের বিষয়গুলো সমাপ্ত করতে পারি। এখন পর্যন্ত যতটুকু আলোচনা হয়েছে তার ভিত্তিতে বিএনপি সন্তুষ্ট কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি সহাস্যে জানান, "সন্তুষ্ট হবো কি হবো না-সেটা আলোচনা শেষ হলে জানানো হবে। আমরা চাই জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হোক এবং আমরা সবাই একটা জায়গায় আসি। জুলাইয়ের মধ্যে একটা জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হতে পারে।" আজকের আলোচ্য বিষয় কি ছিল তা জানতে চাইলে তিনি জানান, বিগত দিনের আলোচনার ধারাবাহিকতায় আজকে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুসারে আমাদের একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৭০ অনুচ্ছেদে সবাই দুইটা বিষয় একমত হয়েছে। তা হল আস্থা ভোট ও অর্থবিল-এ দুটি বিষয় বাদে ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে দলের বিপক্ষেও ভোট দিতে পারবেন। কিন্তু আমাদের আরেকটা অবস্থান আছে, আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল তার সাথে সংবিধান সংশোধনী বিলের বিষয়টি যুক্ত করেছেন এবং আমরাও করেছি। লিখিত প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছিল জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় (যুদ্ধ পরিস্থিতির মত কোন বিষয় থাকলে) সেক্ষেত্রেও সংসদ সদস্যগণ স্বাধীন থাকবেন না। তিনি জানান, সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আস্থা ভোট ও অর্থ বিল এর বিষয়টি জাতীয় সনদে উল্লেখ থাকবে, সবাই স্বাক্ষর করতে পারবেন। তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটির বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসা গেছে। পাবলিক একাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, এস্টিমেশন কমিটি ও পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটি- এ চারটি কমিটি সহ অন্যান্য কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতির পদ আসনের সংখ্যানুপাতিক ভিত্তিতে বিরোধী দলের সদস্যরা পাবেন। এ বিষয়ে মোটামুটি সবাই একমত হয়েছেন। আজকের আলোচ্য সূচি অনুযায়ী নারী আসন নিয়ে আলোচনার সার সংক্ষেপ প্রশ্নে তিনি জানান, এ বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনা হচ্ছে। তবে, ১০০টি নারী আসন সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে মোটামুটি সবাই অনুরূপ মতামত দিয়েছেন। তবে এর নির্বাচন পদ্ধতি কি হবে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করা এবং বহুল আলোচিত ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুতের লক্ষ্যে আজ থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা। সকাল এগারোটা চল্লিশ মিনিটে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এ আলোচনার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। আলোচনায় কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুব মিয়া, মো. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। এছাড়াও, বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ জাসদের পক্ষ থেকে ডা. মুশতাক হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তবে, আমন্ত্রণ পেলেও বৈঠকে উপস্থিত হননি জামায়াতে ইসলামির কোনো প্রতিনিধি। এর আগে, এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানায়, আজকের আলোচনা সভার আলোচ্য সূচিতে রয়েছে- সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন, আইনসভায় নারী প্রতিনিধিত্ব, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও প্রধান বিচারপতির নিয়োগ প্রক্রিয়া। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ১৭, ১৮ ও ১৯ জুন এই তিনদিন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। ১৮ ও ১৯ জুনের আলোচ্য সূচি পরে জানানো হবে।

ভাইরাল স্ক্রিনশট ও কনভারসেশন আমার না: সারোয়ার তুষার
নিজ দলের এক নারী নেত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁসের জেরে নৈতিক স্খলনের অভিযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারকে দলীয় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পাঁচদিনের মধ্যে তাকে অভিযোগ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলেছে দল৷ তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সারোয়ার তুষার দাবি করেছেন, তিনি কোনো অপরাধ করেননি। তার নামে ভুয়া স্ক্রিনশট ও কনভারসেশন ভাইরাল করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) নিজের ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ পোস্টে এ দাবি করেন তিনি। সেখানে নিজেকে শুধরে নিতে প্রস্তুত আছেন বলেও জানান এ এনসিপি নেতা। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেছেন,আমার নামে ভুয়া স্ক্রিনশট ও কনভার্সেশন ভাইরাল করা হয়েছে। স্ক্রিনশটের ওই কনভার্সেশনগুলো আমার না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দল স্বপ্রণোদিত হয়ে আমার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, আমি লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেব। মঙ্গলবার (১৭ জুন) নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। সারোয়ার তুষারের পোস্টটি নিচে দেওয়া হলো- ‘আমি ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে না। মানুষ হিসেবে আমার আরও ডেভেলপ করার স্কোপ আছে। যদি কোনো ভুল করি, অবশ্যই আপনারা আমাকে তা জানাবেন, আমি শুধরে নিতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমি কোনো অপরাধ করি নাই। এ ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল ও ব্যাশিং আমি ডিজার্ভ করি না। কোনো মানুষই করেন না। এই স্মিয়ার ক্যাম্পেইন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার দলের কেন্দ্রীয় একজন যুগ্ম আহ্বায়ক নারী সহকর্মীকে যেভাবে অপমান করা হচ্ছে, তার সঙ্গে আমার ছবি জুড়ে দিয়ে, জঘন্য কুৎসিত কথাবার্তা লিখে, ভিডিও বানিয়ে আমার আর তার নামে প্রচার করা হচ্ছে। যারা এই কুৎসিত কাজগুলো করছেন, দয়া করে করবেন না। রাজনৈতিক বিরোধিতা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে রাখার আহ্বান জানাই। আমার দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের নারী সহকর্মীরা এর আগেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুৎসা ও হ্যারাজমেন্টের শিকার হয়েছেন। এখন আমার সঙ্গে তাদের জড়িয়ে এই নোংরামিগুলো করবেন না। তারা সম্মানিত ও সম্ভ্রান্ত নারী। রাজনীতির বাইরেও তাদের ব্যক্তিগত জীবন আছে৷ তাদের জীবন বিষিয়ে তুলবেন না। আমার চরিত্রহনন করতে গিয়ে তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবেন না। এটা আমার অনুরোধ। তারা কোনো দোষ করেননি। আমি ভুলের ঊর্ধ্বে না। কিন্তু আমার তিন মাস আগের ব্যক্তিগত কথোপকথন কাটছাঁট করে পরিপ্রেক্ষিহীনভাবে অনলাইনে ছেড়ে দিয়ে আমাকে অপদস্থ করার মধ্যে কোনো গৌরব নাই। এর আগেও আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ডিপার্টমেন্টের কালচারাল প্রোগ্রামের অভিনয়ের ছবিকে বিকৃত করে আমার বিরুদ্ধে স্মিয়ার ক্যাম্পেইন চালানো হয়েছে। আমি আমার জবান স্রেফ আমার রাজনৈতিক বিরোধীদের রাজনৈতিক সমালোচনায় খরচ করি। ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্রহনন ও কুৎসা রটনা করি না। একিলিস ও হেক্টরের যুদ্ধে একিলিস হেকটরকে বধ করেন ঠিকই; কিন্তু একজন বীর যোদ্ধার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে কুণ্ঠা করেন না। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চব্বিশের ৭ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত আমি লাগাতারভাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে অংশ নিয়েছি। ৫ আগস্টের পর আমি বিএনপির ব্যাপারে বেশ সমালোচনামুখর হয়েছি আমার রাজনৈতিক অবস্থানের জায়গা থেকে৷ সমালোচনা ও ভিন্নমত বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা। সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালের অভিজ্ঞতা বীভৎস। কারণ সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল কিছু শুনতে চায় না; তার কাছে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত থাকে। আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু ও মিত্ররা আমার ওপর ভরসা করেন। আমার প্রতি তাদের প্রত্যাশাও অনেক। আমার কোনো সাময়িক বিচ্যুতির কারণে তারা বিব্রত হয়ে থাকলে তাদের প্রতি আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। আমি জানি আমার জড়ানোর মাত্রা কতটুকু, আর কতটুকু আমি অর্গানাইজড ভার্চুয়াল মবের শিকার। আমার নামে ভুয়া স্ক্রিনশট ও কনভারসেশন ভাইরাল করা হয়েছে। ওই কনভারসেশনগুলো আমার না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দল স্বপ্রণোদিত হয়ে আমার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, আমি লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেবো। আমি কাউকে কোনো ধরনের হুমকি-ধমকি দেই নাই। দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতেই আমি নাই। এ ব্যাপারে আমার নামে ফেসবুকে যা প্রচার করা হচ্ছে তা সর্বৈব মিথ্যা। আমি এমনকি আমার এই পোস্টেও সংশ্লিষ্ট অপরপক্ষের পরিচয় প্রকাশ করছি না। যা যা বলার আছে, তা আমি দলের কাছেই লিখিতভাবে বলবো। সোশ্যাল মিডিয়ার সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, আমার দলের কেন্দ্রীয় কোনো নারী বা দলের বাইরের অন্য কোনো নারীকে ঘিরে কুৎসা রটনা করবেন না। ভবিষ্যতে আমি আরও পরিশীলিত হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। আমাকে যারা সমালোচনা ও বিরোধিতা করেন, তাদের প্রতিও আমার আহ্বান থাকবে আপনারা রাজনৈতিক বিরোধিতাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও চরিত্রহননে পর্যবসিত করবেন না। বাংলাদেশপন্থার জয় হোক।’ এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সারোয়ার তুষারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার কথা জানায় এনসিপি৷ দলের পক্ষ থেকে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত বিজ্ঞপ্তিটি গণমাধ্যমে পাঠান৷ কারণ দর্শানোর নোটিশে এনসিপি বলেছে, আপনার বিরুদ্ধে একটি নৈতিক স্খলনের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে৷ ওই বিষয়ে আপনার সুনির্দিষ্ট অবস্থান ও ব্যাখ্যা দলের আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব মো. আখতার হোসেন জানতে চেয়েছেন৷ এমন অবস্থায় উত্থাপিত নৈতিক স্খলনজনিত অভিযোগে আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার লিখিত ব্যাখ্যা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে দলের রাজনৈতিক পর্ষদ এবং এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি বরাবর পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো। বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার আগপর্যন্ত সারোয়ার তুষারকে এনসিপির সব সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে দলের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের যৌথ নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়ার কথাও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে৷ গতকাল সোমবার সারোয়ার তুষারের একটি ফোনালাপ ফাঁস করেন প্রবাসী সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর। ফোনালাপে এনসিপির এক নারী নেত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিতে শোনা যায় সারোয়ার তুষারকে। এরপরই এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ করেন, এনসিপি নেতা সারোয়ার তুষার নিজ দলের নারী নেত্রীকে হয়রানি করেছেন৷

জাতীয় স্বার্থে বিএনপি ঐকমত্যকে গুরুত্ব দেবে: আমীর খসরু
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে বিএনপি জাতীয় স্বার্থে সবসময়ই ঐকমত্যকে গুরুত্ব দেবে। দেশের যে কোনো সংকটে বিএনপি সবাইকে নিয়েই কাজ করবে।’ আজ রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্ডো ডায়াস ফোরেসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে আয়োজিত সাংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আমীর খসরু বলেন, দেশে নির্বাচিত সরকার এলে ব্রাজিল সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কৃষি খাতে তারা কাজ করতে আগ্রহী। ব্রাজিল পৃথিবীর শীর্ষ কৃষি প্রধান দেশ। বাংলাদেশেরও বেশিরভাগ মানুষ এই পেশার সঙ্গে জড়িত। আগামীতে দেশের কৃষি খাত কিভাবে আরো সমৃদ্ধ করা যায় সে ব্যাপারে সহায়তা দেবে দেশটি। বাংলাদেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রেও ব্রাজিল সহায়তা করতে চায় এমনটা জানিয়ে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করবে ব্রাজিল। আপনারা জানেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফুটবলের দেশ বলতে ব্রাজিল কে বোঝায়। তারা যখন আমাদের ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করতে চায় সেটি নিঃসন্দেহে আনন্দের। ফুটবলের পাশাপাশি বাস্কেটবলের উন্নয়নেও তারা কাজ করবে। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেয়ারপার্সনের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিশেষ সহযোগী উপদেষ্টা কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ।

নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে জনগণ শঙ্কিত: নূর
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেছেন, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে জনগণ শঙ্কিত। কারণ, ৫ আগস্টের পরও পরিস্থিতি অনেকটা আগের মতোই রয়েছে। আমাদের মতো লোককে যেখানে জিম্মি হতে হয়, সেখানে নির্বাচন কেমন হতে পারে— তা কিছুটা আঁচ করা যায়। তাই আগে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা জরুরি। মঙ্গলবার (১৭জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় দিনের সংলাপের মধ্যাহ্ন বিরতিতে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। পটুয়াখালীতে নিজের নির্বাচনি এলাকায় হামলার বিষয়ে তিনি জানান, দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন। বিগত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অথচ গণঅভ্যুত্থানের পর তাদের মতো নেতাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হতে হয়, যা উদ্বেগের। লন্ডনে বৈঠকে কী হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কিছু বলা হয়নি। এটি সরকারের বিষয়। তিনি জানান, সংলাপে বেশিরভাগ দল অর্থবিল ও আস্থা ভোট ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বিরোধী দলকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়েও একমত হয়েছে। এছাড়া সংরক্ষিত নারী আসন ১০০ টিতে উন্নীত করার বিষয়েও একমত হয়েছে গণঅধিকার পরিষদ, বলে জানান তিনি।

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ‘বয়কট’ করলো জামায়াত
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ বয়কট করেছে জামায়াতে ইসলামী। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতিতে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি ঘোষণার প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। মঙ্গলবার (১৭ জুন) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের মুলতবি অধিবেশনে দলটির নেতারা যোগ দিচ্ছেন না বলে জানা গেছে। আজ বেলা ১১টার পরে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ শুরু হলেও জামায়াতের কোনো প্রতিনিধিদল যোগ দেয়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে দলটির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল এবং এনসিপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে যোগ দিয়েছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ফোনটি রিসিভ করেন। দলের নেতারা সংলাপে আসবেন কি না- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি ওনার সঙ্গে কথা বলে আপনাকে জানাচ্ছি। পরে তিনি বলেন, জামায়াত সংলাপে যোগ দিলে গণমাধ্যমকে জানানো হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র বলছে, আজকের বৈঠকে জামায়াত থাকবে না, বিষয়টি দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলছে, প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে হওয়া বৈঠকের যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে তাদের ‘ইগনোর’ করা হয়েছে বলে দাবি করছে দলটি। প্রতিবাদস্বরূপ তারা আজকের বৈঠকে যোগ দেবে না। কমিশনের পক্ষ থেকে দুই ঘণ্টা পরে হলেও তাদের যোগ দিতে অনুরোধ করা হয় বলে জানা গেছে। জামায়াতের একটি সূত্র বলছে, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠককে তারা সাধুবাদ জানিয়েছে। কিন্তু যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার মাধ্যমে তাদের ইগনোর করা হয়েছে, যা দৃষ্টিকটু। নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় দেশে এসে ঘোষণা করলে ভালো হতো বলে মনে করে তারা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ঈদের আগের (৩ জুন) বৈঠকে তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ। সেদিন সকালে দলের সংবাদ সম্মেলন থাকায় দুপুরের বিরতির পরে যোগ দিয়েছিলেন নেতারা। তবে সকালে তাদের প্রতিনিধি ছিলেন। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘সংলাপের বিষয়ে আমাদের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানেন। আপনি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’ তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তুষারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
নৈতিক স্খলনের অভিযোগ ওঠায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন পার্টির শীর্ষ নেতারা। মঙ্গলবার যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দিন সিফাতের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নোটিশ দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, নৈতিক স্খলনের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় এ বিষয়ে আপনার সুনির্দিষ্ট অবস্থান ও ব্যাখ্যা আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব মো. আখতার হোসেন জানতে চেয়েছেন। এমতাবস্থায় উত্থাপিত নৈতিক স্খলনজনিত অভিযোগের কারণে আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার লিখিত ব্যাখ্যা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে ‘রাজনৈতিক পর্ষদ’ এবং এই বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি বরাবর পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার আগপর্যন্ত আপনাকে দলের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের যৌথ নির্দেশনা মোতাবেক এতদ্দ্বারা নির্দেশনা দেওয়া হলো।

সাংবাদিকদের বাকস্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করবে জামায়াত
সংবাদপত্র ও সংবাদকর্মীদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করে যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। সোমবার (১৬ জুন) ‘সংবাদপত্রের কালো দিবস’ উপলক্ষে এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সরকার বাকশাল গঠন করে একদলীয় শাসন চাপিয়ে দেয় এবং এর ধারাবাহিকতায় ১৬ জুন দেশে মাত্র চারটি সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র রেখে বাকি সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে হাজারো সাংবাদিক ও সংবাদকর্মী বেকার হয়ে পড়েন এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহার-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন। এ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতা হরণের এক ‘কালো দিন’ হিসেবে চিহ্নিত।’ আওয়ামী লীগের শাসনামলে গণমাধ্যমের ওপর দমননীতি প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি বলেন, ‘২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই শেখ হাসিনার সরকার ‘দৈনিক আমার দেশ’, ‘চ্যানেল ওয়ান’, ‘দিগন্ত টিভি’, ‘সিএসবি টিভি’ ও ‘ইসলামিক টিভিসহ’ একাধিক সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেয়। ফলে বহু সংবাদকর্মী বেকার হয়ে পড়েন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতেই ২০১৮ সালে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামের এক নিবর্তনমূলক কালাকানুন প্রণয়ন করে। এরপর ২০২৩ সালে এর নাম পরিবর্তন করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ করা হলেও এর মূল স্বরূপ অপরিবর্তিত ছিল। এই আইনের মাধ্যমে বহু সাংবাদিক ও মুক্তমনা মানুষকে জেলে পাঠানো হয় এবং হয়রানির শিকার হতে হয়।’ তিনি দাবি করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কালো আইনের ৯টি ধারা রেখে বাকিগুলো বাতিল করেছে এবং বন্ধ করে দেওয়া কিছু সংবাদমাধ্যম পুনরায় চালুর অনুমতিও দিয়েছে। বিবৃতিতে অধ্যাপক পরওয়ার বলেন, ‘আধুনিক বিশ্বে সংবাদপত্র রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, গণতন্ত্র রক্ষা এবং সত্য প্রকাশে সংবাদকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ভবিষ্যতে জনগণ যদি জামায়াতকে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়, তবে দলটি বাকস্বাধীনতা রক্ষা এবং সংবাদপত্র ও সংবাদকর্মীদের মর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।’

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে: তারেক রহমান
সংবাদপত্রের কালো দিবস ছিল আজ। সোমবার এ উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বাণীতে বলেছেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বহুদলীয় গণতন্ত্রের মৌলিক উপাদান। গণতন্ত্রের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব দিতে হলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। রোববার মধ্যরাতে পাঠানো এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো দিবস। এদিন তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী সব দল বাতিল করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করে। তাদের অনুগত চারটি সংবাদপত্র রেখে জাতিকে নির্বাক করে দিয়েছিল। বিভিন্ন সংবাদপত্রে কর্মরত অসংখ্য সংবাদকর্মী বেকার হয়ে পড়েন। তাদের রুজি-রোজগার ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।’ তিনি বলেন, ‘একাত্তরের যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। গণতন্ত্রে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হয় এবং এর মূল শর্ত হলো বাক, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ থাকায় রাষ্ট্র ও সমাজ জবাবদিহির আওতায় আসে এবং দেশের সরকার গঠনে নাগরিকের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলাকে স্তব্ধ করে দিয়ে একদলীয় বাকশাল কায়েম করে। পরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ দেশের কাঙ্ক্ষিত বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেন। বাকশাল সরকারের সব ধরনের অগণতান্ত্রিক কালাকানুন বাতিল করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন।’ তারেক রহমান উল্লেখ করেন, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ মূলত চিন্তা ও বিবেককে বন্দি রাখা। শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তার মেয়ে শেখ হাসিনাও একই পথ ধরে তাদের প্রকৃত দর্শন একদলীয় ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করেছিল নতুন আঙ্গিকে। নানা কালাকানুন প্রণয়ন করে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের ওপর অব্যাহত জুলুম চালিয়েছে তারা।’ সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের সই করা বাণীতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। সত্য উচ্চারণ করলেই নেমে আসত নির্যাতনের খড়্গ। বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীসহ সব পর্যায়ের মানুষকে সার্বক্ষণিক শঙ্কিত থাকতে হয়েছে। তারেক রহমান আরও বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো একের পর এক ড্রাকোনিয়ান (কঠোর) আইন প্রণয়ন করে সংবাদপত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ভয়াল দুর্গে বন্দি করা হয়েছিল। বিগত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর গণমাধ্যম কিছুটা স্বাধীনতা ভোগ করলেও এখনও ফ্যাসিবাদী শক্তির হাত থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়।’

সংস্কার, বিচার ও পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এখন গণমানুষের দাবি: পীর চরমোনাই
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেছেন, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, পতিত ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িতদের বিচার এবং পিআর পদ্ধতিতে আগামী নির্বাচন আয়োজন এই তিনটি বিষয় এখন দেশের গণমানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সোমবার(১৬ জুন) দুপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের জরুরি সভার উদ্বোধনী বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, মৌলিক সংস্কার, বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে আগামী নির্বাচন আয়োজনের দাবি আদায়ে আগামী ২৮ জুন ঢাকায় গণজোয়ার সৃষ্টি করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, আগামী ২৮ জুন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংস্কার, বিচার ও পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিকে সামনে রেখে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সেই মহাসমাবেশে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে ঐকমত্য রয়েছে এমন সব রাজনৈতিক দল একসঙ্গে একমঞ্চে যৌথ ঘোষণায় জাতিকে আশ্বস্ত করবে। ইসলামী আন্দোলন সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আমির বলেন, বাংলাদেশকে ভারতের কব্জা থেকে বের করতে এবং আগামীতেও ভারতের আধিপত্য প্রতিরোধে এখনই বাংলাদেশপন্থি সব দল-মত ও পথের জনতাকে এক কাতারে আসতে হবে। তারই একটি প্রতিফলন হবে ২৮ জুন। ইসলামী আন্দোলন আমির দেশের সকল ধারার সবাইকে দলমত নির্বিশেষে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ২৮ জুন সবাই ঢাকায় আসুন। সংস্কার, বিচার ও পিআর পদ্ধতির নির্বাচন নিশ্চিত করে দেশকে ভবিতব্য স্বৈরতন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করতে আরেকটি গণজোয়ার তৈরি করি। ইসলামী আন্দোলনের জরুরি সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ, প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতেয়াজ আলম, সহকারী মহাসচিব কেএম আতিকুর রহমান, মাওলানা আহমাদ আব্দুল কাইয়ুম, মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাকী প্রমুখ।

ক্ষমতায় আসার আগেই যারা লুটপাট করছে তাদের বয়কট করুন: গোলাম পরওয়ার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, 'ক্ষমতায় আসার আগেই যারা লুটপাট, হিন্দুদের ভয়ভীতি, ঘের দখল, চাঁদাবাজি শুরু করেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে রাখুন এবং আগামী নির্বাচনে বয়কট করুন।' সোমবার (১৬ জুন) বিকালে ডুমুরিয়ার উলা মাদ্রাসা ময়দানে ঈদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামী ডুমুরিয়া উপজেলা শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভায় মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, 'ডুমুরিয়ার মানুষ একটা সময় সন্ত্রাসীদের ভয় ও আতঙ্কে ছিল। চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরাই তা নির্মুল করেছি। যারা ১৫ বছর ধরে জনগণের সম্পদ লুট করেছে, সাধারণ মানুষের সাথে জুলুম করেছে, নিরিহ ছাত্রদেরকে গুলি করে হত্যা করেছে সেই ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগকে জনগণ বিতাড়িত করেছে। বাংলার জনগণ আর তাদেরকে ক্ষমতায় বসতে দেবে না।' অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামী খুলনা জেলা শাখার আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন। বক্তব্য দেন জামায়াতের খুলনা জেলা শাখার সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, মুন্সি মঈনুল ইসলাম, ডুমুরিয়া উপজেলার নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, গাজী মো. সাইফুল ইসলাম, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, আব্দুল হান্নান, হিন্দু শাখার সভাপতি কৃষ্ণ নন্দি ও সেক্রেটারী অধ্যক্ষ দেবপ্রসাদ মন্ডল, মোসলেম উদ্দিন, স্বদেশ হালদার, বিএম আলমগীর, আবু তাহের, আ. হাকিম, আ. গণি, মাওলানা কামরুজ্জামান প্রমুখ।

মৌলিক সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিতের পর নির্বাচন: মাসুদ
একক কোনো দলের প্রতি আনুগত্যশীল না হয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে হবে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। সোমবার (১৬ জুন) গেণ্ডারিয়া-ওয়ারী জোনের থানা ও ওয়ার্ড দায়িত্বশীল ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গণতন্ত্রকামী সব দলের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব ছিল সংস্কার, গণহত্যার বিচার ও একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়া। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সর্বজন শ্রদ্ধেয়। সেই শ্রদ্ধা ও আস্থা থেকে জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে তিনি জাতির প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবেন। মাসুদ বলেন, একক কোনো গোষ্ঠী বা দলের প্রতি আনুগত্যশীল হলে, জাতির প্রত্যাশা বিনষ্ট হবে। দেশ আবারও পথ হারাবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের চেয়েও ভয়াবহ ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটতে পারে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের মুখের ভাষা ও চোখের ভাষা বুঝতে হবে। ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে তিনি উপস্থিত দায়িত্বশীলদের অতীতের চেয়ে আরও বেশি ত্যাগ ও কোরবানির জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে আরও বলেন, মহান আল্লাহ মানব জাতির জন্য কল্যাণকর একটি বিধান ঠিক করে দিয়েছেন আর তা হলো ইসলাম। তাই আমাদের জীবনে ইসলামের হুকুম ও বিধানগুলো পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হবে। ত্যাগের মহিমায় অনুপ্রাণিত হয়ে যেভাবে আমরা পশু কোরবানি করেছি, অনুরূপভাবে ইকামাতে দ্বীনের বিজয়ে আমাদের যেকোনো ত্যাগ কোরবানি করতে হবে। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগর সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা মীর আমিরুল ইসলাম, রুহুল আমিন, গোলাম আজম, কামরুল ইসলাম সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে: আমীর খসরু
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সেই পথেই দেশ অগ্রসর হবে। আজ সোমবার দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষ গত ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র উত্তরণ চান। এটিই ছিল আন্দোলনের মূল প্রত্যাশা। জাতির মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি তারা (বিএনপি) বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে উল্লেখ করেন বিএনপি এই নেতা। প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান ও বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আগেই বলেছেন। কারণ, ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। বিচার একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি সম্পূর্ণ বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, বিচার বিভাগ বিচার করবে এছাড়া বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরও প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে। সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দরকার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে তাঁরা সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন। জামায়াত ও এনসিপি’র অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, এখন বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রে সবারই মতামত দেওয়া-নেওয়ার সুযোগ আছে। তাই সবাই তার মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয় এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই তার নিজের মতামত দেবে। এর মধ্যে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে।’ বিএনপি এত দিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময় এবং এতটুকু সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগেই ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরও দীর্ঘ সময়। তবে যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। আমীর খসরু বলেন, আমি আগেও বলেছি যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়। তিনি আরো বলেন, ঐকমত্য থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং আমরা চেষ্টা করব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে। তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে নির্বাচনের নিরপেক্ষতার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা বার্তা আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন শুরু হবে, তখনই সরকার নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ধারণা হলো একটি নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং, নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা সরকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পেতে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন: ফখরুল
গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা পেতে হলে দ্রুত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার (১৬ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করেন তিনি। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন এক বিষাদঘন কালিমালিপ্ত দিন। এদিনে তৎকালীন একদলীয় বাকশাল সরকার নাৎসী কায়দায় তাদের অনুগত ৪টি সংবাদপত্র অনুমতি দিয়ে অন্যসব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে কর্মরত অসংখ্য সংবাদ কর্মীকে বেকার করে হতাশার অতল গহ্বরে ঠেলে দিয়েছিল। বাকশালের পথ ধরে ডামি আওয়ামী সরকার পুরোনো বাকশালের পুনরুত্থান ঘটিয়ে বিগত ১৫ বছর সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর দমন-পীড়ন অত্যুগ্র মাত্রায় নামিয়ে এনেছিল। নানা কালাকানুনের মাধ্যমে সংবাদপত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরা হয়েছিল। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল দিনকাল, আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামী টিভি, চ্যানেল-১ টিভিসহ অসংখ্য গণমাধ্যম। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সত্য প্রকাশে খুনের শিকার হয়েছেন অর্ধশতাধিক সাংবাদিক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা মামলায় গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হয়েছেন বহু সাংবাদিক, শিক্ষক, পেশাজীবী, এমনকি শিশু শিক্ষার্থীরাও। মন্ত্রী-এমপিদের এবং ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমালোচনা করলেই সাংবাদিকদের হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হতো। ৭৫-এর এই দিনের বিভীষিকা এখন ভিন্ন মাত্রায় আরও ভয়ংকর হিংস্ররূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল। কিন্তু বিগত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর মানুষ তাদের বাকস্বাধীনতা কিছুটা হলেও ফিরে পেয়েছে। এতে আরও বলা হয়, গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা পেতে হলে প্রয়োজন দ্রুত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বহুমত, পথ ও দলের বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে বারবার অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। বহুমাত্রিকতা বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শ। বারবার অবৈধ স্বৈরাচারী গোষ্ঠীর শক্ত শৃঙ্খল ভেঙ্গে গণতন্ত্রকে মুক্ত করেছে বিএনপি। যেমনটি করেছিলেন মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহু দলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক এবং আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন। বাতিল করেছিলেন বাকশালী আমলের সব কালাকানুন।

প্রধান উপদেষ্টা-তারেক রহমানের বৈঠককে ভিন্ন খাতে দেখার সুযোগ নেই: এ্যানি
প্রধান উপদেষ্টা বিদেশে গিয়েছেন, সেই সুযোগে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে এটাকে ভিন্ন খাতে দেখার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। সোমবার (১৬ জুন) ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৪ এর বিচারক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক ১২ বছর আগে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় করা বিস্ফোরক আইনের মামলায় এ্যানিসহ নয়জনকে খালাসের রায় দেন। রায় শুনে ঢাকার নিম্ন আদালতে পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির (সিআরইউ) কার্যালয়ে এ কথা বলেন শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। তিনি বলেন, অত্যাচার, মানসিক চাপ দিয়ে আমাদের মতো রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হয়েছে, এটার বাইরেও অনেক নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন। আমরা পালিয়ে বেরিয়েছি, বাসা-বাড়িতে থাকতে পারিনি। আমাদের এত অত্যাচার, হয়রানি করা হয়েছে। এগুলো ছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের পরিকল্পিত কাজ, যেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন, প্রতিবাদ করতে না পারি। তাদের দুর্নীতি, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারি। তবে আমরা মামলা, হামলার কাছে নত স্বীকার করিনি। আন্দোলনকে বেগবান করেছি। আন্দোলনকে বেগবান করতে গিয়ে বারবার গ্রেপ্তার ও নির্যাতিত হয়েছি। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। এ্যানি বলেন, ৫ আগস্টের পর আমরা আশা করেছিলাম, আমাদের আন্দোলনের ফলস্বরূপ এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে একটি কমিশন হবে। সারাদেশের মিথ্যা, সাজানো মামলাগুলো খুব দ্রুত নিষ্পত্তি হবে এবং শেষ হবে। এখন পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে আমার মামলাগুলি যেহেতু প্রত্যাহার হয়নি, অনেকের মামলাও প্রত্যাহার হয়নি। এটা একটি কষ্টের জায়গা। আশা করবো, এ সরকারের কাছে প্রত্যাশার জায়গা থেকে, সারাদেশে অনেক নেতাকর্মী আছেন। এরা শুধু বিএনপি নয়, এরা অ্যান্টি আওয়ামী লীগ। মুভমেন্টে ছিলেন। এরা ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে লড়াই ও সংগ্রাম করেছেন। এখনো অনেকে জেলে আছেন। দ্রুত এদের মুক্তির ব্যবস্থা করবেন। মামলা প্রত্যাহারের জন্য কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং আইন উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। বলেন, আমরা তো সবকিছু পারি না। আইনের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। ওই সীমাবদ্ধতা সরকারের কাছে। এ ছাত্রনেতা বলেন, স্বাধীন যে নির্বাচন ব্যবস্থা, যেটা অতীতে ছিলো না, সেটা খুব জরুরি প্রয়োজন। স্বাধীন বিচার বিভাগ যদি থাকে, তাহলে কোনো সরকার ইচ্ছে করলেই ফ্যাসিবাদ গড়ে তুলতে পারবে না। আর ফ্যাসিবাদ হলে স্বাধীন বিচার বিভাগও কিন্তু ধরাশায়ী হবে। তখন ফ্যাসিবাদী সরকার গড়ে উঠবে না। একটি জনগণের সরকার থাকবে। আমার বিশ্বাস দেশে নির্বাচন আবহ তৈরি হয়েছে। যে সুন্দর একটি বৈঠক হয়েছে, তা আমাদের মাঝে স্বস্তি এনে দিয়েছে। একটি উৎসবমুখর নির্বাচনের দিকে আমরা সবাই এগিয়ে যাই। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস যে কথাগুলো বলেছেন, যে আলোচনাগুলো বেরিয়ে এসেছে। দেশে আলোচনা হয়েছে, দেশের বাইরে আলোচনা হয়েছে। তারেক রহমান দেশে থাকলে, দেশেই আলোচনা হতো। একটা বড় দল, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দল হিসেবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে তো সবার আগেই কথা বলার দরকার ছিল। কিন্তু উনি (তারেক রহমান) কি কারণে, কোন প্রেক্ষাপটে দেশের বাইরে গেছেন, এটা তো অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে বুঝতে হবে। সুতরাং প্রধান উপদেষ্টা বিদেশে গিয়েছেন। সেই সুযোগে তারেক রহমানের সাথে একটা বৈঠক হয়েছে, এটাকে ভিন্ন খাতে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কারণ গণতন্ত্রের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে হবে। সবাই মিলে লড়েছি, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। সবাই মিলে একটা বৈঠক, আলাদা বৈঠক একই উদ্দেশ্য। সুতরাং এখানে দ্বিমত করার সুযোগ আছে বলে আমি দেখি না। সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সামনে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ আমাদের তৈরি করতে হবে। যেখান থেকে জাতি দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা 'জাতির মুক্তি'। এসময় কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মামুন খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, এ্যানির আইনজীবী মহি উদ্দিন চৌধুরী, আইনজীবী মো. তানজিম চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ্যানির সাথে খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন- আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশিদ হাবিব, ইসহাক সরকার, কাজী আবুল বাশার, নজরুল ইসলাম খান টিপু, এম এ সৈয়দ মন্টু, আ. সাত্তার ও মো. সালাউদ্দিন। এ বিষয়ে এ্যানির আইনজীবী মহি উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায় থেকে আসামিদের খালাস দেওয়া হয়েছে। মামলা চলার মতো কোনো উপাদান না থাকায় এ পর্যায়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়। মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর ১৮ দলের ডাকা হরতাল চলাকালে রাজধানীর সূত্রাপুর থানাধীন এলাকায় একটি লেগুনায় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে দুষ্কৃতকারীরা। এতে ওই গাড়ির পাঁচজন দগ্ধ হন। ঘটনার পরদিন ১১ নভেম্বর সূত্রাপুর থানার তৎকালীন এসআই নয়ন ফারকুন বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকাসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ২১ মে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আনোয়ার আলম আজাদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরে এ মামলায় শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ নয়জনের বিচার শুরু হয়।

ইউনূস-তারেক বৈঠক সফল, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে : আমীর খসরু
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সোমবার (১৬ জুন) যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক দীর্ঘ সময়। বিচার চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার হবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে। সেটা হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি লাগবে না। আমীর খসরু বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে যাবে। মানুষ ২০ বছর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তরুণরা ভোট দিতে পারেনি। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের মাধ্যমে অচিরেই দেশের মানুষ ভোটের অধিকার ফিরে পাবে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।

শাপলা হতে পারে এনসিপির প্রতীক
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নিবন্ধন কার্যক্রমের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। এ নিয়ে কাজ করছে দলটির একাধিক টিম। জেলা-উপজেলা কমিটি গঠন, কার্যালয় স্থাপন, গঠনতন্ত্র প্রণয়ন, ভোটার তালিকাসহ গুছিয়ে নেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সব প্রস্তুতি। তবে সবার মনোযোগ এনসিপির দলীয় প্রতীকে, কী হতে যাচ্ছে এনসিপির প্রতীক। দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতীক হিসেবে ঘুরেফিরে পাঁচটি নামই আসছে আলোচনায়। যার মধ্যে অন্যতম শাপলা। বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলাকেই দলীয় প্রতীক হিসেবে পছন্দের শীর্ষে রেখেছে এনসিপি। এ ছাড়া সাদা ঘোড়া, চা পাতা, বই এবং মুষ্টিবদ্ধ হাত তাদের আলোচনায় রয়েছে। এনসিপির নেতারা বলেছেন, দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য যেসব প্রতীক আছে, সেগুলো খুব বেশি প্রাসঙ্গিক নয়। তাই বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের সংরক্ষণে থাকা কোনো প্রতীকে তাদের আগ্রহ নেই। শাপলাকে প্রাধান্য দিয়ে এ ৫টি প্রতীকের জন্য আবেদন করতে পারেন তারা। আজ সোমবার এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিবন্ধন সংক্রান্ত একটি সভা রয়েছে বলে জানা গেছে। সেখানেই চূড়ান্ত হতে পারে প্রতীকসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত। নিবন্ধন কার্যক্রমের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা কালবেলাকে বলেন, ‘শাপলাসহ কয়েকটি প্রতীক আমাদের আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। আমরা এর মধ্য থেকেই প্রতীক চাইব। এখন যেসব প্রতীক রয়েছে সেগুলো খুব বেশি রিলেভ্যান্ট (প্রাসঙ্গিক) না। গণঅভ্যুত্থান এবং দেশকে রিপ্রেজেন্ট (প্রতিনিধিত্ব) করে এমন কোনো প্রতীক থাকা উচিত বলে আমরা মনে করি।’ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নিজ দলের প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নিতে হলে ইসির নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০টি। এজন্য দলগুলোর বিপরীতে ৫০টি প্রতীক ছাড়াও ৬৯টি প্রতীক তফসিলভুক্ত আছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এ সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০টি প্রতীক করা হবে বলে জানিয়েছে ইসি। দলগুলোর প্রতীক নির্ধারণ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। তবে নতুন দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের অধিকাংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে নতুন প্রতীক সংযুক্ত করার নিয়ম রয়েছে। এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। কমিটি গঠনসহ প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা দেব।’ নিবন্ধন কার্যক্রমের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন জানান, প্রতীক নিয়ে তারা এখনো আলোচনা-পর্যালোচনা করছেন। তিনি বলেন, ‘কয়েকটি প্রতীক আমাদের আলোচনায় রয়েছে। নিবন্ধন বিষয়ে আগামীকাল (আজ) আমাদের সভা রয়েছে। সেখানেই এসব বিষয় চূড়ান্ত হতে পারে।’ এদিকে রাজধানী ঢাকায় দলটির বর্তমান অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে রয়েছে বাংলামটরের রূপায়ণ ট্রেড সেন্টার। তবে নতুন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জন্য খোঁজা হচ্ছে স্থান। অবশ্য নিবন্ধন আবেদনের জন্য সময় বেশি না থাকায় এবং স্থায়ী কার্যালয় দেখানোর বাধ্যবাধকতা থাকায় বর্তমান কার্যালয়কেই স্থায়ী কার্যালয় হিসেবে দেখাতে পারে দলটি। এ ছাড়া কাটাবন, শাহবাগ, সেগুনবাগিচা কিংবা বাংলামটরের আশপাশে হতে পারে নতুন কেন্দ্রীয় কার্যালয়। নির্বাচন কমিশন গত ১০ মার্চ গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করে। আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ২০ এপ্রিল। পরে এনসিপিসহ কয়েকটি দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই মাস সময় বাড়ায় নির্বাচন কমিশন। ইসিতে নিবন্ধনের জন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস থাকা, অনূর্ধ্ব এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় জেলা অফিস এবং ন্যূনতম ১০০টি উপজেলা বা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন থানায় অফিস (যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত হতে হবে) থাকতে হয়। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় নথিপত্র হিসেবে দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনী ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো এবং পতাকার ছবি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি বা সমমানের কমিটির সব সদস্যের পদবিসহ নামের তালিকা, দলের নামে রক্ষিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও ব্যাংকের নাম এবং ওই অ্যাকাউন্টের সর্বশেষ হিসাব ও দলের তহবিলের উৎসের বিবরণ ইসিতে জমা দিতে হবে। এনসিপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সারা দেশে দলের ১২০টি উপজেলা এবং ৩০টি জেলা সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। চলতি জুনের শুরুতে ঢাকার দুই মহানগরীতে কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে অঞ্চলভিত্তিক কমিটি দেওয়া শুরু করে এনসিপি। এরপর ঈদের আগে ধাপে ধাপে পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া, দেবীগঞ্জ, বোদা, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া, নড়াইলের লোহাগড়া, কালিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর, সরাইল, বাগেরহাটের কচুয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। জেলার মধ্যে টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ঝালকাঠি, মেহেরপুর, বরিশাল, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, লালমনিরহাট, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা ও মুন্সীগঞ্জে কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর ঈদের পর বান্দরবান, বগুড়া, জামালপুর ও টাঙ্গাইলের আরও কয়েকটি উপজেলায় কমিটি দেয় নতুন দলটি। রংপুরের পীরগাছাসহ বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকটি দলীয় কার্যালয়ও স্থাপন করা হয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র, ইশতেহারও প্রস্তুত। কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপন, ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ এবং প্রতীক নির্ধারণের কাজ চলছে। এসব কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা করছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের নিবন্ধন কার্যক্রমের প্রয়োজনীয় শর্তাবলি পূরণের জন্য এরই মধ্যে ১২০টি উপজেলা সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়েছে এবং ৩০টি জেলা সমন্বয় কমিটি হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করব। দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে ভোটার লিস্ট প্রস্তুতকরণ সেটিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।’

লন্ডনে ‘একান্ত বৈঠকের’ আলোচনা জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠক দেশের রাজনীতিতে কিছু সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এই বৈঠক রাজনীতিতে এক ধরনের অস্বস্তিও তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম চরমোনাই পীর। তিনি বলেন, বিশেষত দুই পক্ষের প্রতিনিধিসহ বৈঠকের পরে দুই নেতার একান্ত বৈঠক রাজনীতিতে কিছু প্রশ্ন তৈরি করেছে। আগামী রাজনীতির স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য এবং দলগুলোর অস্বস্তি দূর করতে একান্ত বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে। রোববার পুরানা পল্টনের অফিসে দলের সিনিয়র দায়িত্বশীলদের সঙ্গে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাকালে চরমোনাই পির এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি বহুদলীয় রাজনীতি। বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই দেশের বহুসংখ্যক রাজনৈতিক সংগঠন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অংশ নিয়েছে। আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণে সবাইকে সমান গুরুত্ব ও মর্যাদা প্রদান করা নৈতিক কর্তব্য। লন্ডন বৈঠকের চরিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অবমূল্যায়নের ধারণা জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন আয়োজনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নানা রকম দাবি থাকা সত্ত্বেও সব উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টা ঈদের আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একটা সংক্ষিপ্ত সময়সীমা ঘোষণা করেছিলেন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে যে সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে- তা একটি একান্ত বৈঠকের পরে পুনর্বিবেচনা করার যৌথ ঘোষণা দেওয়া রাজনীতিতে অস্বস্তি তৈরি করেছে। সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্মাণের স্বার্থেই এই অস্বস্তি দূর করা উচিত। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার ও পতিত ফ্যাসিবাদের বিচার নিশ্চিত করার দাবি পুনর্ব্যক্ত করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। নির্বাচনের ডামাডোলে সংস্কার ও বিচার যাতে আড়াল না হয়, সেদিকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে চরমোনাই পির বলেন, নির্বাচন নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এখন দেশকে ভবিতব্য সব স্বৈরতন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করতে সাংবিধানিক সংস্কারে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, এনসিসি (জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল) গঠন, সংসদীয় কমিটির প্রধান বিরোধী দল থেকে দেওয়াসহ স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধে যেসব সতর্কতামূলক আইনি প্রতিবন্ধকতা প্রস্তাব করা হয়েছে- তাকে বিএনপি সমর্থন করবে বলে আশা করছি। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান।