দ্রুত নির্বাচনের আহ্বান খালেদা জিয়ার

রাষ্ট্র মেরামতের ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে দলটির বর্ধিত সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন। খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশ আজ সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। আপনাদের এবং ছাত্রদের সমন্বিত আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট শাসক বিদায় নিয়েছে। একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা, রাষ্ট্র মেরামতের ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা।’ তিনি আরো বলন, ‘দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন, সম্প্রতি জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিবাদের ভয়াবহ দমননীতির কারণে গণহত্যায় যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা। আমি চিকিৎসার কারণে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও সবসময় আপনাদের পাশেই আছি।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর গণতন্ত্রের জন্য, আমার মুক্তির জন্য আপনারা যে নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন এবং অসংখ্য নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছেন, গুম-নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন, সোয়া লাখ মামলায় জড়িয়ে ন্যায়বিচারের জন্য এখনো আদালতের বারান্দায় দৌড়াচ্ছেন, আপনাদের গণতন্ত্রের জন্য এই ত্যাগ শুধু দল নয়, জাতি চিরকাল স্মরণ রাখবে।’

সংস্কার-স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে: তারেক রহমান

সংস্কার কিংবা স্থানীয় নির্বাচন ইস্যু নিয়ে জনগণের সামনে এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমি দেশের কৃষক শ্রমিক জনতা আলেম ওলামা পীর মাশায়েখ তথা সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই। যারা বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্র বানিয়ে রাখতে চেয়েছিল তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনো থেমে নেই।’ বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত বিএনপির বর্ধিত সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। ‘সুদৃঢ় ঐক্যই রুখে দিতে পারে সকল ষড়যন্ত্র’ স্লোগানে সাত বছর পর শুরু হয়েছে বিএনপির বর্ধিত সভা। তিনি আরো বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটি হবে সারাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া যা সরাসরি গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী। গণহত্যাকারী টাকাপাচারকারী দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না।’ তারেক রহমান আরও বলেন, ‘বিএনপি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনরায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণহত্যাকারী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান- সারাদেশে গণহত্যাকারীদের দোসর মাফিয়াচক্রকে পুনর্বাসনের স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকারের আগামী দিনের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিএনপির কাছে সংস্কারের ধারণা নতুন কিছু নয়। সরকারে কিংবা বিরোধী দলে বিএনপি যখন যে অবস্থানেই দায়িত্ব পালন করেছে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সব সময়েই রাষ্ট্র সরকার ও রাজনীতিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছে এবং করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’ ‘তবে ষড়যন্ত্রের পথ ধরে পলাতক স্বৈরাচার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পর সংস্কারের সব পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশকে চিরতরে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে গত দেড় দশকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিলো। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নাজুক করে তুলেছিল। টাকাপাচার আর লুটপাট চালিয়ে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর করে দিয়েছিলো। অকার্যকর করে দেয়া হয়েছিল দেশের সব সাংবিধানিক এবং বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন করে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে তুলেছিল। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সরকার ও রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে মাদার অফ ডেমোক্রেসি খালেদা জিয়া ২০১৭ সালে ভিশন ২০৩০ দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে বিএনপি ২৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরে গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ঘোষণা করা হয় ৩১ দফা কর্মসূচি। এই ৩১ দফা নিয়ে বর্তমানে বিএনপির উদ্যোগে সারাদেশে জনগণের সঙ্গে সংলাপ চলছে। রাষ্ট্র-সরকার-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল মেরামতের জন্য দফা ৩১টি হলেও এর চূড়ান্ত লক্ষ্য একটি। সেটি হলো একটি নিরাপদ গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ। ঠিক তেমনি উদ্দেশ্যও একটি। সেটি হলো রাষ্ট্র ও সমাজে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। এটি নিশ্চিত করা না গেলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-গণতন্ত্র-নিরাপত্তা-সমৃদ্ধি কোনোটিই টেকসই হবে না। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তার জন্য জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনোই বিকল্প নেই। রাষ্ট্র এবং সমাজে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পূর্ব শর্ত হলো প্রতিটি নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বাস্তবায়ন। এবং এ লক্ষ্যেই একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বারবার জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানায়।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি আজ এবং আগামী দিনের রাজনীতিতে বিএনপির এই ৩১ দফা হচ্ছে, একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সনদ। তবে এই ৩১ দফাই শেষ কথা নয়। সময়ের প্রয়োজনে রাষ্ট্র, সরকার, রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের সংস্কারের জন্য এই ৩১ দফাতেও সংযোজন-বিযোজনের সুযোগ রয়েছে। এমনকি বিএনপির ৩১ দফার সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রস্তাবনার খুব বেশি ইস্যুতে মৌলিক বিরোধ নেই।’ তারেক রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করলেও কোনো কোনো উপদেষ্টার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য মন্তব্য স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য হতাশার কারণ হয়ে উঠছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সব রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সমর্থন থাকলেও সরকার এখনো তাদের কর্মপরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারছে না।’ ‘সারাদেশে খুন, হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি বেড়েই চলেছে। বাজার সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সরকার যেখানে দেশের বাজার পরিস্থিতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারছে না সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের নামে কেন দেশের পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করতে চাইছে এটি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়।’ তারেক রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে, স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটি হবে সারাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া যা সরাসরি গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী। গণহত্যাকারী টাকাপাচারকারী দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। বিএনপি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনরায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণহত্যাকারী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান, সারা দেশে গণহত্যাকারীদের দোসর মাফিয়াচক্রকে পুনর্বাসনের স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আগামী দিনের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘মাফিয়া প্রধান হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর এ পর্যন্ত ১৬-১৭টি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি সব নতুন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে স্বাগত জানায়। তবে নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রহণ কিংবা বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে জনগণ। সুতরাং, প্রতিটি দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সবার আগে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত রাখতে হবে। দেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষতাই হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় পুঁজি। কিন্তু সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতোমধ্যেই জনমনে সন্দেহ সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আরো সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানাই।’ বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ দিন থেকে আমি আপনাদের কাছ থেকে শারীরিকভাবে দূরে থাকলেও যোগাযোগ এবং কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে আমি কখনোই আপনাদের কাছ থেকে দূরত্ব অনুভব করিনি। আমার মনে হয়, এখানে উপস্থিত এমন একজনকেও পাওয়া যাবে না যার সঙ্গে আমার অন্তত একবার হলেও কথা হয়নি। কিংবা টেক্সট মেসেজ আদান প্রদান হয়নি। তবে আজ এখানে সবাইকে একত্রে পেয়েছি। আপনাদের অভিনন্দন। আমি বিশ্বাস করি যে দলে আপনাদের মতো ত্যাগী এবং সাহসী নেতাকর্মী রয়েছে সেই দলকে কোনো স্বৈরাচারই দমিয়ে রাখতে পারে না।’ তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই যে দেশে মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান তথা দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবেন। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশ ভূখণ্ডে বসবাসকারী আমাদের সবার একটিই পরিচয় আমরা বাংলাদেশি। পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট। বিএনপি মনে করে বর্তমান বিশ্বে স্থায়ী শত্রু মিত্র বলে কিছু নেই। বরং একটি দেশের সঙ্গে অপর দেশের সম্পর্ক হবে পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা, প্রয়োজন এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে। অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের নীতি ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। অর্থাৎ নিজ দেশ এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষাই হতে হবে প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার।’ ‘এই মুহূর্তে বিএনপিই দেশের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল’ উল্লেখ করে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপির কাছে জনগণের যেমন আশা ভরসা প্রত্যাশা রয়েছে। একইসঙ্গে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরাও থেমে নেই। সুতরাং, চক্রান্তকারীদের মোকাবেলা করে কিভাবে দলকে আরো শক্তিশালী এবং সুসংহত করা যায় আমি আশা করি, আপনাদের আলোচনায় সেই সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা থাকবে।’ তারেক রহমান বলেন, ‘সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ের কৃষক-শ্রমিক দরিদ্র-মেহনতি-স্বল্প আয় কিংবা মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত-পাশাপাশি ছাত্র ছাত্রী তরুণ তরুণী তথা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বার্থ রক্ষা এবং জীবন মানোন্নয়নে আপনাদের নিজ নিজ এলাকাভিত্তিক কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায় আশা করি আপনাদের বক্তব্যে সেসব বিষয়ও থাকবে। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমের পক্ষে বিপক্ষে অবশ্যই আপনারা সুনির্দিষ্ট বক্তব্য তুলে ধরবেন। তবে একটি বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই সেটি হলো বিএনপি একটি বৃহৎ পরিবার। এই পরিবারের নানাবিষয়ে আমাদের মতের অমিল থাকতেই পারে। সুতরাং বক্তব্য দেয়ার সময় ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিরোধকে এড়িয়ে যাওয়া বাঞ্চনীয় বলেই আমি মনে করি।’ ‘আমরা সবাই আমাদের ঐক্যের শক্তির সক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত। ঐক্যই আমাদেরকে বারবার বিজয় আর সফলতা এনে দিয়েছে। সুতরাং আমাদের খেয়াল রাখা জরুরি আলোচনা সমালোচনা যেন নিজেদের মধ্যকার ঐক্য বিনষ্টকারী কিংবা দলের ক্ষতির কারণ না হয়। আরো একটি বিষয়ে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। নেতানেত্রীদের সম্পর্কে আপনারা বক্তব্য দেয়ার সময় দয়া করে প্রশংসাসূচক শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্কতা, বুদ্ধিমত্তা এবং পরিমিতি বোধের পরিচয় দেবেন।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত দেড় দশকে সারাদেশে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের ভিন্ন দল এবং মতের নেতাকর্মীদের অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। কেবল বিএনপিরই ৬০ লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দেড় লাখ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়েছে।’ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলী, কমিশনার চৌধুরী আলমের মতো অনেক নেতাকর্মীর আজ পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি। শুধু বিএনপি করার অপরাধে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থককে গুম খুন অপহরণ করা হয়েছে। তবু বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ দল ছেড়ে যাননি। স্বৈরাচারের সঙ্গে করেননি আপস।আচার-আচরণে হতে হবে আরো সতর্ক ও সংযত তারেক রহমান বলেন, ‘আপনাদের এই সৎসাহস এবং সততার কারণে বিএনপি আজ শুধু একটি সাধারণ রাজনৈতিক দলই নয়। দেশের গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ বিএনপিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড হিসেবে বিশ্বাস করে। এটি একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় প্রাপ্তি।’ ‘এ কারণেই দলের সর্বস্তরের প্রতিটি নেতাকর্মীকে আরো বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। আচার-আচরণে হতে হবে আরো সতর্ক ও সংযত। তবে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোটি কোটি নেতাকর্মী সমর্থকদের এই বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলের কোনো কোনো নেতাকর্মী হয়তো নিজের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। তাই, আমি আপনাদের আবারো বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একটি বার্তা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।’

নির্বাচন নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাচ্ছি না: মির্জা ফখরুল

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল প্রাঙ্গণে বিএনপির বর্ধিত সভার স্বাগত বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের মানুষ অনেক আশা-ভরসা নিয়ে আছেন ৫ আগস্ট পরিবর্তনের পরে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ থেকে পলায়নের পরে দেশের অবস্থার পরিবর্তন হবে। অতি দ্রুত দেশের জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে, তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন এবং তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবেন। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে দেখছি, সে লক্ষ্যে আমরা সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাচ্ছি না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বিএনপিকে গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য কী পরিমাণ ত্যাগের মধ্যদিয়ে সংগ্রাম করতে হয়েছে।’ বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এরই মধ্যে দেশের অর্থনীতির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে শিক্ষাঙ্গনগুলো বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ থাকছে না।’ তিনি অভিযোগ করেন, অবিভক্ত বাংলায় যেসব বরেণ্য, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, বিশেষ করে যাদের পূর্ব বাংলার ভূখণ্ডে জন্ম হয়েছিল, তাদের নামগুলো বাদ দিয়ে এখন কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ ফখরুল বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়েছি, শেখ হাসিনাকে তাড়িয়েছি। দেশের জনগণের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা; আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের যে স্বপ্ন একটি আধুনিক-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ রূপান্তরিত করার, আমরা এখন সেই অপেক্ষায় আছি। সেই গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করার জন্য, বাধাগ্রস্ত করার জন্য একটি মহল বিভিন্নভাবে চক্রান্ত করার চেষ্টা করছে। বাইরে থেকেও চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তর থেকেও কিছু কিছু গোষ্ঠী ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’ বিএনপির বর্ধিত সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছেন দলটির চেয়াপারসন খালেদা জিয়া।

একাধিক গণমাধ্যমে ‘নয়াদিল্লিতে শেখ হাসিনার মৃত্যুর’ দাবি! জানুন সত্যতা

সম্প্রতি, ‘পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে আজ ইন্তেকাল করেছেন’ ও ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নয়াদিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন’ শীর্ষক শিরোনামে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশন ও চ্যানেল ২৪-এর ডিজাইন সম্বলিত দুইটি পৃথক পৃথক ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়াও একই দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমসের ফটোকার্ড দাবিতেও একটি ছবি আলোচিত ফটোকার্ডগুলোর সঙ্গে প্রচার করা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকেও শেখ হাসিনার মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা হয়েছে- এমন দাবিতে একটি স্ক্রিনশটও ফেসবুকে ঘুরছে। স্ক্রিনশটটিতে দেখা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পেজ থেকে শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করে ‘শোক সংবাদ, দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের প্রিয় নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি স্বৈরাচার পরবর্তী বাংলাদেশের উন্নয়নে অমূল্য অবদান রেখেছেন, তিনি আর আমাদের মাঝে আর নেই। দলের বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে এই শোক সংবাদ নিশ্চিত হয়েছে।’ শীর্ষক পোস্ট করা হয়েছে। তবে শেখ হাসিনার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে মৃত্যুর দাবিটি সত্যি না। এ বিষয়ে বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকিং বা তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। তাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশীয় ও ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যমের নকল ফটোকার্ড তৈরি ও আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের নামে ভুয়া স্ক্রিনশট তৈরি করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডগুলোতে উল্লিখিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে শেখ হাসিনার মৃত্যুর দাবিটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরবর্তী আলোচিত ফটোকার্ডগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার। ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নয়াদিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে চ্যানেল ২৪-এর লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে। পরবর্তী অনুসন্ধানে চ্যানেল ২৪-এর লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নয়াদিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন’ শীর্ষক শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, চ্যানেল ২৪-এর ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে চ্যানেল ২৪-এর ফেসবুক পেজে ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত আরেকটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নয়াদিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন’ শীর্ষক শিরোনামে চ্যানেল ২৪-এর নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটিকে ভুয়া বলে শনাক্ত করা হয়। এছাড়াও পাঠকদের বিভ্রান্তি এড়াতে চ্যানেল ২৪-এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও অনলাইনের সাথে যুক্ত থাকার আহ্বানও জানানো হয় ফটোকার্ডটির মাধ্যমে। রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে আজ ইন্তেকাল করেছেন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে যমুনা টেলিভিশনের লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫। পরবর্তী অনুসন্ধানে যমুনা টেলিভিশনের লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে ‘পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে আজ ইন্তেকাল করেছেন’ শীর্ষক শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, যমুনা টেলিভিশনের ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি, যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলোর সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত ফন্টের ডিজাইনেরও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। আলোচিত পোস্টগুলিতে ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমস-এর ওয়েবসাইটের ঠিকানা সম্বলিত ‘ফর্মার বাংলাদেশী প্রাইম মিন্টিার পাসেস অ্যাওয়ে ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক ইংরেজি শিরোনামের আরেকটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়। তবে ওই ফটোকার্ডে এটি প্রকাশের কোনো তারিখ উল্লেখ নেই। ওয়েবসাইটের সূত্র ধরে হিন্দুস্থান টাইমসের ফেসবুক পেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে হিন্দুস্থান টাইমসের ফটোকার্ডের ডিজাইনের পার্থক্য রয়েছে। দুটি ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন। এছাড়াও হিন্দুস্থান টাইমসের ওয়েবসাইটেও এমন দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তী আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজের পোস্টটির বিষয়ে অনুসন্ধানে তাদের ভেরিফাইড পেজটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার এমন কোনো পোস্টের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। এছাড়াও আলোচিত পোস্টটিতে আওয়ামী লীগের পেজে একটি প্রোফাইল পিকচার দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে পেজটিতে কোনো প্রোফাইল পিকচার দেওয়া নেই। সুতরাং, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে মারা গিয়েছেন দাবিতে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশন, চ্যানেল ২৪ কিংবা হিন্দুস্থান টাইমসের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো ভুয়া ও বানোয়াট।

দেশ আজ সংকটময় সময় অতিক্রম করছে: খালেদা জিয়া

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য থাকলেও জনগণের পাশে আছি। আমার অবর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আপনাদের সকলকে সঙ্গে নিয়ে নিরন্তর কাজ করে দলকে সুসংহত করেছেন।’ বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির বর্ধিত সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন নিহত সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন খালেদা জিয়া। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আপনারা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে আরো উজ্জীবিত হয়ে আগামী নির্বাচনে সাফল্যের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে আমাদের এতদিনকার সংগ্রাম, আত্মত্যাগ বিফলে যায়। আমাদের সব সময় প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই উক্তি মনে রাখা দরকার- ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘দীর্ঘ ৬ বছর পর আপনার আবারও ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশে একত্রিত হতে পেরেছেন। আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করছি। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদের আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন এবং সম্প্রতি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শাসকদের নির্মম দমন-নীপড়নের কারণে গণহত্যায় শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আহতদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা।’ চিকিৎসার কারণে যুক্তরাজ্যে থাকলে আমি সব সময় আপনাদের সঙ্গে আছি উল্লেখ করে খালেদ জিয়া বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর যারা গণতন্ত্রের জন্য ও আমার মুক্তির জন্য আমাদের অসংখ্য সহকর্মী প্রাণ দিয়েছেন, জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং প্রায় সোয়া লক্ষ্য মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়ে এখনও আদালতের বারান্দায় ন্যায় বিচারের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আপনাদের এ ত্যাগ শুধু দল নয়, জাতি চিরকাল স্মরণে রাখবে।’ দেশ আজ এক সংকটময় সময় অতিক্রম করছে বলে উল্লেখ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের ও ছাত্রদের সমন্বিত আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট শাসকেরা বিদায় নিয়েছে। একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্র মেরামতের ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা।’ খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ আজ এক ইতিবাচক গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংকীর্ণতা ভুলে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের কাজ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখনও ফ্যাসিস্টদের দোসররা ও বাংলাদেশের শত্রুরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। ইস্পাত-কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিতে হবে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সকলকে এক যোগে কাজ করতে হবে।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি যুক্তরাজ্য থেকে অসুস্থ অবস্থায় আপনাদের আহ্বান জানাতে চাই- আসুন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে পূর্বের ন্যায় আন্দোলন, সংগ্রাম ও রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদানে আরও ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহতভাবে গড়ে তুলি।’ দেশবাসীর উদ্দেশ্য খালেদা জিয়া বলেন,‘ আসুন প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ নয়, পারস্পরিক ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে আমরা সকলে মিলে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি বাসযোগ্য, উন্নত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করি।’

মাফিয়াচক্রকে পুনর্বাসনের স্থানীয় নির্বাচন থেকে সরে আসুন: তারেক রহমান

সংস্কার কিংবা স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে জনগণের সামনে এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান- সারাদেশে গণহত্যাকারীদের দোসর মাফিয়াচক্রকে পুনর্বাসনের স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকারের আগামী দিনের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।’ বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত বিএনপির বর্ধিত সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। ‘সুদৃঢ় ঐক্যই রুখে দিতে পারে সব ষড়যন্ত্র’ স্লোগানে সাত বছর পর শুরু হয়েছে বিএনপির বর্ধিত সভা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটি হবে সারাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া যা সরাসরি গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী। গণহত্যাকারী টাকাপাচারকারী দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনরায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণহত্যাকারী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে।’

তরুণদের সম্ভাব্য নতুন দল ‘এসিপি’, গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকছেন নারীরাও

নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আশা জাগিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে ছাত্র-জনতার নতুন রাজনৈতিক দলের। সেই দলের সম্ভাব্য নাম ‘অল সিটিজেনস পার্টি (এসিপি)’ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। জানা গেছে, শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জাতীয় সংসদের সামনে বড় জমায়েতের মাধ্যমে বহুল কাঙ্ক্ষিত এ রাজনৈতিক শক্তির আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তার জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশকেও জানানো হয়েছে। এদিকে, দল গঠনকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে চূড়ান্ত করা হয়েছে দলের নাম ও কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুই পদ ছাড়া বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা আসছেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির বর্ধিত সভা শুরু, প্রধান অতিথি খালেদা জিয়া

‘সুদৃঢ় ঐক্যই রুখে দিতে পারে সকল ষড়যন্ত্র’-স্লোগানে বিএনপির বর্ধিত সভা শুরু হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সভায় অংশ নিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূলের সাড়ে ৩ হাজার নেতাকর্মী। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল সংলগ্ন মাঠে সকাল ১১টা ৫ মিনিটে পবিত্র কোরআন তেওয়ালাতের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চু্যয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভার উদ্বোধন ও সমাপনী পর্বে বক্তব্য রাখবেন তিনি। বর্ধিত সভায় উপস্থিত আছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সকল কর্মকর্তা ও সদস্য, সকল মহানগর, জেলা, থানা-উপজেলা-পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা রয়েছেন। এর বাইরেও বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সদস্য সচিবরা উপস্থিত আছেন। দীর্ঘ সময় পর দলের এ আয়োজনে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা দলে দলে যোগ দিয়েছেন। দলের কাছে নিজেদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেবেন। সেগুলো আমলে নিয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণ করবে বিএনপি। বর্ধিত সভা সফল করতে ছয়টি উপ-কমিটি করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ব্যবস্থাপনা কমিটি (আহ্বায়ক-শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি), অভ্যর্থনা কমিটি (আহ্বায়ক হাবিব উন-নবী খান সোহেল), আপ্যায়ন কমিটি (আহ্বায়ক এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত), শৃঙ্খলা কমিটি (আহ্বায়ক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু), মিডিয়া কমিটি (আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল) এবং চিকিৎসা সেবা কমিটি (আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম)। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ‘লো মেরিডিয়ানে’ বর্ধিত কমিটির সভা হয় যেখানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বক্তব্য দেন। এর চার দিন পর ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় কারাবরণ করেন তিনি।

বিএনপির বর্ধিত সভা আজ, প্রাধান্য পাবে যেসব বিষয়

নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনার মধ্যে অর্ধযুগেরও বেশি সময় পর বর্ধিত সভা করছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল প্রাঙ্গণে এ সভা শুরু হবে। সভায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মহানগর ও জেলার সব থানা, উপজেলা, পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবসহ প্রায় চার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেবেন। এর বাইরে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া এবং মনোনয়নের জন্য প্রাথমিক চিঠি পাওয়া নেতারাও সভায় উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভায় তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য শুনবেন এবং নতুন বার্তা দেবেন। দলের পক্ষ থেকে এটিকে ‘বিশেষ বর্ধিত সভা’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। তবে সভার সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা কী হতে পারে, সে সম্পর্কে খোদ দলের নেতাকর্মীরাই এখনো অন্ধকারে। গুঞ্জন রয়েছে, বর্ধিত সভা থেকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সাংগঠনিক এবং আগামী নির্বাচনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এ সভার মধ্য দিয়ে বিএনপি নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু করবে বলেও মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা। জানা গেছে, বিএনপি এখন অনেকটাই নির্বাচনমুখী। দলটির সব মনোযোগ এখন নির্বাচন ঘিরে। দলটি মনে করছে, অতিপ্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপেও রাখতে চায় তারা। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দলের নেতাকর্মীদের বিশেষ বর্ধিত সভার সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে নেতাকর্মীদের অনুমান, চলমান পরিস্থিতিতে বিএনপির সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল হয়তো না-ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে দলের মহাসচিব, সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদলের সিদ্ধান্ত আসতে পারে বিশেষ বর্ধিত সভা থেকে। এছাড়া বর্ধিত সভা থেকে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২২০-২২৫টি আসনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সবুজ সংকেত দেওয়া হতে পারে। বাকি আসনগুলো বরাদ্দ রাখা হতে পারে জোটে বা যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মিত্র দলগুলোর জন্য। সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ নতুন মুখ এবং ৮০ শতাংশ পুরোনো মুখ সবুজ সংকেত পেতে পারেন। এক্ষেত্রে ৫ শতাংশ আমলা, ৩০ শতাংশ ব্যবসায়ী ও বাকি ৬৫ শতাংশ থাকতে পারেন রাজনীতিবিদ। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বর্ধিত সভায় বহু সংখ্যক দলীয় নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণের অদম্য ইচ্ছার প্রকাশ দেখে দল অভিভূত। তবে বর্ধিত সভায় পূর্ব নজির অনুযায়ী দলের তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত নির্ধারিত নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সে কারণে নির্ধারিত নেতৃবৃন্দ ছাড়া অন্য কাউকে আমন্ত্রণ জানানো সম্ভব হচ্ছে না।’ দলের নেতাকর্মীদের জানানো যাচ্ছে যে, দলের যে সব নেতৃবৃন্দ, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীরা সভাস্থলে উপস্থিত থাকতে পারবেন না তাদের জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলের আশেপাশে অহেতুক ভিড় করে যানবাহনসহ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন না করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

চার পদ রেখে জাতীয় নাগরিক কমিটির সব সেল বিলুপ্ত ঘোষণা

রাজনৈতিক দল গঠনকে কেন্দ্র করে জাতীয় নাগরিক কমিটি (জানাক) নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক ছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির অন্যসব অর্গানোগ্রাম, নির্বাহী কমিটি, সেল ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১১তম সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক ছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির অবশিষ্ট অর্গানোগ্রাম, নির্বাহী কমিটি, সেল ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আসন্ন রাজনৈতিক দলে যোগদানকারী সব কেন্দ্রীয় সদস্যের সদস্যপদ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি দল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত বহাল থাকবে। রাজনৈতিক দলে অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সদস্যের জানাক সদস্যপদ বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। দলে যোগ দিচ্ছেন না এমন সদস্যদের সদস্যপদ বহাল থাকবে। এতে আরও বলা হয়, আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী ১৫ দিন অনানুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের উদ্যোগে জাতীয় নাগরিক কমিটির তিন জনের আনুষ্ঠানিক ফোরাম পরবর্তী অর্গানোগ্রাম নির্ধারণ করবেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন দল আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে জানাকের রাজনৈতিক দল গঠনের ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পন্ন হয়েছে। দল গঠনের পর থেকে জানাক সিভিল-পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থেকে যাবে। আর কোনো দল গঠনের উদ্যোগ নেবে না। এছাড়া, আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জনগণের স্বার্থে জাতীয় নাগরিক কমিটি সর্বদা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাবে।

ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে: মির্জা ফখরুল

ডিসেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলার ইতি প্রকাশনে এক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, আজকে আবার সবাই একমত হচ্ছে, বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি সে সংস্কৃতির প্রেক্ষিতে এমন একটা ব্যবস্থা থাকা উচিত যেন নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকে। আমরা সে দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে পথ কে আরও সহজ করে নিয়ে আসবে। সংস্কার জিয়াউর রহমান শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটি বদ্ধ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ছিলো বাকশাল। সেখান থেকে নিয়ে এসেছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্র, মুক্ত সংবাদপত্র। এটা এখন অনেকেই ভুলে গেছেন, এই তরুণ প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানেন না যে বাকশালের মধ্য দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো সকল সংবাদপত্র। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেটা মুক্ত করে দিয়েছিলো, মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, মৌলিক অধিকারগুলো ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।বিজ্ঞাপন মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তিনি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকরের বিধান নিয়ে এসেছিলেন, সংবিধানে সন্নিবেশিত করেছিলেন। ফ্যাসিবাদের সময় ইতিহাসকে বিকৃত করবার চক্রান্ত হয়েছিলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই ইতিহাস তারা পনেরো বছর ধরে বিকৃত করেছে। আনন্দের কথা, কেউ ইচ্ছে করলেই সঠিক ইতিহাসকে কেউ ভুলে যাওয়া যায় না, বিকৃত করা সম্ভব হয় না। আজকে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মুক্ত চিন্তার মধ্য দিয়েই সঠিক ইতিহাস আমরা জানতে পারি।

ছাত্রদের দল থেকে সরে দাঁড়ালেন জোনায়েদ ও রাফে

আগামী শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া ছাত্রদের নতুন দল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ ও যুগ্ম সদস্য সচিব রাফে সালমান রিফাত। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি )ফেসবুক পোস্টে এমনটাই জানিয়েছেন তারা। আলী আহসান জুনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাত বর্তমানে চীন সফরে রয়েছেন দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে। তাদের চীন সফর নিয়েও আপত্তি উঠে নাগরিক কমিটিতে। গত সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেয় সংগঠনটি। আলী জুনায়েদের সঙ্গে নাগরিক কমিটির নেতাদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে নতুন রাজনৈতিক দলের সদস্য সচিব পদ নিয়ে। তার অনুসারীরা তাকে এ পদে দাবি করলেও আরেকটি অংশ নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে চান। এ নিয়ে টানাপোড়েন চলে নাগরিক কমিটিতে। আলী আহসান জুনায়েদ তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি তরুণদের নেতৃত্বে যেই নতুন রাজনৈতিক দলটি আসছে, সেখানে আমি থাকছি না। সে কথা আমি আরও সপ্তাহখানেক আগেই জানিয়েছি দলের নেতাদেরকে। বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে ও জাতির নজর নতুন দলের ওপর নিবদ্ধ রাখতে নীরবতা বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু, চারপাশের গুঞ্জন থামছে না। তাই, স্পষ্ট করে রাখছি।’ জুনায়েদ লিখেছেন, আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারীদের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দল দেশের স্বার্থেই প্রয়োজন। নতুন এই রাজনৈতিক দলের প্রতি আমার দোয়া ও শুভকামনা রইল। জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সততা ও ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত না হোক এই দল। দুর্নীতির সকল সুযোগ বন্ধ করে নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হোক এই দলে। তিনি বলেন, ‘বারবার বলার পরও যদিও হয়নি, তবুও চাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার যথাযথ অনুসরণ ও ইনক্লুসিভনেস এই দলের বৈশিষ্ট হোক। দুঃখজনক বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার পরও ট্যাগিং ও ট্যাবুর রাজনীতি থেকে মুক্ত হয়ে নতুন ধারার রাজনীতি এই দলের মাধ্যমে শুরু হোক এই প্রত্যাশাই করি। আশা করি, অভ্যুত্থানের সময়ে আমাদের মধ্যে যেই ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা ও সহযোগিতার সম্পর্ক ছিল, নতুন রাজনৈতিক পথচলায়ও আমাদের পারস্পরিক এই সম্পর্ক ও শ্রদ্ধাবোধ অপরিবর্তিত থাকবে। নতুন দল, নাহিদ ইসলাম এবং নব নেতৃত্বের জন্য শুভ কামনা রইল।’ এদিকে জুনায়েদের ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করে রাফে সালমান রিফাত লিখেছেন, ২৮ তারিখে ঘোষিত হতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলে আমিও থাকছি না। তবে, আমার রাজনৈতিক পথচলা থেমে থাকবে না। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার যে জোয়ার তৈরি হয়েছিল তাতে শর্ট টার্মে খুব ভালো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা রাখি না আপাতত। কিন্তু, একই সাথে এটাও মনে রাখি যে, রাজনীতি একটা লম্বা রেইস। ধৈর্য নিয়ে লম্বা সময়ের জন্যই আমাদেরকে এই রেইসে টিকে থাকতে হবে। আমরা নতুন সেই বাংলাদেশের প্রত্যাশি, যেটা হবে সত্যিকার অর্থেই ডেমোক্রেটিক, ইনক্লুসিভ, বৈষম্যহীন এবং আধিপত্য মুক্ত। ঐক্যবদ্ধতা ও মধ্যমপন্থাই হবে আমাদের শক্তি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের জিহাদ চলবে। আঞ্চলিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও আমাদের লড়াই চলবে। বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য আমরা জান দিয়ে লড়ব। নতুন দলের জন্য দোয়া ও শুভ কামনা রইল।’

বিকালে নতুন ছাত্র সংগঠনের ঘোষণা দেবেন সাবেক সমন্বয়করা

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়করা নতুন ছাত্র সংগঠনের নাম ঘোষণা করবেন আজ বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ায়রি) বিকেল ৩টায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে নতুন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, নতুন ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে থাকতে পারেন সাবেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার ও সদস্য সচিব জাহিদ আহসান এবং মুখপাত্র হতে পারেন ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আশরেফা খাতুন। এ ছাড়া নতুন সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির আহ্বায়ক হতে পারেন সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, সদস্য সচিব হতে পারেন সাবেক সমন্বয়ক মহির আলম ও মুখপাত্র হিসেবে দেখা যেতে পাড়ে রাফিয়া রেহনুমা হৃদিকে। সাবেক সমন্বয়করা জানান, সংগঠনটির মূলনীতি হবে- ‘স্টুডেন্টস ফার্স্ট, বাংলাদেশ ফার্স্ট’। বিশেষ করে নেতা নির্বাচনে নিয়মিত ছাত্রদেরকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। ঢাবিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও মাদরাসায় অনলাইন-অফলাইন প্রচারণা চালানো হবে বলেও জানান তারা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানান, নতুন এই সংগঠনের সঙ্গে তাদের কোনো সংযোগ নেই। নতুন এই ছাত্র সংগঠনটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।

তারেক রহমানের নাম উচ্চারণ করতে হলে ওজু করবেন : বরকত উল্লাহ বুলু

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন, গত দুই-তিন দিন ধরে কিছু অর্বাচীন কিছু কথাবার্তা বলছে। তারা বলছে- শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাবা হলে ছেলেরাও কি নেতা হবে নাকি? আমি সেসব অর্বাচীন নাবালক বাচ্চাদের বলতে চাই- বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য পুত্র তারেক রহমান। বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসনের ছেলে। শহীদ জিয়ার উত্তরসূরি হচ্ছেন তারেক রহমান। তার নামটি উচ্চারণ করতে হলে অজু করবেন। আপনাদের মতো নাবালক উপদেষ্টারা-নেতারা এই ধরনের কথা বলে দেশকে বিভক্ত করবেন না। তারেক রহমান বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা। তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসবেন।মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।বরকত উল্লাহ বুলু আরও বলেন, 'তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছেন আড়াই বছর আগে। যদি কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয়, আপনাদের যদি কোনো উপদেশ থাকে তাহলে সংযোজন করবেন। তিনি বলেছেন বিএনপি যদি ২৮০ সিটও পায় বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করবে না। যারা আমাদের সাথে আন্দোলন সংগ্রামে ছিল সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব। তিনি বলেন, দেশে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নাই যেটা শেখ হাসিনা ধ্বংস করেন নাই। ২৭ লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে তার পরিবার লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছে। এই টাকা ফেরত আনতে হলে আবার একটি ঐতিহাসিকভাবে জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। যেমন করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করেছিলেন। একটি দুর্ভিক্ষের দেশ থেকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আত্মমর্যাদার দেশে পরিণত করেছিলেন।নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, আপনারা এমন কোনো কর্মকাণ্ড করবেন না, যাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। ১৭ বছর আপনারা অপেক্ষা করেছেন। বাবার জমি বেচে, মায়ের গয়না বেচে পালিয়ে ছিটিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। হঠাৎ করে আমাদের মধ্যে কিছু লোকের যেন কিছু ধন-দৌলত হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। আমি বিনয়ের সঙ্গে আপনাদেরকে বলতে চাই এমন কোনো কর্ম করবেন না যে কর্মের কারণে জিয়াউর রহমান যে দল গঠন করেছেন, বেগম খালেদা জিয়া যে দলের নেত্রী ছিলেন, তারেক রহমান নেতৃত্ব দিচ্ছেন। উনার গায়ে যেন কোনো কাদা না লাগে। এমন কোনো কর্ম করবেন না। যারাই এই কাজটি করবেন তাদের প্রাথমিক সদস্য পদেও থাকার কোনো অধিকার নেই।তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় আমি গিয়েছি। সেখানে একটি বিষয় লক্ষ্য করলাম আমাদের কিছু নেতা হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ প্রীতিতে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের টাকা আছে দলে নিয়ে আসার চেষ্টায় লিপ্ত। যদি কেউ আমাদের দলে আসতে চায় আসুক। তবে ৫ থেকে ৬ বছর পেছনের কাতারে বসে থাকুক। আর যারা আন্দোলন সংগ্রাম করে গত ১৭ বছর ছিল তারাই নেতা হবে। শিক্ষিত হোক আর অশিক্ষিত হোক অথবা অর্ধশিক্ষিত হোক, সেই নেতা হবে, অন্য কেউ নেতা হবে না।বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, বিগত ১৭ বছর শেখ হাসিনা আমাদের ওপর জুলুম করেছেন। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছেন। আমরা বাসায় থাকতে পারিনি। আমাদের ঠিকানা ছিল ফ্ল্যাটের বারান্দা। আমরা এভাবে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করেছি। আজকে শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই। শেখ হাসিনার অত্যাচারের কারণেই বিএনপি আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হয়েছে।কুমিল্লা মহানগর বিএনপির নবনির্বাচিত সভাপতি উবাতুল বারী আবুর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির বিএনপির কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোশতাক মিয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন, সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম প্রমুখ।

একাত্তরে শেখ মুজিব আর ২৪শে নেতাকর্মী নিয়ে পালিয়েছে হাসিনা

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেছেন, একাত্তরে পালিয়েছিল শেখ মুজিব, আর ২৪ সালে নেতাকর্মী নিয়ে পালিয়েছে শেখ হাসিনা। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ শতশত এমপি-মন্ত্রী পালিয়ে গেলেও বিদেশের মাটিতে বসে এখনো ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। দেশকে একটি কঠিন বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে তারা। যদিও এ ষড়যন্ত্রে কিছুই করতে পারবে না। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন দাবিতে এই জনসভার আয়োজন করা হয়। জনসভার আগে জেলার বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেসটুন নিয়ে নানা স্লোগান দিয়ে জনসভাস্থলে যোগ দেয়। হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের জনসভা স্থল কানায় কানায় ভরে যায়। নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানুষ তাদের রুখে দিয়েছে। আজকে দেশ গড়ার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ‘আগামী সরকার বিএনপিই গঠন করবে এবং সব সমস্যার সমাধান করবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব তারেক রহমান নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন। তার হাত ধরে সব ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে। তাই আগামীতে বিএনপি সরকার গঠন করবে। বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, তারেক রহমানের ৩১ দফা দাবির মধ্যেই সকল সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। তাই, সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনকে বিলম্বিত করবেন না। কারণ পার্লামেন্ট ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয়। আর জনগণকে ক্ষমতায় আনতেই বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরেই স্থানীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর এই নির্বাচনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহমাতুল্লাহ পলাশের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলুর সঞ্চালনায় জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন, বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব। হাবিব বলেন, যারা মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে মিথ্যা মামলায় দোষারোপ করে অন্যায়ভাবে মানুষকে সাজা দিয়েছে তারা মোনাফেক, কাফের। মৃত্যুর পরে এদের স্থান হবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। একটি সাজানো মামলায় আমাকে ৭০ বছরের জেল দেওয়া হয়েছিল। পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতের তরজমা করে তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালার বিচার পেয়েছি। আবু সাঈদ, আসিফসহ শতশত ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে ২৪ এর আন্দোলনে শতশত ছাত্র জনতা শহীদ হয়েছেন। তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা কোনোভাবেই বিফল হতে দেয়া যাবে না। জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী আলাউদ্দীন ও ডা. মো. শহিদুল আলম। এছাড়া জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী, সাবেক সদস্য সচিব আব্দুল আলিম, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক তারিকুল হাসানও বক্তব্য দেন।

জামায়াতকে নিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা বিএনপি নেতার

বগুড়ার শিবগঞ্জে নাগরিক ঐক্য ও বিএনপির মধ্যে সৃষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা বয়কট করেছে বিএনপি। এর সঙ্গে সায় দিয়ে জামায়াত নেতারাও সভা থেকে বের হয়ে যান। শিবগঞ্জ উপজেলা যুবদল সহসভাপতি রনি মিয়ার বাড়িতে ককটেল হামলার প্রতিবাদে ও হামলার সুষ্টু বিচারের দাবিতে সভা বয়কট করেন তারা। সেই সঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্নাকে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) নির্বাচনী এলাকায় ঢুকতে দেবেন না বলে ঘোষণা দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম। মঙ্গলবার শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা আহ্বান করা হয়। সেখানে বিএনপি নেতা মীর শাহে আলম, জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা শাহাদুতজামানসহ বিএনপি ও জামায়াতের নেতা এবং ১২ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় মীর শাহে আলম বলেন, মাহামুদুর রহমান মান্না একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একেকবার একেক দল করেন। তিনি ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের তাঁর দলে নিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠিত করছেন। মান্না বদলি করবেন এই ভয়ে ইউএনও এবং থানার ওসি রনির ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করছেন না। রনির বাড়িতে হামলার জন্য নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীদের দায়ী করে মীর শাহে আলম বলেন, হামলার ঘটনার উপযুক্ত বিচার না হওয়া পর্যন্ত মান্নাকে শিবগঞ্জে ঢুকতে দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে প্রশাসনকে বিএনপি ও জামায়াত কোন প্রকার সহায়তা করবে না, প্রশাসনের কোনো সভায় আর যোগও দেবে না। তিনি বলেন, নাগরিক ঐক্যের কোনো কর্মসূচি আর শিবগঞ্জে করতে দেওয়া হবে না। নাগরিক ঐক্যের যাকেই পাওয়া যাবে তাকেই ধরে থানায় সোপর্দ করা হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রনির ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। উপজেলা প্রশাসনের সভাগুলোতে এরপর থেকে বিএনপি ও জামায়াত ছাড়া অন্য দলের কাউকে আমন্ত্রণ না জানাতে ইউএনর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। মীর শাহে আলম বক্তব্য শেষ করেই সভায় উপস্থিত সকলকে নিয়ে সভা বয়কট করে বের হয়ে যান। এর আগে ২০ ফেব্রয়ারি রাতে শিবগঞ্জ উপজেলা চত্বরের শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার সময় উপজেলা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলামকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ ঘটনার জন্য নাগরিক ঐক্য বিএনপিকে দায়ী করে। এ ঘটনায় নাগরিক ঐক্য শিবগঞ্জ উপজেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সরকার বাদী হয়ে বিএনপি সভাপতি মীর শাহে আলমকে ১ নম্বর ও বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাবকে ২ নম্বর আসামি করে ৩০ জনের নামে একটি অভিযোগ করেন শিবগঞ্জ থানায়। অভিযোগটি এখনও এজাহার হিসেবে রেকর্ড করেনি শিবগঞ্জ থানা। এ ঘটনার জের ধরে সোমবার রাত ৮টার দিকে উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি রনি মিয়ার বাড়িতে ককটেল হামলা ও রনিসহ কয়েকজনকে মারধর করা হয়। এ ঘটনার জন্য বিএনপির তরফ থেকে নাগরিক ঐক্যকে দায়ী করা হয়। হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিএনপির পক্ষ থেকে সড়ক অবরোধ করে। এ ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।নাগরিক ঐক্যের জেলার অন্যতম সমন্বয়ক সাইদুর রহমান সাগর বলেন, বিএনপির লোকেরা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক শহীদুলের ওপর হামলা ও ছুরিকাঘাত করে। তারাই আবার এ ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নিজেদের কর্মীর বাড়িতে সাজানো হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা মামলা দিতে গেলে এখনও মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। বিএনপি নেতা মীর শাহে আলম বলেন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্নার হুকুমেই যুবদল নেতা রনির বাড়ি এবং তার ওপর হামলা হয়েছে। আর নাগরিক ঐক্যের শহীদুলের ওপর অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে তাদের দলের লোকেরাই হামলা করেছে। শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম বলেন, এখনও কোনো পক্ষ থেকেই মামলা করেনি। দুটি ঘটনাই তদন্ত করা হচ্ছে।

কার স্বার্থ রক্ষায় জাতীয় নির্বাচনে বিলম্বল: তারেক রহমান

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন দেরিতে হলে কাদের স্বার্থ রক্ষা করা হবে, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কুমিল্লা বিএনপি আয়োজিত কাউন্সিলে অংশ নিয়ে তিনি এমন প্রশ্ন করেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশে এই মুহূর্তে নির্বাচন যদি বিলম্বিত হয়, তাহলে কারা সুবিধাপ্রাপ্ত হবে? কাদের স্বার্থ উদ্ধার হবে? এটি আজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’ ‘বাংলাদেশে যদি আমরা গণতন্ত্রের ভিত্তি রচনা করতে পারি, গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত রাখতে পারি তাহলে এই দেশকে আর এই দেশের মানুষকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।’-যোগ করেন তারেক রহমান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানান, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি দেশে নির্বাচন চাইবে, নির্বাচনের জন্য তাগাদা দেবে এটাই স্বাভাবিক বিষয়। বিএনপির নির্বাচনের দাবিকে কিছু মানুষ ও সংগঠন কেন অস্বাভাবিক বলতে চাইছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি জানান, তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কি তা খুঁজে দেখতে হবে। জেলার টাউন হল মাঠে কাউন্সিলের আয়োজন করে কুমিল্লা মহানগর বিএনপি। কাউন্সিলে প্রথমবারের মতো সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন করা হয়।

গণঅধিকারের রাশেদের অবর্তমানে দায়িত্ব সামলাবেন হাসান আল মামুন

গণঅধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হলেন হাসান আল মামুন। গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানের চীন সফরের জন্য তাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে চীন সফরে যাচ্ছেন রাশেদ খান। তাই দলের উচ্চতর পরিষদের সিদ্ধান্তে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুনকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হলো।

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হতে দেব না: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশবাসী স্থানীয় সরকারের নির্বাচন মেনে নেবে না। বিএনপিও তা হতে দেবে না। যত দিন দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন বিএনপি রাজপথেই থাকবে।’ সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার ধামরাই পৌর শহরের যাত্রাবাড়ী মাঠে ঢাকা জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমাবেশে ফখরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রশ্নে বিএনপি কখনও আপস করেনি। বিএনপিকে ভাঙতে বারবার চেষ্টা করা হয়েছে; কিন্তু কেউ তা পারেনি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগ পালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে। তখন শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে জীবন বাঁচিয়ে ছিলেন। সেই আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা এবার পালিয়ে গিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করে দিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগ কর্মীদের নির্দেশনা দেন, ‘তোমরা মারো, কাটো, জ্বালিয়ে দাও।’ বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও গণবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল, খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার করে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেবেন। কিন্তু তা না করে সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। কিছু কিছু দল বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হতে হবে। কিন্তু তা আমরা হতে দেব না। আমরা এ সরকারকে ব্যর্থ হতে দিতে চাই না। সহযোগিতা করতে চাই। আমরা চাই, এই সরকারই যেন সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারে।’ ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) বেনজীর আহমেদ টিটু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান আজাদ, ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ইরফান আমান, সাবেক সাংসদ সালাহ উদ্দিন বাবু, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন।

ক্ষমতায় থেকে কাউকে কিংস পার্টি করতে দেওয়া হবে না: ফজলুর রহমান

ছাত্রদের নতুন দল গঠন প্রসঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান বলেছেন, ‘ক্ষেত তৈরি করলো বিএনপি, বীজ ফেললো বিএনপি, ফসল ফলাইলো বিএনপি আর আপনারা ধান কেটে দাবি করছেন আপনারাই সব করছেন। আপনারা (ছাত্ররা) দল করতে চান ভালো কথা, কিন্তু ক্ষমতায় থেকে কাউকে কিংস পার্টি করতে দেওয়া হবে না।’ সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি )বিকেলে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপির সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাবেশে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা আগে জাতীয় নির্বাচন চাই। কিন্তু তারা (জামায়াত) স্থানীয় নির্বাচন চান। কোনো দল স্থানীয় নির্বাচন আগে চাইতেই পারে। এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ইউনূস সাহেব, আপনি তো রেফারি। আপনার কি মনে হয় কোন নির্বাচন আগে হওয়া দরকার? আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করেছিলাম। কারণ সেই সরকার আমাদের একটি সুন্দর জাতীয় নির্বাচন দেবে, স্থানীয় নির্বাচন নয়।’ জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘যারা ২০ বছর বিএনপির ডানার মধ্যে ছিল, তারা এখন স্লোগান দেয় দুই সাপের এক বিষ নৌকা আর ধানের শীষ। আপনারা বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করতে পারবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ দিতে পারবেন কিন্তু নির্বাচনে ১০ শতাংশের বেশি ভোট পাবেন না।’ তিনি আরো বলেন, ‘এখন নির্বাচন হলে ধানের শীষ ৮০ শতাংশ সিটে পাস করবে। সঠিক সময়ে যেন নির্বাচন না হয় সেজন্য চক্রান্ত চলছে। এই চক্রান্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের রাজপথে থেকে প্রতিহত করতে হবে।’ সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত। সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম, ওবায়দুর রহমান চন্দন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী ঈশা।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ ও শঙ্কিত: ইসলামী আন্দোলন

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেছেন, ‘প্রকাশ্য দিবালোকে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ ও শঙ্কিত। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে যা মোটেও প্রত্যাশা ছিলো না। দেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর সমর্থন পেয়ে এ সরকার কেন অপরাধ দমন করতে পারছে না তা নিয়ে জনমনে নতুন করে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে।’সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে নগর কার্যালয়ে আয়োজিত নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। সভাপতির বক্তব্যে বৈঠকে ইমতিয়াজ আলম আরো বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা দেশ ছেড়ে পালালেও তাদের প্রেতাত্মারা প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীরা একেক সময় একেক পোশাকে এসে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এখন চুরি, ডাকাতি আর ধর্ষণের মত ভয়াবহ পোশাকে তাদের আবির্ভাব হয়েছে। এদেরকে কঠোরহস্তে দমন করতে হবে।’ বৈঠকে বক্তব্য দেন আলতাফ হোসাইন, আবদুল আউয়াল, কেএম শরীয়াতুল্লাহ, মাওলানা মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, মাওলানা নজরুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খোকন, মুফতি আবদুল আহাদ, মাওলানা নাজিমুদ্দীন, শফিকুল ইসলাম শাহিন।

জামায়াতের আ‌মিরের স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার কর্মসূ‌চি স্থগিত

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলা‌মকে মুক্তি না দিলে নিজের স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হওয়ার কর্মসূচি স্থগিত করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আ‌মির শফিকুর রহমান। একইসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সাম‌নে গণঅবস্থা‌নের কর্মসূ‌চিও স্থগিত ক‌রে‌ছে দলটি। কাল মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা থে‌কে আজহারুল ইসলা‌মের মু‌ক্তির দাবিতে দলটির ২ ঘণ্টার কর্মসূ‌চি পালনের কথা ছিল। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বিবৃতিতে কর্মসূ‌চি স্থগিতের ঘোষণা দেন। বিবৃতিতে বলা হ‌য়ে‌ছে, ‘দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি আপাতত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনু‌রোধে জামায়াত আ‌মির ডা. শফিকুর রহমান তার স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হওয়ার কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করেছেন।’ প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে ২২ আগস্ট গ্রেপ্তার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারকে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর সাজা বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। রায় পুনর্বিবেচনায় রিভিউ করেছেন এটিএম আজহার। মঙ্গলবার এর শুনানি হ‌তে পা‌রে। মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের পাঁচ শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। বিচার চলাচলে অথবা রায় ঘোষণার পর কারাগারে মারা গেছেন আরও পাঁচ জন। দণ্ডিত নেতাদের মধ্যে একমাত্র এটিএম আজাহার জী‌বিত। জামায়াত বারবার অভিযোগ করেছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ মিথ্যা মামলায় ও সাজানো সাক্ষীতে নেতাদের সাজা দিয়েছে। গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর অন্যান্য মামলায় জামায়াতের সব নেতা ছাড়া পেয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা স্পর্শকাতর হওয়ায় জামায়াতও এত দিন এটিএম আজাহারের মুক্তির কথা বলেনি। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মু‌ক্তির দাবিতে ঢাকাসহ সারা‌দে‌শে বিক্ষোভ সমা‌বেশ ক‌রে জামায়াত। গত বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) জামায়াত আ‌মির ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, এটিএম আজহারকে মু‌ক্তি না দি‌লে তি‌নিও কারাগারে যে‌তে চান। স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হ‌তে ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত প্রাঙ্গণে যাবেন। পরে ক‌য়েক‌দিন তি‌নি বক্তৃতায় ব‌লেছেন, এ‌টিএম আজহার‌কে কারাগারে রেখে মুক্ত থাক‌তে চান না তিনি। জামায়াতের কর্মী সমর্থকরাও কারাগারে যে‌তে প্রস্তুত। জামায়াত সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে, রিভিউ শুনানির দিন নির্ধারণ ও ২৫ ফেব্রুয়া‌রি‌কে সরকার শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করায় কর্মসূ‌চি স্থ‌গিত করা হ‌য়ে‌ছে।

নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার তারিখ চূড়ান্ত

আগামী শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির দল ঘোষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সারজিস আলম। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। নতুন এ রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি থাকলেও তা ফের পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সারজিস আলম বলেন, ‘ওই দিন বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন মানিক মিয়া এভিনিউয়ে নতুন এ রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে ‘ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দাবি হচ্ছে, একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। সবচেয়ে বড় অনুধাবনটি হচ্ছে সেই ৫ আগস্ট নতুন বাংলাদেশের আমরা যে স্বপ্নগুলো দেখেছি, এই জুলাই স্পিরিটকে সামনে রেখে। নতুন বাংলাদেশ যে জায়গায় কল্পনা করেছি, তা একটা দীর্ঘ লড়াই। হাজারো শহীদের জীবনের উপরে, অর্থাৎ লাখো ভাই-বোনের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যে বাংলাদেশ‌, আগামী প্রজন্মকে সেই বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের কাছে একটি আমানত।’ আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শহীদ পরিবার, দেশি-বিদেশি কূটনৈতিক, প্রবাসী বাংলাদেশি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর থেকে অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত সবাই থাকবেন বলেও জানান তিনি। নতুন দলের বিষয়ে জনমত জরিপ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। এ লক্ষ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি কর্মসূচি চলছে। এই কর্মসূচির আওতায় জনমত জরিপ করা হচ্ছে। অনলাইনের পাশাপাশি জেলায় জেলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত (প্রশ্নোত্তর) সংগ্রহ করা হচ্ছে। জরিপে রোববার বিকেল পর্যন্ত তিন লাখের বেশি মানুষ মতামত দিয়েছেন বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। এদিকে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ ছয়টি পদে কারা আসছেন, তা অনেকটাই চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে ‘সমঝোতার’ ভিত্তিতে নতুন দুটি পদও সৃষ্টি করা হচ্ছে। আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র এবং মুখ্য সংগঠকের পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নামে দুটি পদ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সামনের সারিতে থাকা ছাত্রনেতারাই নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদগুলোতে আসছেন। এই দলের আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলামের মনোনয়ন নিয়ে শুরু থেকেই জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কারও কোনো আপত্তি ছিল না। সদস্যসচিব হিসেবে কে আসবেন, মূলত তা নিয়ে মতবিরোধ ছিল। সমঝোতার ভিত্তিতে এই পদে আখতার হোসেনের নাম অনেকটাই চূড়ান্ত। তিনি এখন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব। নতুন দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব নিতে যে কোনো সময় অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করতে পারেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। দলের মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র পদে দেখা যেতে পারে সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে। অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক কমিটিতে থাকা ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আলী আহসান জোনায়েদের (শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি) নাম বিবেচনায় আছে। আর দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদে আসতে পারেন জাতীয় নাগরিক কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। নতুন দলে যুক্ত হতে যাওয়া জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। শীর্ষ ছয়টি পদের বাইরে নতুন দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, তাসনিম জারা ও আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম সদস্যসচিব অনিক রায়, মাহবুব আলম ও অলিক মৃ। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদকেও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা যেতে পারে।

তর্ক-বিতর্কে যেন স্বৈরাচার সুযোগ পেয়ে না যায়: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘তর্ক-বিতর্ক করতে গিয়ে এমন কিছু যেন না হয়, যাতে স্বৈরাচার কিংবা দেশের ভালো যারা চায় না, তারা সুযোগ পেয়ে যায়। সংস্কার নিয়ে যদি আমরা অযাচিত আলোচনা করতে থাকি, তাহলে রাষ্ট্রের মূল সমস্যাগুলো আড়াল হয়ে যেতে পারে।’ সংস্কার নিয়ে অযাচিত আলোচনা না করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে অনুষ্ঠিত খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গণতন্ত্রের যত চর্চা হবে তত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘এ কারণেই বিএনপি দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা নির্বাচিত করছে।’ বিএনপি ক্ষমতায় গেল নারী উন্নয়ন, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন করবেন বলে জানান তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারকে এসব বিষয়ে নজর দেওয়ারও পরামর্শ দেন তারেক রহমান। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বেবী নাজনিন, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, শামীমুল ইসলাম শামীম, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। বক্তব্য দেন বিএনপির নেতা সৈয়দা নার্গিস আলী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, কাজী মিজানুর রহমান, কেএম হুমায়ুন কবীর, হাফিজুর রহমান মনি, শেখ মোহাম্মদ আলী বাবু, মুর্শিদ কামাল। সোমবার বিকালে জেলা স্টেডিয়ামে শুরু হয় কাউন্সিল অধিবেশন। সম্মেলনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের ৩টি পদে লড়ছেন ১২ জন। ভোটার রয়েছেন ৫০৫ জন। এর আগে খুলনা মহানগর বিএনপির সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর। আর ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর গঠিত হয়েছিল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি।