নির্বাচন কমিশনের চিঠির ব্যাখ্যা দিল এনসিপি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৩:২৯ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পাঠানো চিঠির জবাব দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত ১৩ অক্টোবর দলটির প্রতি একটি চিঠি পাঠায় ইসি। রবিবার (১৯ অক্টোবর) দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টের মাধ্যমে চিঠির ব্যাখ্যা দেওয়ার বিষয়টি জানান।
পোস্টে নাসীরুদ্দীন লেখেন, ২০২৫ সালের ২২ জুন এনসিপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন দাখিল করে এবং ‘শাপলা’ প্রতীক নিজেদের অনুকূলে সংরক্ষণের অনুরোধ জানায়। আবেদন জমা দেওয়ার আগে ও পরবর্তীতে এনসিপির প্রতিনিধিদল একাধিকবার ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে দলটির প্রতীকের বিষয়ে অবস্থান তুলে ধরে।
তিনি জানান, আলোচনার ধারাবাহিকতায় এনসিপি গত ৩ আগস্ট, ২৪ সেপ্টেম্বর ও ৭ অক্টোবর তিন দফায় ইসির কাছে আলাদা আবেদন জমা দেয়। এতে দলটি ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ ও ‘লাল শাপলা’ প্রতীকের যেকোনো একটি বরাদ্দের অনুরোধ করে। পাশাপাশি, প্রতীকের নকশা ভিন্ন ভিন্ন ভার্সনে উপস্থাপন করে কমিশনের কাছে নমুনাও জমা দেওয়া হয়।
কিন্তু এনসিপি অভিযোগ করেছে, তাদের আবেদন নিষ্পত্তি না করেই নির্বাচন কমিশন বিধিবহির্ভূতভাবে চিঠি পাঠিয়েছে এবং দলটির পছন্দের বাইরে গিয়ে অন্য প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। এনসিপি বলছে, এটি “স্বেচ্ছাচারী, অনাকাঙ্ক্ষিত ও বেআইনি” আচরণ।
এনসিপির আইনগত অবস্থান
দলটির ব্যাখ্যায় বলা হয়, প্রতীক অন্তর্ভুক্তি বা বাদ দেওয়ার বিষয়ে কোনো লিখিত নীতিমালা এখনো প্রকাশ করেনি ইসি। সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সব নাগরিক ও রাজনৈতিক দলের প্রতি সমতা ও ন্যায্য আচরণ নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। তাই ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ বা ‘লাল শাপলা’ প্রতীক বাদ দেওয়ার নীতিমালা থাকলে তা লিখিতভাবে জানাতে হবে, আর না থাকলে দ্রুত তা প্রণয়ন ও প্রকাশ করা জরুরি।
এছাড়া, ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৮’-এর বিধি ৭(২) ও ফরম-২ অনুসারে কমিশনকে অবশ্যই দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে, যেখানে রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত প্রতীকের নাম উল্লেখ থাকবে। এনসিপির দাবি, কমিশন ওই বিধি অনুসরণ না করে নিজের ইচ্ছেমতো প্রতীক বরাদ্দ দিতে পারে না।
দলের দাবিগুলো
১. ইসি লিখিতভাবে জানাবে— কোন নীতিমালা বা মানদণ্ডের ভিত্তিতে ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ ও ‘লাল শাপলা’ প্রতীক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
২. যদি এমন মানদণ্ড না থাকে, তবে তা দ্রুত প্রণয়ন ও প্রকাশ করতে হবে এবং সব দলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য করতে হবে।
৩. ২০০৮ সালের বিধিমালার ফরম-২ অনুসারে বিজ্ঞপ্তিতে এনসিপির প্রার্থিত প্রতীক উল্লেখ করতে হবে।
৪. প্রতীক বরাদ্দে কমিশনকে স্বচ্ছ, যুক্তিসংগত ও ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ইসিকে ‘স্বেচ্ছাচারী’ বলছে এনসিপি
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, জনগণের সঙ্গে ‘শাপলা’ প্রতীককেন্দ্রিক এনসিপির একটি আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাই এই প্রতীক ছাড়া অন্য কোনো প্রতীক গ্রহণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
দলটির দাবি, নির্বাচন কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে এনসিপির সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করছে, যা ইসির স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তাদের মতে, কমিশনের বর্তমান আচরণ আগের “ফ্যাসিবাদী সময়ের পাতানো নির্বাচন আয়োজনকারী কমিশনের” মনোভাবকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
নাসীরুদ্দীন আরও বলেন, কমিশনকে এনসিপির পূর্বে জমা দেওয়া আবেদনগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে এবং তাদের কার্যক্রমের আইনগত ভিত্তি প্রমাণ করতে হবে।
এনসিপি আশা করছে, নির্বাচন কমিশন ‘নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ২০০৮’-এর বিধি ৯(১) অনুযায়ী সংশোধন এনে দলটির অনুকূলে ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ বা ‘লাল শাপলা’ প্রতীকের যেকোনো একটি বরাদ্দ দেবে।