ইসলামী দলগুলোর গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ কতটা বৈধ? জাহেদ উর রহমানের প্রশ্ন


ইসলামী দলগুলোর গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ কতটা বৈধ? জাহেদ উর রহমানের প্রশ্ন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামী দলগুলোর অংশগ্রহণের বৈধতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান। সম্প্রতি এই ইস্যু বিভিন্ন টক শো ও আলোচনা অনুষ্ঠানে আলোচিত হওয়ায় তিনি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও জনমত আহ্বান করেছেন।

নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘জাহেদস টেইক’-এ একটি পর্বে জাহেদ উর রহমান বলেন, "প্রশ্নটি রেডিক্যাল শোনালেও এ নিয়ে খোলামেলা ও যুক্তিপূর্ণ বিতর্ক প্রয়োজন।" তিনি মনে করেন, জামায়াতে ইসলামি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দলের বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকার অধিকার কতটা বৈধ, সেটি এখন জরুরি এক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি তুলে ধরেন, কিছু ইসলামপন্থী দল প্রকাশ্যে শরিয়া ভিত্তিক আইন চালুর পক্ষে কথা বলছে। কারও কারও বক্তব্যে খেলাফত ব্যবস্থার প্রসঙ্গও উঠে আসে। অর্থাৎ, তারা প্রচলিত সংবিধান ও নির্বাচনকেন্দ্রিক ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় বলেই মনে হয়।

তার মতে, যদি কোনো দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসে পরবর্তীতে সেই প্রক্রিয়া বিলুপ্ত করে একদলীয় শাসন কায়েম করে, তবে তা জনগণের ম্যান্ডেটের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হবে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি ইউরোপে ফ্যাসিবাদের উত্থানসহ আধুনিক ইতিহাসের বিভিন্ন দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন, যেখানে গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

জাহেদ উর রহমান বলেন, যারা শরিয়া আইন চালুর দাবি করেন, তাদের স্পষ্ট করতে হবে তারা কেমন শরিয়া চান, সেই শরিয়া কিভাবে বাংলাদেশের সংবিধান, মানবাধিকার এবং বিশেষ করে নারীর অধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বহু শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্রে সাধারণ, অংশগ্রহণমূলক এবং মানবাধিকার সম্মত নির্বাচনব্যবস্থা বিদ্যমান নেই, যা বাংলাদেশের বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর সঙ্গে বিরোধপূর্ণ হতে পারে।

তাই তিনি মনে করেন, যদি কোনো ইসলামী দল জনগণের ভোট চায়, তবে তাদের অবশ্যই নিজেদের আইনগত এবং সাংবিধানিক অবস্থান পরিষ্কার করে বলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ইসলামী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যেও ঐক্যের ঘাটতি রয়েছে। কেউ কেউ জামায়াতকে ইসলামের সঠিক অনুসারী মনে করে না, আবার কারও দৃষ্টিতে অন্যরা প্রতিপক্ষ বা এমনকি শত্রু হিসেবেও বিবেচিত। টক শো আলোচনায় জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বের কিছু দাবি নিয়েও তিনি মন্তব্য করেন।

“সুদভিত্তিক অর্থনীতি বিলুপ্তির মতো দাবি এসেছে, কিন্তু এসব বাস্তবায়নের জন্য কী ধরনের আইনগত ও প্রশাসনিক কাঠামো প্রয়োজন, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা দেওয়া হয়নি,” বলেন তিনি।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের ওপর দ্রুত এবং গভীর আলোচনা হওয়া উচিত বলেও মত দেন জাহেদ উর রহমান। তার ভাষায়, “জনগণকে জানতে হবে যে তারা দেশের ভবিষ্যৎ কিভাবে দেখতে চান এবং কোন দলকে ভোট দিলে সেই দলের প্রস্তাবিত রূপরেখা কী ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×