উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট নিয়ে বিতর্ক থামছে না: গোলাম মাওলা রনি
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০২:১০ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২৫

সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম আলোচিত ইস্যু হয়ে উঠেছে উপদেষ্টাদের ‘সেফ এক্সিট’। শুরুটা হয়েছিল কিছু প্রশ্ন ও মন্তব্য দিয়ে, কিন্তু তা এখন রীতিমতো রাজনৈতিক ঝড়ের রূপ নিয়েছে। এই বিতর্ককে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়ছে, আর এই পরিস্থিতিতে মুখ খুলেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি।
ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় রনি বলেন, “উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট নিয়ে কয়েকদিন আগে যে বিতর্কটা শুরু হলো, এরপরে প্রায় সপ্তাহখানেকেরও বেশি সময় চলে গেল। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই এই বিতর্ক যেন থামছে না। বরং একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে এবং উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে অনেক কথা বলছেন, প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।”
রনি দাবি করেন, শুরুতে শুধুমাত্র কয়েকজন উপদেষ্টাকে ঘিরে আলোচনাটি সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের রাজনীতির কেন্দ্রে। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও একে একে এই বিতর্কে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করছেন। তার মতে, এই পরিস্থিতি সরকারকে চাপের মুখে ফেলেছে, আর জনগণের মধ্যে আস্থার ঘাটতি তৈরি করেছে।
রনি বলেন, “যে সরকার ইতিহাসের একটা সেরা নির্বাচন করবে, যে সরকারটি গঠিত হয়েছিল একটি বিস্ময়কর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এবং সেই গণ-অভ্যুত্থানের কারণে আওয়ামী লীগ বনাম গণ-অভ্যুত্থানকারী এ দুটো ভাগে সারা দেশ বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল, সেই অবস্থা এখন অনেকটাই নেই।”
তিনি আরও বলেন, “মানুষ যে প্রত্যাশা নিয়ে সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল, তা এখন ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে। হতাশা ও সংশয়ের জায়গা থেকে মানুষ নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। ফলে প্রথমদিকে মানুষের যে আবেগ, প্রেম ভালোবাসা ছিল; সেটা ধীরে ধীরে কমতে কমতে এখন তলানিতে শুধু নয়, একেবারে রিভার্স হয়ে গেছে। বহু মানুষ বলার চেষ্টা করছে, আগেই ভালো ছিলাম। বহু মানুষ বলার চেষ্টা করছে, এ দেশের জন্য আসলে শেখ হাসিনার মতো আয়রন লেডি দরকার। অথচ ড. ইউনূস ১৪ মাস আগে আমাদের দেশে ছিলেন একেবারে কিংবদন্তি মহাপুরুষ।”
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদেরও কঠোর সমালোচনা করেছেন রনি। তিনি মনে করেন, এই পরিষদ গঠন থেকে শুরু করে তাদের কর্মকাণ্ড পর্যন্ত একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে জনগণের আশা ভঙ্গ হয়েছে। “ড. ইউনূস ক্ষমতায় এসে তার উপদেষ্টামণ্ডলী গঠন করলেন। এরপর ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত আমাদের আস্তে আস্তে স্বপ্নভঙ্গ হতে থাকল। তিনি যাদেরকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, তারাও অসম্ভব বাড়াবাড়ি শুরু করলেন। আস্তে আস্তে আমরাও মুখ খুলতে শুরু করলাম।”
বিদেশ সফরের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে রনি বলেন, “বিপুল অর্থ ব্যয় করেও এসব সফর থেকে কাঙ্ক্ষিত কোনো ফল পাওয়া যায়নি। বরং প্রতিবারই কোনো না কোনো বিতর্কের জন্ম হয়েছে। তিনি যে কয়বারই বিদেশে গিয়েছেন একটা না একটা ফ্যাসাদ তিনি সেখানে করে এসেছেন। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক কোনো একটি দেশ থেকেই আমরা আজ পর্যন্ত তেমন কিছু পায়নি। অথচ তার ১৪-১৫টি বিদেশ ভ্রমণের ফলে কত হাজার কোটি টাকা আমরা খরচ করেছি এ হিসাব আমাদের নেই, আমরা জানি না। এর ফলে কি হলো? সরকারের যে কর্মকাণ্ড যা নিয়ে মানুষের ভীষণ রকম একটা আবেগ ছিল, উচ্ছ্বাস ছিল; এটা হিতে বিপরীত হয়ে গেল। এখন মানুষ যাচ্ছেতাই বলছে।”
নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে এনসিপি নেতা নাহিদের সাম্প্রতিক মন্তব্যে, যেখানে তিনি দাবি করেন, কিছু উপদেষ্টা নিজেদের নিরাপদ প্রস্থানের জন্য বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনা করছেন এবং নানা সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ প্রসঙ্গে রনি প্রশাসনের স্থবিরতার আভাস দেন।
এ নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হয় যখন অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, “কোনো উপদেষ্টার পালানোর প্রয়োজন নেই, মূলত এই দেশটি এখন বর্তমানে যেখানে আছে, সেখান থেকে এই দেশের সেফ এক্সিট দরকার।” রনির মতে, এই মন্তব্য যথেষ্ট গুরুত্ব না দিয়েই করা হয়েছে এবং এর পরিণতি মারাত্মক হতে পারে।