ঈদে পুলিশের ছুটি বাতিল ঘোষণা

ঈদুল আজহায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। উপদেষ্টা বলেন, ঈদের ১০ দিনের ছুটি সামনে রেখে রাজধানীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, ঈদ যাত্রায় চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। চাঁদাবাজি যে-ই করুক, তার দলীয় পরিচয় বিবেচনায় না নিয়েই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঈদের সময় ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, গত ঈদের মতো এবারও আসন্ন ঈদুল আজহায় যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যাত্রীদের যাওয়া-আসার সময় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি না নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।এছাড়াও ভাড়া যথাযথভাবে নেয়া হচ্ছে কিনা সেটির তদারকিতে একটি কমিটি হবে। এতে মালিকপক্ষ সম্মতি দিয়েছেন। যাত্রী ছদ্মবেশে ডাকাত ঠেকাতে বাসে ওঠার সময় সবার ছবি নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

জুলাইয়ের মধ্যেই জাতীয় সনদ তৈরি করতে চাই: আলী রীয়াজ

সময় স্বল্পতার কারণে ‘ন্যূনতম ঐক্যমত্যের’ ভিত্তিতে আগামী মাসেই ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, “আমাদের এই আলোচনার মাধ্যমে একটা জায়গায় আসতে হবে। একধরনের উপসংহার টানতে হবে, কারণ সময়ের স্বল্পতার বিবেচনায় আমরা জুলাই মাসের মধ্যে যেই সনদ তৈরি করতে চাচ্ছি, সেই সনদে কোনটা অন্তর্ভুক্ত থাকবে- কোনটা থাকবে না; সেটা আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। “আলোচনায় যেগুলো থাকবে না, যেগুলোতে ঐক্যমত হবে না, সেগুলো লিখিত থাকবে যে- এগুলো আলোচিত হয়েছে, কিন্তু একমত হওয়া যায়নি। সেই কাঠামোর দিক থেকে আমাদের আজকের আলোচনা। আমরা আশা করছি, আমাদের অভিষ্ট জাতীয় সনদ, সেই সনদ তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে পারব।” মঙ্গলবার সকালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। আলী রীয়াজ বলেন, “আজকের বৈঠকে যে বিষয়গুলো আমরা নির্ধারণ করেছি, সেটা হলো যে- সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, নিম্ন কক্ষের নারী আসন, স্থায়ী কমিটিসমূহ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষেত্রে তার মেয়াদ এবং তার কার্য্করী পরিধির একটি অংশ-এগুলো নিয়ে আমরা কথা বলব। “এসব বিষয়ে কাঠামোগত দিক থেকে হচ্ছে যে, মূল প্রস্তাবটা কী ছিল। সংবিধান সংস্কার কমিশন বা নির্বাচন সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে একটা মূল প্রস্তাব ছিল; কিন্তু আলোচনার মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত হয়েছে, সেটাও আমরা অবহিত হব এবং পরিবর্তনগুলো কী দাঁড়িয়েছে এবং তার ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব। “আমাদের মনে রাখতে হবে যে, কোনো জায়গায় ন্যূনতম একমত হচ্ছি…সব বিষয়ে একেবারে সবটাতে আমরা একমত হব না, কিছু জায়গায় হয়ত আমরা একমত হব।” সকাল সাড়ে ১১টায় বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল মাল্টিপাস হলের ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্যরা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্ব বৈঠক রয়েছেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুর মিয়া, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার। বৈঠকে বিএনপির ইসমাইল জবিহউল্লাহ, জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশ ন্যাশনাল রিপাবলিক পার্টির সারবিস আলম, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, এলডিপির চৌধুরী হাসান সোরওয়ার্দী, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আশরাফ আলী আকনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা রয়েছেন। আলী রীয়াজ জানান, দ্বিতীয় পর্বের এই সংলাপের আর কোনো সভা ঈদের আগে হবে না। ঈদের ছুটির পর আবার আলোচনা শুরু হবে। সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস দ্বিতীয় পর্বের এ সংলাপ উদ্বোধন করেন।

১ জুলাই থেকে বিশেষ সুবিধা পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা, প্রজ্ঞাপন জারি

আগামী ১ জুলাই থেকে সরকারি-বেসামরিক, স্বশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো, ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ বাহিনীতে চাকরিরত ও পেনশনভোগীদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিশেষ সুবিধা হিসেবে ন্যূনতম এক হাজার টাকা ও পেনশন ভোগীদের ন্যূনতম ৫০০ টাকা দেবে সরকার। মঙ্গলবার (৩ জুন) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগ প্রবিধি-৩ শাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব দিলরুবা শাহীনা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ১৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাতীয় বেতনস্কেলের আওতাভুক্ত সরকারি-বেসামরিক, স্বশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো, ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও পুলিশ বাহিনীতে নিয়োজিত কর্মচারী এবং পুনঃস্থাপনকৃত পেনশনাররাসহ পেনশনভোগী ব্যক্তিদের জন্য ১ জুলাই ২০২৫ তারিখ থেকে বেতনগ্রেড ভেদে (গ্রেড ১ এবং তদূর্ধ্ব থেকে গ্রেড ৯ পর্যন্ত) ১০ শতাংশ এবং (গ্রেড ১০ থেকে গ্রেড ২০ পর্যন্ত) ১৫ শতাংশ হারে ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রদান করা হলো। এ ‘বিশেষ সুবিধা’ চাকরিরতদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১০০০ টাকা এবং পেনশন ভোগীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫০০ টাকা হারে প্রদেয় হবে। এ বিশেষ সুবিধা নিম্নরূপভাবে কার্যকর হবে– (ক) ০১ জুলাই ২০২৫ তারিখ থেকে প্রতিবছর ০১ জুলাই তারিখে প্রাপ্য মূল বেতনের ওপর গ্রেড ১ ও তদূর্ধ্ব থেকে গ্রেড ৯ এর অন্তর্ভুক্ত চাকরিরত কর্মচারীরা ১০ শতাংশ হারে এবং গ্রেড ১০ থেকে গ্রেড ২০ এর অন্তর্ভুক্ত চাকরিরত কর্মচারীরা ১৫ শতাংশ হারে ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রাপ্য হবেন। (খ) অবসর-উত্তর ছুটিতে (পিআরএল) থাকা কর্মচারীরা পিআরএল গমনের পূর্বকালীন সর্বশেষ প্রাপ্ত মূল বেতনের ভিত্তিতে উপর্যুক্ত (ক) অনুচ্ছেদে বর্ণিত গ্রেডভিত্তিক হারে ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রাপ্য হবেন। (গ) পেনশন পুনঃস্থাপনকৃত কর্মচারীরাসহ সরকার থেকে পেনশন গ্রহণকারী কর্মচারীরা পেনশনের বিদ্যমান অংশের ওপর উপর্যুক্ত (ক) অনুচ্ছেদে বর্ণিত গ্রেডভিত্তিক হারে ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রাপ্য হবেন। (ঘ) যেসব অবসর গ্রহণকারী কর্মচারী তাদের গ্রস পেনশনের ১০০ শতাংশ অর্থাৎ সম্পূর্ণ অংশ সমর্পণ করে এককালীন আনুতোষিক উত্তোলন করেছেন এবং এখনো পেনশন পুনঃস্থাপনের জন্য উপযুক্ত হননি, তাদের ক্ষেত্রে এ ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রযোজ্য হবে না। (ঙ) জাতীয় বেতনস্কেলে নির্ধারিত কোনো গ্রেডে সরকারি কর্মচারী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অব্যবহিত পূর্বে সর্বশেষ আহরিত তার মূল বেতনের ভিত্তিতে এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে। তবে শর্ত থাকে যে এরূপ চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত ব্যক্তি পেনশনভোগী হলে পেনশনের বিদ্যমান অংশ অথবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত হওয়ার অব্যবহিত পূর্বের সর্বশেষ আহরিত মূল বেতনের ভিত্তিতে যেকোনো এক ক্ষেত্রে এ সুবিধা প্রাপ্য হবেন। (চ) সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মচারীরা সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার তারিখের অব্যবহিত পূর্বের মূল বেতনের ৫০ শতাংশ (অর্ধেক) এর ওপর উপর্যুক্ত (ক) অনুচ্ছেদে বর্ণিত গ্রেডভিত্তিক হারে ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রাপ্য হবেন; এবং (ছ) বিনা বেতনে ছুটিতে (লিভ উইদাউট পে) থাকাকালীন কর্মচারীরা এ ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রাপ্য হবেন না। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারের রাজস্ব বাজেট থেকে প্রদত্ত অনুদানে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্যান্য স্বশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীদের ক্ষেত্রে যারা জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ এর আওতাভুক্ত, এ ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রদান বাবদ প্রয়োজনীয় ব্যয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব বাজেট থেকে মেটাতে হবে। অর্থ বিভাগের আদেশ নং ০৭.০০.০০০০.১৬১,৯৯.০১০,২৩-১৩২, তারিখ: ১৮/০৭/২০২৩ বাতিল করা হলো বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জনস্বার্থে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো এবং ১ জুলাই ২০২৫ তারিখ থেকে এটি কার্যকর হবে।

আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের রুখতে কাজ করছে র‌্যাব

আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের রুখতে র‌্যাব কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী। মঙ্গলবার (৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, র‌্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতা এবং সারাদেশে ১৫টি ব্যাটালিয়নের মাধ্যমে যে নজরদারি, এটি চলমান। যদি কোনো অপতৎপরতা আমাদের নজরে আসে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পশুর হাট, কোরবানি, ঈদের জামায়াত, চামড়া বেচা-কেনাসহ বেশকিছু কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা রুখতে সচেষ্ট রয়েছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। কোরবানির পশুর হাটে ক্রয়-বিক্রয়ে প্রচুর আর্থিক লেনদেন হয়। এক্ষেত্রে অসাধু চক্রের মাধ্যমে জাল টাকার ছড়াছড়ির আশঙ্কা থাকে। জাল টাকা তৈরি ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত চক্রের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। হাটগুলোতে জাল টাকা শনাক্তে হাটে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে মেশিন স্থাপন করে সহায়তা করছে র‌্যাব। সবাইকে র‌্যাবের এই সেবা গ্রহণ করতে অনুরোধ করা হলো। এছাড়াও এ সময়ে কোরবানির হাট কেন্দ্রিক ও মার্কেটে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, প্রতারক চক্র, দালাল, মলম পার্টি এবং অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রুখতে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, অসুস্থ গবাদি পশু, কৃত্রিম উপায়ে রাসায়নিক দ্রব্য অথবা ইনজেকশন ব্যবহার করে দ্রুত সময়ে মোটাতাজা করা ও অস্বাস্থ্যকর গবাদি পশু শনাক্তকরণে র‌্যাবের নজরদারি চলমান থাকবে। পাশাপাশি পশু চিকিৎসকের সহায়তায় এসব গবাদি পশু শনাক্ত করে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, দেশের সবার ঈদুল আজহা নির্বিঘ্নে উদযাপন ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে র‌্যাব।

দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা

ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, রংপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী এবং সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। এ ছাড়া, খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে বলেও জানানো হয়। আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। গতকাল (সোমবার) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সাতক্ষীরায় ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে টাঙ্গাইলে ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ ভোর ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারে ১০৯ মিলিমিটার। আজ সকাল ৬টায় রাজধানীতে বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। শহরটিতে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে বাতাসের গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার। ঢাকায় আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬টা ৪৩ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৫টা ১১ মিনিটে।

ট্রেনে ঈদের ফিরতি যাত্রা: ১৩ জুনের টিকিট মিলছে আজ

ঈদুল আযহা উদযাপন শেষে রাজধানীতে ফিরতে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট অগ্রিম বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশে রেলওয়ে। আজ বিক্রি করা হচ্ছে আগামী ১৩ জুনের ট্রেনের টিকিট। আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টায় বিক্রি শুরু হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করা ট্রেনগুলোর আসনের টিকিট। দুপুর ২টায় বিক্রি শুরু হবে পূর্বাঞ্চলে চলাচল করা ট্রেনগুলোর আসনের টিকিট। যাত্রীদের সুবিধার্থে এবারও শতভাগ আসন অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে রেলওয়ের নেওয়া কর্মপরিকল্পনা থেকে জানা গেছে, আন্তঃনগর ট্রেনের ৯ জুনের আসনের টিকিট বিক্রি হয়েছে ৩০ মে; ১০ জুনের আসনের টিকিট বিক্রি হয়েছে ৩১ মে; ১১ জুনের আসনের টিকিট বিক্রি হয়েছে ১ জুন; ১২ জুনের আসনের টিকিট বিক্রি হয়েছে ২ জুন। এছাড়া ১৪ জুনের আসনের টিকিট বিক্রি হবে ৪ জুন এবং ১৫ জুনের আসনের টিকিট বিক্রি হবে ৫ জুন। প্রসঙ্গত, ঈদের পরে ৭ দিনের ট্রেনের আসনের টিকিট বিশেষ ব্যবস্থায় অগ্রিম হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। এ সময় কেনা টিকিটগুলো যাত্রীরা রেলওয়েকে ফেরত দিতে পারবেন না। প্রতিজন টিকিটপ্রত্যাশী চারটি আসনের টিকিট একবার একসঙ্গে কিনতে করতে পারবেন। একটির বেশি আসনের টিকিট কিনলে সহযাত্রীদের নাম টিকিট কেনার সময় লিখতে হবে।

স্থিতিশীল বাজারে স্বস্তিতে ক্রেতারা : আসিফ মাহমুদ

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, এবার স্থিতিশীল বাজারে স্বস্তিতে কেনাকাটা করতে পারছেন ক্রেতারা। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার ভেরিফাইড ফেসবুকের এক পোস্টে বলেন, ‘প্রতি বছর কোরবানির এক থেকে দুই সপ্তাহ আগে কারসাজি করে প্রায় সব ধরনের মশলার দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। তবে এবার তা হয়নি।’ তিনি আরও জানান, গত বছরের কোরবানির তুলনায় কমেছে অধিকাংশ মশলার দাম। উপদেষ্টা নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু মশলার বাজার মূল্য তুলে ধরেন। যেমন- গতবছর কোরবানি ঈদের সময় পেঁয়াজের কেজি প্রতি মূল্য ছিল ৭০-৮০ টাকা। এখন ৪৫-৫০ টাকা। দেশি রসুনের কেজি প্রতি মূল্য ছিল ১৯০-২০০ টাকা, এখন ১১০-১২০ টাকা। আদার কেজি প্রতি মূল্য ছিল ২২০-২৬০ টাকা, এখন ১১০-১২০ টাকা। এরকম অধিকাংশ মশলার মূল্য গত বছরের চেয়ে কম।

আজও সচিবালয়ে বিক্ষোভ, ২ উপদেষ্টাকে দেওয়া হবে স্মারকলিপি

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার (৩ জুন) ১১তম দিনের মতো সচিবালয়ে বিক্ষোভ করছেন সরকারি কর্মচারীরা। বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ের চার নম্বর ভবনের সামনে থেকে কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিল নিয়ে তারা সচিবালয় চত্বর প্রদক্ষিণ করে ৬ নম্বর ভবনের সামনে বাদামতলায় বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। আন্দোলন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। সমাবেশে তারা জানিয়েছেন, অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কাছে স্মারকলিপি দেবেন তারা। এর আগে তারা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান করবেন। চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধুমাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে, এমন বিধান রেখে গত ২৫ মে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করা হয়। এর আগে গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদন হয়। ২৪ মে থেকেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইনটি প্রত্যাহারের দাবিতে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবগুলো সংগঠন সম্মিলিতভাবে আন্দোলন করে আসছেন। তারা এই অধ্যাদেশটিকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন হিসেবে অবহিত করছেন। এর মধ্যে অধ্যাদেশ বাতিল না হলে ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন কর্মচারী নেতারা।

চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ ৬ নেতা গ্রেপ্তার

চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র নাছির উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গত রবি ও সোমবার (১ জুন) রাত এবং আজ মঙ্গলবার (২ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। নাছির উদ্দিন ছাড়া গ্রেপ্তার অন্য নেতাকর্মীরা হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সহসভাপতি মো. আব্দুস সালাম (৫৭), দাউদকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটির ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ-বিষয়ক সম্পাদক মো. নাসির আহমেদ (৬০), ঢাকা দক্ষিণ ২৪ নম্বর ওয়ার্ড লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটির প্রচার সম্পাদক মো. নুরুল হক (৬২), মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প বাজার ইউনিট আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি মো. সাঈদ ওরফে মাছুয়া সাঈদ (৫৪) ও গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও চেয়ারম্যান ওয়ানা মারজিয়া নিতু (৪৬)। ডিবি সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল সোয়া ৮টার দিকে শান্তিনগর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নাছির উদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করে ডিবি-গুলশান বিভাগের একটি টিম। সোমবার (২ জুন) রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর মিরপুর পীরেরবাগ এলাকা থেকে ওয়ানা মারজিয়া নিতুকে গ্রেপ্তার করে ডিবি মতিঝিল বিভাগের একটি টিম। অন্যদিকে ডিবি-সাইবার বিভাগের একটি দল রাত সাড়ে ১২টার দিকে উত্তরা এলাকা থেকে মো. আব্দুস সালামকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে রবিবার রাত ৯টার লালবাগ হতে মো. নুরুল হককে, রাত সাড়ে ১০টার দিকে পল্লবী এলাকা থেকে মো. নাসির আহমেদকে ও রাত পৌনে ১২টার দিকে ওয়ারী এলাকা থেকে মো. সাঈদ ওরফে মাছুয়া সাঈদকে গ্রেপ্তার করে ডিবি-লালবাগ বিভাগের লালবাগ জোনাল টিম।

বায়তুল মোকাররমে ঈদের পাঁচ জামাত, প্রথমটি সকাল ৭টায়

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পবিত্র ঈদুল আজহার পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। প্রতি এক ঘণ্টা পরপর চারটি এবং শেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে বেলা পৌনে ১১টায়। মঙ্গলবার (০৩ জুন) ইসলামিক ফাউন্ডেশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সকাল ৭টার প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা যাত্রাবাড়ী শাখার অধ্যক্ষ ড. খলিলুর রহমান মাদানী। মোকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম। দ্বিতীয় জামাত: সকাল ৮টাইমাম: ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী, মুফাসসির, ইসলামিক ফাউন্ডেশনমুকাব্বির: মো. নাসির উল্লাহ, খাদেম, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ তৃতীয় জামাত সকাল ৯টাইমাম: ড. মুশতাক আহমদ, সম্পাদক, অনুবাদ ও সংকলন বিভাগ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনমুকাব্বির: মো. বিল্লাল হোসেন, খাদেম, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ চতুর্থ জামাত: সকাল ১০টাইমাম: মুফতী মো. আব্দুল্লাহ, মুফতী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনমুকাব্বির: মো. আমির হোসেন, খাদেম, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০.৪৫টাইমাম: মাওলানা মোহাম্মদ নূর উদ্দীন, ভাষা শিক্ষক, দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনমুকাব্বির: মো. জহিরুল ইসলাম, খাদেম, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ পাঁচটি জামাতের কোনোটিতে একজন ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী লাইব্রেরীয়ান মাওলানা মো. শহিদুল ইসলাম। বিকল্প মুকাব্বির হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন খাদেম মো. রুহুল আমীন। উল্লেখ্য, আগামী শনিবার (০৭ জুন) বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।

রাজধানীতে ফ্লাইওভারের ঢালে বাসের ধাক্কায় পুুলিশের এসআই নিহত

রাজধানীর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ঢালে বাসের ধাক্কায় কামরুল ইসলাম (৩৭) নামে পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিহত হয়েছেন। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল থানায় কর্মরত ছিলেন। সোমবার (২ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে তাকে উদ্ধার করে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বাসাবো এলাকার বাসা থেকে মোটরসাইকেলে কর্মস্থল মতিঝিল থানায় যাচ্ছিলেন এসআই কামরুল ইসলাম। পথে খিলগাঁওয়ের খলিলের গোস্তের দোকানের বিপরীত পাশের সড়কে পৌঁছালে বাসের ধাক্কায় তিনি মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিলে রাত সাড়ে ৯টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এসআই কামরুল ইসলাম খিলগাঁওয়ের বাসাবো এলাকার একটি ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন৷ তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণা সদর থানায়। ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, নিহত পুলিশ সদস্যের মরদেহ মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় ঘাতক বলাকা পরিবহন বাসটি জব্দ করা হয়েছে। বাসের চালক জাহাঙ্গীর আহমেদ টিপুকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সমৃদ্ধির পথে যেতে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে জোরালো জাতীয় ঐকমত্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা আমাদের ঐক্য জোরদার করি... যাতে আমরা সামনে একটি পথ খুঁজে পাই এবং দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে পারি।’ সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐক্য কমিশনের এক সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই বৈঠকের প্রধান উদ্দেশ্য হলো ঐক্য বজায় রাখা। তিনি বলেন, ‘ঐক্য রক্ষা ও সুদৃঢ় করা সম্পর্কে আপনাদের পরামর্শ শুনলাম।’ অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই সংলাপ চলবে যাতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জুলাই সনদ আরও সমৃদ্ধ করা যায় এবং কোন কোন বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি’ তা দেশবাসী দেখতে পায়। সকাল বেলা উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই আজ দেশের কল্যাণের জন্য এখানে সমবেত হয়েছি...আমরা আশা করি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছে একটি খুব সুন্দর জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরি করতে পারব।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকার আশা করছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে পারবে। কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি খুব খুশি যে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে এই সংলাপে অংশ নিয়েছেন। কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, কমিশনের মেয়াদ ২০২৫ সালের আগস্টে শেষ হওয়ার কথা থাকায় আগামী জুলাইয়ের জুলাই সনদ ঘোষণা করতে কমিশন কাজ অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব সফলভাবে সম্পন্ন করতে হবে।’ আজ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপ শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সংস্কার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী অংশীদাররা সংলাপে অংশ নেন। এই কমিশন সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, সরকারি প্রশাসন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিশন সংক্রান্ত পাঁচটি মূল সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা পর্যালোচনা ও চূড়ান্ত করার জন্য গঠিত হয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মে পর্যন্ত প্রথম দফার আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। তখন ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

স্বরাষ্ট্রের সুরক্ষা সেবা বিভাগে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব

ঘোষিত বাজেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তুব দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২ জুন) ঘোষিত বাজেটে এই বিভাগের জন্য ৪ হাজার ৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে এই বিভাগে বরাদ্দ প্রস্তাব ছিল ৪ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। এতে ৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ কমেছে। সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে কারাগার, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রয়েছে। এবারের বাজেটে কারা অধিদপ্তরের জন্য ১ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। ঘোষিত বাজেটে ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ কমানো হয়েছে। অবশ্য এবারের বাজেটে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্প, পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন প্রকল্প, কুমিল্লা ও জামালপুর জেলা কারাগার পুনর্নির্মাণ প্রকল্প এবং নরসিংদী জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এছাড়াও ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে এবার অন্তত ২শ’ কোটি টাকার মতো বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব এসেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পাসপোর্টে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। সোমবার ঘোষিত বাজেটে এই খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। যদিও এবার ‘বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে এবার বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৯৩ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৮৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার এই খাতে অন্তত ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এবারের বাজেটে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অ্যাম্বুলেন্স সেবা সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে। ঘোষিত বাজেটে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জন্য এবার ৩৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, বিদায়ী অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৩৩৩ কোটি টাকা। এই খাতেও সামান্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এবার ঢাকা কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭.৪ বিলিয়ন ডলার: অর্থ উপদেষ্টা

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রবাসী আয় ও রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় এপ্রিল মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা জরুরি। আর তা নিশ্চিত করতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখাও অপরিহার্য। আজ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে এ কথা বলেন তিনি। ড. সালেহউদ্দিন আরো বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর বিষয়ে আমরা শুরু থেকেই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। বর্তমানে দেশের আমদানি নির্ভর মূল্যস্ফীতির প্রভাব কিছুটা কম। কারণ টাকা’র বিনিময় হার স্থিতিশীল এবং যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশ পণ্য আমদানি করে সেসব দেশে মূল্যস্ফীতি তুলনামূলকভাবে কম। এই স্থিতিশীলতার কারণে আমরা চলতি বছরের ১৪ মে থেকে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করতে সক্ষম হয়েছি।

প্রতিরক্ষা খাতে ১৩০০ কোটি টাকার ওপরে বরাদ্দ কমছে

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ কমেছে। বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় ১ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ কমেছে। সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানা যায়। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৪০ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে যা ছিল ৪২ হাজার ১৪ কোটি টাকা। তিনি আরও বলেন, এ বাজেটের মধ্যে প্রতিরক্ষা সার্ভিসের পরিচালন ব্যয় বাবদ ৩৭ হাজার ৮১২ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য ৯১৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য সার্ভিসের জন্য পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পরিচালন ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে সরকার বৈদেশিক ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তার এই বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত দেড় দশকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাই আমরা নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কারের ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেছি এবং এ লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন, নীতিমালা ও আদেশ সংশোধন এবং সংস্কারের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের প্রস্তুতির লক্ষ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং যথাযথ তথ্য বিশ্লেষণ নিশ্চিত করতে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এদিকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য ২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বছরে এই খাতে বাজেটের পরিমাণ ছিল ৭৯৩ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে দাঁড়িয়েছিল ৭১৬ কোটি টাকা।

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়তে পারে ১৫-২০ শতাংশ

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সোমবার (২ জুন) জাতীয় বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থ উপদেষ্টা এ ঘোষণা দেন। এতে সরকারি চাকরিজীবিদের বেতন বাড়তে পারে ১৫-২০ শতাংশ বলে জানা গেছে। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ২০১৫ সালের পর থেকে কোনো বেতন কাঠামো না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব করছি। তবে এই বিশেষ সুবিধা কতটা বাড়ানো হবে তা বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করা হয়নি। বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা পান। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটেও সাবেক অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলীও বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করেছিলেন। বাজেটের পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে নিয়মিত ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে আরও ৫% বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করেন। ২০১৫ সাল থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পেয়ে আসছেন। তবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনাও চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার। এই বিশেষ প্রণোদনা এখনও অব্যাহত আছে। অর্থবিভাগের একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে জানিয়েছেন, আগামী বাজেটে ১ম থেকে ৯ম গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১৫ শতাংশ এবং ১০ম থেকে ২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা (বিশেষ সুবিধা) পেতে পারেন । আগামী ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এ সুবিধা পাবেন। প্রতিবছর কর্মচারীদের যে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হয়, সেখানে কারো ৩.৭৫ শতাংশ, কারো ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সরকারি চাকরিজীবীদের জাতীয় বেতন স্কেল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গ্রেড-১ কর্মকর্তাদের জন্য প্রতি মাসে ৭৮ হাজার টাকা বেতন নির্ধারিত। একইভাবে মন্ত্রিপরিষদসচিব, মুখ্য সচিব ও সমমর্যাদার পদের বেতন ৮৬ হাজার টাকা এবং জ্যেষ্ঠ সচিব ও সমমর্যাদার পদের বেতন ৮২ হাজার টাকা নির্ধারিত। প্রতিবছর বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হয় গ্রেড-২ পদে ৩.৭৫ শতাংশ, গ্রেড-৩ ও ৪ পদে ৪ শতাংশ, গ্রেড-৫ পদে ৪.৫ শতাংশ, গ্রেড-৬ থেকে ২০ পর্যন্ত পদে ৫ শতাংশ করে। জানা যায়, বাজেটে বেতন-ভাতার জন্য ৮০–৯০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে। ১৫ শতাংশ মূল বেতন বৃদ্ধি হলে ছয় হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশে আট হাজার কোটি টাকা বাড়তি প্রয়োজন হবে। তবে বেতন বৃদ্ধির হার কত হতে পারে, তা নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে এনে জুলাই সনদ ঘোষণা করা সম্ভব: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, “আমরা সবাই আজ এখানে দেশ ও জাতির কল্যাণে একত্রিত হয়েছি। আশা করি, সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছে আমরা একটি অত্যন্ত সুন্দর জুলাই সনদ প্রস্তুত করতে পারব।” সোমবার (২ জুন) বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফা সংলাপের উদ্বোধনী বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, সরকার আশা করে যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে এনে জুলাই সনদ ঘোষণা করা সম্ভব হবে। প্রধান উপদেষ্টা নিজে ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি খুব খুশি যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে এই সংলাপে অংশগ্রহণ করেছেন। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, “কমিশনের মেয়াদ ২০২৫ সালের আগস্টে শেষ হচ্ছে এবং এর আগেই জুলাই মাসে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে কমিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”তিনি বলেন, “আমাদের ওপর অর্পিত এই পবিত্র দায়িত্ব পালনে অবশ্যই সফল হতে হবে।”জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপ সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে শুরু হয়েছে।সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় জড়িত অংশীজনরা অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, সরকারি প্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত পাঁচটি মূল সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা ও চূড়ান্তকরণের জন্য এই কমিশন গঠন করা হয়। প্রথম দফার সংলাপ ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময়ে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক হয়। সূত্র: বাসস

ব্রডব্যান্ডের জন্য উৎসে কর ৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব

প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা প্রদানকারীদের ওপর উৎসে করের হার বিদ্যমান ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাবনায় এই ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে বাংলাদেশে ১.৪ কোটি ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী রয়েছে। সারাদেশে ৩ হাজারের বেশি ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী এ পরিষেবা প্রদান করে।

যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু পণ্যের শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপদেষ্টা সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। তাঁর এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। বাজেটে যেসব শুল্ক-কর প্রস্তাব করা হয়, তা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়। ফলে শুল্ককর বাড়লে দাম বেড়ে যেতে পারে। সাধারণত শুল্ক-কর বৃদ্ধির প্রভাব বাজারে দ্রুত পড়ে। কমানোর প্রভাব পড়তে দেরি হয়। যেসব দাম বাড়তে পারে- মুঠোফোন: দেশে মুঠোফোন উৎপাদন ও সংযোজনে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমানো হয়েছে এবং মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমানোয় মুঠোফোনের দাম বাড়তে পারে। ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার: ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, আয়রন, রাইস কুকার, প্রেসার কুকার ইত্যাদি উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমানো হয়েছে। প্লাস্টিকের তৈজসপত্র: থালাবাসনসহ প্লাস্টিকের তৈজসপত্র, গৃহস্থালি সামগ্রী ও সমজাতীয় পণ্যে ভ্যাটের হার দ্বিগুণ, অর্থাৎ ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব তৈজসপত্রে ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার: তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডারে স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা কিছুটা কমিয়ে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এতে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়তে পারে। বিদেশি চকলেট: বিদেশি চকলেটের শুল্কায়ন মূল্য বাড়ানো হয়েছে। ইউনিটপ্রতি চার ডলারের বদলে এখন ১০ ডলার ধরে শুল্কায়ন হবে। এতে আমদানিতে খরচ বাড়বে। লিপস্টিক: ঠোঁট, চোখ ও মুখমণ্ডলে ব্যবহৃত প্রসাধন আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্য অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসব পণ্য আমদানি থেকে বাড়তি কর আদায় হবে। দামও বেড়ে যেতে পারে। ব্লেড: ব্লেড উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে সাত শতাংশ করা হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামার প্রত্যাশা

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে গত এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে এ লড়াইয়ের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে। সোমবার জাতীয় বাজেট বক্তৃতায় তিনি এসব তথ্য জানান। মধ্যমেয়াদী নীতি-কৌশল বিষয়ে আলোচনা করার সময় তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ভেঙে পড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, শ্রমিক অসন্তোষ কমিয়ে শিল্প খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। বিগত সরকারের সময়ে লাগামহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ফলে চরম সংকটাপন্ন ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। তিনি বলেন, প্রবাসী আয়ের আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি, রপ্তানি আয়ের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি, কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন অব্যাহত থাকা এবং সঠিক মুদ্রা ও রাজস্বনীতির সমন্বিত প্রয়োগের সুফল আমরা পাচ্ছি। ইতোমধ্যে কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীলতা অর্জনে অনেকদূর এগিয়েছে দেশ। তবে অর্থনীতিকে স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনার পথে এখনও বেশকিছু ঝুঁকি রয়েছে। উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে অন্তর্বর্তী সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়, তখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া। এ লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এতে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। আশার কথা হলো, এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল ছিল। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি। এটি নিশ্চিত করতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ কারণে আমরা গত ১৪ মে বাজারভিত্তিক মুদ্রাবিনিময় হার চালু করেছি।

স্থানীয় সরকার খাতে ৪২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্থানীয় সরকার খাতে ৪২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বছরে এই খাতে বাজেটের পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। সোমবার (২ জুন) সচিবালয়ে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই প্রস্তাব পেশ করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে স্থানীয় সরকার খাতে ৪২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব পেশ করছি, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছিল ৪৫ হাজার ২০৫ কোটি টাকা আর সংশোধিত বাজেটে গিয়ে তা দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, পরিবেশ উন্নয়ন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আওতায় জনগণকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। আধুনিক নগর ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন শহরে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরাপদ পানি সরবরাহ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন, আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ও প্রাথমিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সমগ্র দেশের গ্রামাঞ্চলে নিরাপদ পানির উৎস নির্মাণ, পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ, পানি শোধনাগার স্থাপন, সমগ্র দেশে কমিউনিটি অথবা স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনা এবং ভূপৃষ্ঠস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং প্রতিটি বাড়িকে স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।

শাহ সিমেন্টকে কালো তালিকাভুক্তির দাবি টিআইবির

ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনায় পরিবেশ সংরক্ষণ ও নদী রক্ষাসংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করে দীর্ঘদিন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রোববার (০১ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে শাহ সিমেন্টকে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অবিলম্বে কালো তালিকাভুক্ত করে নদী দুটিকে দখলমুক্ত করতে আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মীরেরসরাই মৌজায় শাহ সিমেন্ট কোম্পানি প্রায় ২৪ একর নদীর জমি বালু ও মাটি ফেলে ভরাট করেছে। ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং নদীর শ্রেণি পরিবর্তন হয়েছে। দখল করা জমিতে গড়ে ওঠা স্থাপনা ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যার পানিপ্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। এছাড়া, কারখানার তরল ও কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলার ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্লিংকার ধুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে নদীতে গিয়ে মিশে পরিবেশ দূষণ করছে। এতে আরও বলা হয়, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন (এনআরসিসি) ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে ‘দখলদার’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও এখন পর্যন্ত নদী রক্ষায় সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। শাহ সিমেন্ট শুধু জবাবদিহিতা ছাড়াই স্বাধীনভাবে নদীখেকো ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছে তাই নয়, জনগণের অর্থে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পে নির্বিকারভাবে ঠিকাদার হিসেবে মুনাফা করে যাচ্ছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান শাহ সিমেন্ট কর্তৃক নদী দখলের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘নদী দখল করে দুটি নদী ধ্বংসের এই কার্যক্রম কোনো যুক্তিতেই মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ধরনের কার্যক্রম কেবল নদীর নাব্যতা ধ্বংস করছে না, বরং দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য ও নদী-নির্ভর জনজীবনকেও চরম ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। নদীর স্বাভাবিক গঠন নষ্ট করে বন্যা, নদীভাঙন, পানি সংকট ও জলপ্রবাহজনিত সমস্যা বহুগুণে বাড়াচ্ছে। যার প্রভাব দেশের অর্থনীতি ও মানুষের জীবনমানের ওপর পড়ছে। ২০১৯ সালে হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায়ে বাংলাদেশের মধ্যে এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সব নদ-নদীকে আইনি সত্তা (রিসটিক পারসন / লিগ্যাল পারসন) বা জীবন্ত সত্তা (লিভিং এনটিটি) হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর অর্থ হলো, নদী হত্যা যে কোনো ব্যক্তি হত্যার শামিল। এমন বাস্তবতায়ও এই নদীখেকো প্রতিষ্ঠানটি বালু ও মাটি ফেলে মোহনায় জমি ভরাট করছে, যা স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করে নদীকেই মেরে ফেলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, নদীখেকো এই প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই রাষ্ট্র তথা সরকারের সঙ্গে কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক করার অধিকার রাখেনা। শাহ সিমেন্টকে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহির আওতায় আনার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সব ধরনের সরকারি কার্যাদেশ, লাইসেন্স ও আর্থিক প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত রাখতে অবিলম্বে কালো তালিকাভুক্তির আহ্বান জানাই আমরা।’ ড. জামান শাহ সিমেন্টের সঙ্গে সকল ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাতিল করে এ প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসায়িক বয়কটের দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে যে ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে এই দখলদারিত্বের কোনো স্থান নেই।’

প্রস্তাবিত বাজেটে মানুষের স্বস্তি, কর্মসংস্থান ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাবনা

প্রবৃদ্ধি-কেন্দ্রিক ধারণা থেকে সরে এসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সাধারণ মানুষকে স্বস্তি প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছে। সোমবার (২ জুন) বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার এই প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার অর্থ উপদেষ্টার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করে। বাজেট ঘোষণায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায় জোর দিয়ে দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত অর্থনীতির গতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে একটি উন্নত সমাজ বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে আমরা যে সব কার্যক্রম গ্রহণ করেছি, তার মূল লক্ষ্য হচ্ছে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বনভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ। যার মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন হবে এ দেশের মানুষের জীবনমানের এবং বৈষম্যের দুষ্টচক্র থেকে মুক্তি মিলবে। যে স্বপ্নকে ধারণ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ভিত রচিত হয়েছিল। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা একটি সুন্দর, বাসযোগ্য আবাসস্থল রেখে যেতে চাই। জনগণের জীবনযাত্রায় নিয়ে আসতে চাই এক সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের ঢেউ। আমরা সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবারের বাজেট সাজাবার চেষ্টা করেছি। বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এবারের বাজেট কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। আমরা বিগত বাজেটের চেয়ে ছোট আকারের বাজেট আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করছি। মধ্যমেয়াদে অর্থনীতির গতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। অথচ তুলনীয় অনেক দেশের চাইতে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম। রাজস্ব খাতকে আরও গতিশীল করতে এবং রাজস্ব আহরণে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করতে ইতোমধ্যে আমরা বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। অটোমেটেড ব্যবস্থার মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন দাখিল সহজ করা হয়েছে, কর আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নতুন কর অফিস স্থাপন করা হচ্ছে এবং কর আহরণের মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি রাজস্ব কৌশল তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, কর ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর এবং কর আদায়ের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে রাজস্ব নীতি হতে পৃথক করার লক্ষ্যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময়ে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন লুটপাট এবং দুর্নীতির ফলে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেলেও তা বারবার পুনঃতফশিলিকরণের মাধ্যমে আর্থিক খাতের প্রকৃত অবস্থা গোপন রাখা হয়েছিল। কিন্তু আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী লোন লিজ ক্লাসিফিকেশন ও প্রভিশনিং ব্যবস্থা অবলম্বন করেছি। ফলে এ খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০২৩ সালের জুন মাসের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ২০ দশমিক ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ খাতের প্রকৃত চিত্র উদঘাটনের লক্ষ্যে এসেট কোয়ালিটি রিভিউ-এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা নিরুপণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত আমরা বিগত বাজেটের চেয়ে ছোট আকারের বাজেট আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করছি। প্রবৃদ্ধি-কেন্দ্রিক ধারণা থেকে সরে এসে আমরা চেষ্টা করেছি সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায় জোর দিতে। তাই প্রথাগত ভৌত অবকাঠামো তৈরির খতিয়ান তুলে ধরার পরিবর্তে আমরা এবারের বাজেটে প্রাধান্য দিয়েছি মানুষকে। মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, জীবিকার নিরাপত্তা এবং বৈষম্যহীন পরিবেশ—এ অত্যাবশ্যক উপাদানগুলো ছাড়া যে কোন রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে পড়ে, দুর্বল হয় সমাজের ভিত। এবারের বাজেটে তাই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন, নাগরিক সুবিধা, কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয়ের উপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমাগত যে সব সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে তার সুবিধা ভোগ এবং যে সব চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে তা মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দিকেও মনোযোগ দেয়া হয়েছে।