
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও একই দিনে অনুষ্ঠিত গণভোটের জন্য দেশের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতিমধ্যেই যেসব কেন্দ্রের সঙ্গে সিসি ক্যামেরা সংযুক্ত, সেগুলো সচল রাখা হবে। নতুনভাবে যেসব কেন্দ্রে আগে ক্যামেরা ছিল না, সেখানে শুধুমাত্র ভোটের দিনের জন্য অস্থায়ীভাবে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। বিশেষ করে নিরাপত্তার দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে কাজ করছে ইসি।
ইসি সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে নির্বাচন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার নিয়ে ইসি আগ্রহী ছিল না। তবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতের স্বার্থে সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়েছে এবং লিখিতভাবে আবেদনও দিয়েছে।
মাঠ পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে আগেই সিসি ক্যামেরা আছে। এই ক্যামেরাগুলো সচল রাখা গেলে অতিরিক্ত ব্যয় খুব বেশি হবে না। যেসব কেন্দ্রে আগে ক্যামেরা ছিল না, সেখানে শুধুমাত্র ভোটের দিন অস্থায়ীভাবে ক্যামেরা বসানো সম্ভব এবং এতে খরচও সীমিত থাকবে। এই বিশ্লেষণের ভিত্তিতেই ইসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সম্প্রতি ইসি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সচিব এবং বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা করেছে। ২৭ নভেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকেও এই বিষয়ে পরামর্শ হয়েছে।
এবার দেশের ৬৪ জেলায় ৩০০ আসনের জন্য মোট ৪২,৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। পুরুষ ভোটারের জন্য ১,১৫,১৩৭টি এবং নারী ভোটারের জন্য ১,২৯,৬০২টি ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে মোট ভোটকক্ষের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২,৪৪,৭৩৯। এ ছাড়াও প্রাথমিকভাবে ১৪টি অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র নির্ধারিত হয়েছে।
পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮,২২৬টি কেন্দ্র ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ২০,৪৩৭টি কেন্দ্র ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইসি এই কেন্দ্রগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র’ হিসেবে বিবেচনা করে। একযোগে দুই ধরনের ভোট থাকায় এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ইসি কর্মকর্তারা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রসহ সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকলে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বাড়বে এবং ভোটারদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। কোনো ধরনের অনিয়ম ঘটলে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দ্রুত অপরাধী শনাক্ত করা যাবে।
ইসি সূত্র আরও জানায়, বিদ্যমান সিসিটিভি সংযোগ সচল রাখা হবে এবং যেসব কেন্দ্রে সংযোগ নেই, সেগুলোর কর্তৃপক্ষকে ভোটের দিনের জন্য সিসিটিভি সংযোগ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। যেসব কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ নেই, সেখানে এসব সংযোগ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ভোটকেন্দ্র সরাসরি পরিদর্শনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং সেল পরিচালনা করে ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সে সময় প্রায় ৪৪,০০০ ভোটকেন্দ্র ছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০,০০০-এর বেশি কেন্দ্র ও ২ লক্ষাধিক ভোটকক্ষ ছিল। দশম সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৩৭,৭০৭টি এবং ভোটকক্ষ ১,৮৯,৭৮০টি। নবম সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৫,২৬৩ এবং ভোটকক্ষ ১,৭৭,২৭৭টি ছিল। তবে আগের নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা সব কেন্দ্রে কার্যকরভাবে স্থাপিত ছিল না। এবার নিরাপত্তা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় সব কেন্দ্রে ক্যামেরা স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘এবারের নির্বাচনে ৪২,০০০-এর বেশি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ভোটকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত যেসব প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি আছে, সেগুলো সচল রাখতে নির্দেশনা দিতে হবে। এসব কেন্দ্র ভোটারের চলাচলের উপযোগী করতে হবে, অবকাঠামো সংস্কার করতে হবে এবং যেখানে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ নেই, সেখানে সংযোগ দিতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, ‘ভোটকেন্দ্রে বিদ্যমান সিসিটিভি সংযোগ সচল রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে সংযোগ নেই, সেসব কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষকে ভোটের দিনের জন্য সিসিটিভি সংযোগের ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। নিরাপত্তার সার্বিক পরিকল্পনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিড মিনিস্ট্রি হিসেবে কাজ করবে।’
অন্য নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘ভোটের দিন সন্ধ্যার পর ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ অপরিহার্য। প্রিসাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপাররা কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কেন্দ্র সরাসরি পরিদর্শন করবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা অধিকাংশ কেন্দ্র নিজ চোখে দেখবেন।’
সিইসি ১১ ডিসেম্বর জাতীয় ভাষণে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তারিখের তফসিল ঘোষণা করেন। নির্বাচনের দিন ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭.৩০ থেকে বিকাল ৪.৩০ পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।
জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর, বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ও প্রতীক বরাদ্দ হবে ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনি প্রচার চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭.৩০ পর্যন্ত।