আতঙ্ক ভর করেছে ইসরায়েলিদের দৈনন্দিন জীবনে

ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা তীব্র হচ্ছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষয়ক্ষতি প্রত্যক্ষ করে হতবাক ইসরায়েলের নাগরিকরা। মনোবল হারিয়ে তাদের দৈনন্দিন জীবনে আতঙ্ক ভর করছে। অনেকে এ অবস্থার জন্য সরকারের ইরানে হামলার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। গত বুধবার থেকে স্বল্প পরিসরে কিছু অফিসের কার্যক্রম শুরু হলেও দেশটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং রাস্তাঘাট জনমানবশূন্য রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্যান-ইউরোপীয় টেলিভিশন নিউজ নেটওয়ার্ক ইউরোনিউজ ইসরায়েলের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে আতঙ্ক নিয়ে জীবনযাপন করার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তেল আবিবের দক্ষিণের শহর হলনে বিমান হামলার সাইরেন বাজলে ছোটাছুটি শুরু হয় প্যারামেডিক স্বেচ্ছাসেবক জিমির। জরুরি কর্মীদের সঙ্গে তাকে ঘটনাস্থলে ছুটতে হয়। ৩৬ বছর বয়সী আরব-ইসরায়েলি জিমি বলেন, বৃহস্পতিবার জরুরি কর্মীদের সঙ্গে গাড়িতে উঠে যখন ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনে যাই, তখন বুঝতে পারি এটি তো আমারই ভবন। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় চিনতেও কষ্ট হচ্ছিল। ইসরায়েল ও ইরানের প্রকাশ্য সংঘাতের ষষ্ঠ দিন বুধবার থেকে দেশটিতে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। কিছু অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং সড়কগুলো জনমানবশূন্য রয়েছে। ইসরায়েলের অনেকের জন্য এই পরিস্থিতিতে সন্তান লালনপালন করা কঠিন। ৩০ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক এমা তার আরব-ইসরায়েলি স্বামী ও ১০ মাস বয়সী ছেলের সঙ্গে দক্ষিণ তেল আবিবের জাফায় থাকেন। তিনি বলেন, আমাদের ভবনে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্র নেই। এ জন্য প্রতিদিন রাতে আমরা শাশুড়ির বাড়িতে ঘুমাতে যাই। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমার মনোবল বেশির ভাগ ইসরায়েলিদের চেয়ে ভালো। এর কারণ হলো, আমি বিশ্বাস করি না যে সরকার যা করছে তা সঠিক। তাই, আমি বুঝতে পারছি কেন আমরা এই অবস্থার মধ্যে আছি।’ ৩৪ বছর বয়সী নিতজান একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা। ইরান ও ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান সংঘাতের মধ্যে তিনি তেল আবিব থেকে দেশটির উত্তরাঞ্চলের হাইফায় স্থানান্তরিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আমরা যে শব্দ শুনতে পাচ্ছি, তা হামাস বা হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের শব্দের চেয়ে অনেক আলাদা। মনে হচ্ছে, যেন একটি ট্রাক আপনার মাথার ওপর দিয়ে একটি সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’ ইসরায়েলের অনেকেই দোকানে যাওয়া বা বাড়ির বাইরে প্রয়োজনীয় কাজ করার সময় ক্ষেপণাস্ত্রের কবলে পড়ার ভয়ে থাকেন। হামলার আগে সাইরেন বাজলেও দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তাদের আস্থা কমেছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, সংঘাতের প্রথম সপ্তাহে ইরানের হামলায় প্রায় ২৪ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। সেখানে ২ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। অন্যদিকে, ইরানি অধিকার গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইরানে কমপক্ষে ৬৫৭ জন নিহত হয়েছেন। তেল আবিবে বসবাসকারী একজন শিক্ষিকা ওরিয়েলা ইউরোনিউজকে বলেছেন, তিনি ক্লান্ত বোধ করছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো রাত নেই, দিন নেই। আপনার মাথা উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতায় ভরা। কারণ, আপনি মানসিকভাবে ক্লান্ত, আমরা বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধে আছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি যুদ্ধ পছন্দ করি না, আমি কূটনৈতিক সমাধানে বিশ্বাস করি। আমার মনে হয়, ইরানের সঙ্গে আমাদের এটা করার চেষ্টা করা উচিত। মানুষ এত কষ্ট ভোগ করছে এবং কেন? বারবার যুদ্ধ, বারবার, আবার’ বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন ওরিয়েলা।

ইসরায়েলে ঢুকল অস্ত্রবাহী এক ডজন জার্মান ও মার্কিন বিমান

ইরানের হামলায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটি ইরানের হামলা ঠেকাতে ক্রমশ ব্যর্থ হয়ে পড়ছে। ইসরায়েলের আয়রন ডোম ও আকাশ প্রতিরক্ষা ফাঁকি দিয়ে একের পর এক মূল ভূখণ্ডে আছড়ে পড়ছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র-জার্মান থেকে সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ইসরায়েলে নামছে এক ডজনের বেশি বিমান। শুক্রবার (২০ জুন) মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, ইরানের সঙ্গে চলমান সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি থেকে ১৪টি সামরিক কার্গো বিমান ইসরায়েলে এসে পৌঁছেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বৃহস্পতিবার দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়, এসব বিমান সামরিক সরঞ্জাম ও রসদ বহন করছে, যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ‘অপারেশনাল প্রস্তুতি’ জোরদারে সহায়তা করবে। এই চালানটি ১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর গঠিত আকাশ ও সমুদ্রপথে সহায়তা চ্যানেলের অংশ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৮০০টিরও বেশি সামরিক কার্গো বিমান ইসরায়েলে এসেছে। তবে এসব বিমানে কী ধরনের সরঞ্জাম এসেছে, সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির পক্ষ থেকেও এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি। গত শুক্রবার (১৩ জুন) থেকে সংঘাতে জড়ায় ইরান-ইসরায়েল। এ সময়ে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালায়। এর জবাবে ইরান পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানি হামলায় এখন পর্যন্ত দেশটিতে কমপক্ষে ২৫ জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইরানের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৩৯ জন নিহত এবং এক হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।

লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহ কমান্ডার নিহত

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ড্রোন হামলায় দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর এক কমান্ডারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। আইডিএফ সূত্র জানিয়েছে , শুক্রবার ভোরে দক্ষিণ লেবাননের টায়ার জেলার আল-আব্বাসিয়েহ শহরে লিতানি নদী এলাকায় একটি গাড়িতে ড্রোন হামলায় হিজবুল্লাহর ফায়ারপাওয়ার ইউনিটের কমান্ডার মোহাম্মদ খাদের আল-হুসেইনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, নিহত হুসেইনি সাম্প্রতিক সংঘাতে উত্তর ইসরায়েলের নাহারিয়া, হাইফা এবং অন্যান্য শহরগুলোতে অসংখ্য রকেট হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সম্প্রতি তিনি হিজবুল্লাহর রকেট আর্টিলারি ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় জড়িত ছিলেন বলেও জানায় আইডিএফ।

যুক্তরাষ্ট্র কোনো যুদ্ধেই বিজয় পায়নি: ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী

ইরানের সঙ্গে চলমান সংঘাত নিয়ে ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে কোনো হস্তক্ষেপ করতে চায় না। কেননা ওয়াশিংটন যে যুদ্ধেই অবতীর্ণ হয়েছে, সেখানে কোন বিজয় অর্জন করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। এবং ইসরায়েল একা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে পারবে না। সম্প্রতি ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) ইসরায়েলের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক এসব কথা বলেছেন। সিএনএন-এর সাংবাদিক ক্রিশ্চিয়ান আমানপুরের সঙ্গে কথা বলার সময় বারাক বলেন, তেহরানের কর্মসূচি আটকে রাখার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের ক্ষমতা সীমিত। তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে ইসরায়েল একা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে উল্লেখযোগ্য সময়ের জন্য বিলম্বিত করতে পারবে না। সম্ভবত কয়েক সপ্তাহ বা এক মাস, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও তাদের কয়েক মাসের বেশি বিলম্বিত করতে পারে না।’ ‘তবে এর অর্থ এই নয় যে, তাদের কাছে (একটি পারমাণবিক অস্ত্র) থাকবে। সম্ভবত তারা এখনও নির্দিষ্ট অস্ত্র তৈরি সম্পন্ন করতে তৎপর, অথবা একটি অপরিশোধিত পারমাণবিক ডিভাইস তৈরি করে মরুভূমির কোথাও পরীক্ষা চালিয়ে পুরো বিশ্বকে দেখাতে পারে। এতে করে দেশটি নিজেদের সক্ষমতার অস্তিত্বের জানান দেবে।’ বারাক বলেন, সামরিক হামলা ‘সমস্যাজনক’ হলেও ইসরায়েল এই পদক্ষেপকে ন্যায্য বলে মনে করে। ‘অলস বসে থাকার চেয়ে তাদের কিছু করতে হবে। সম্ভবত মার্কিনিদের সঙ্গে আমরা আরও কিছু করতে পারি।’ ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অগ্রগতি থামাতে একটি বড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে, অথবা শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন হবে। আর এজন্য তাদের উপর পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে হবে। এমন পদক্ষেপে ওয়াশিংটনের আগ্রহ আছে বলেও মনে করেন তিনি।

ইরানের পাল্টা মিসাইল হামলায় কাঁপছে ইসরায়েল

ইসরায়েলে এবার নতুন মিসাইল ছুড়েছে ইরান। দেশটির তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংস এবং সামরিক বাহিনীর এক কমান্ডারকে হত্যার দাবির পর এ হামলা হয়েছে। শুক্রবার (২০ জুন) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স এক পোস্টে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরান থেকে একগুচ্ছ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। আকাশ প্রতিরক্ষা এসব হামলা ঠেকাতে সক্রিয় হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স এক পোস্টে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরান থেকে একগুচ্ছ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। আকাশ প্রতিরক্ষা এসব হামলা ঠেকাতে সক্রিয় হয়েছে। এছাড়া বাসিন্দাদের নিরাপদ এলাকায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, ইরানের হামলায় দেশজুড়ে বিমান হামলার সাইরেন বাজছে। এর আগে ইরান থেকে নতুন করে ড্রোন হামলা চালানোর পর তার আটক করেছে ইসরায়েল। অধিকৃত গোলান হাইটসে এই হামলার পর সাইরেন বাজানো হয়েছে। এ সময় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিভিন্ন এলাকায় সতর্কতা ব্যবস্থা চালু করে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জানান যে তাদের বাহিনী অধিকৃত গোলান অঞ্চলে বিমান হামলার সাইরেন বাজানোর সময় একটি ড্রোন আটক করেছে। এদিকে ইরানের তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংস এবং সামরিক বাহিনীর এক কমান্ডারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। শুক্রবার (২০ জুন) এক বিবৃতিতে আইডিএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাজধানী তেহরান এবং অন্যান্য শহরে ১২৫ মিনিটব্যাপী বিমান অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী (আইএএফ)। আইএএফের ৫০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান এ অভিযানে অংশ নিয়েছিল। সূত্রঃ আলজাজিরা

আইআরজিসির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন খামেনি: রিপোর্ট

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস (আইআরজিসি) এর সর্বোচ্চ পরিষদের কাছে যুদ্ধকালীন ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ইরান ইন্টারন্যাশনাল। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লাভিজানের একটি গোপন বাঙ্কারে সপরিবারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে খামেনিকে। তার সঙ্গে তার প্রভাবশালী ছেলে মোজতবা খামেনিও রয়েছেন। সম্প্রতি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লিখেছেন, আমরা জানি তথাকথিত ‘সুপ্রিম লিডার’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি সহজ টার্গেট, তবে আপাতত তাকে হত্যা করা হবে না। কিন্তু আমাদের ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই না বেসামরিক মানুষ বা আমেরিকান সৈন্যদের দিকে আর কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হোক। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষমতা হস্তান্তরের এ পদক্ষেপ একটি সম্ভাব্য ‘প্রি-এম্পটিভ ট্রান্সফার অব অথরিটি’, যার মাধ্যমে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কমান্ড কাঠামো অক্ষুণ্ন রাখা যাবে, যদি খামেনি নিহত হন। ইসরাইল-ইরান চলমান সংঘাতের অষ্টম দিনে উভয় পক্ষ একাধিক হামলা ও পাল্টা হামলায় জড়িয়েছে। ইসরাইলের একাধিক আক্রমণে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং এর পাল্টা জবাবে ইরানও ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। শুক্রবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান ইসরাইলের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরাইল যদি হামলা অব্যাহত রাখে, তাহলে ইরান আগের চেয়ে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে। ইরানি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা সবসময় শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথ অনুসরণ করেছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তি কেবল তখনই সম্ভব, যখন জায়নবাদীরা সন্ত্রাসী আগ্রাসন বন্ধ করবে এবং স্থায়ীভাবে তা বন্ধ রাখার গ্যারান্টি দেবে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ

সাপ্তাহিক জুমার নামাজের পর ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ইরানের ক্ষমতাসীন সরকার ও নেতাদের সমর্থনে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়। শুক্রবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপের হুমকির বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত খবরে বলা হয়, ‘‘আজকের শুক্রবার ইরানি জাতির ঐক্য ও প্রতিরোধের দিন।’’ প্রচারিত ভিডিওতে বিক্ষোভকারীদের হাতে ১৩ জুন ইসরায়েলের হামলায় নিহত বিভিন্ন কমান্ডারের ছবি দেখা যায়। এ সময় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকে ইরান, ফিলিস্তিন ও হিজবুল্লাহর পতাকাও উড়াচ্ছিলেন। একজন বিক্ষোভকারীর হাতে থাকা ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘‘আমি আমার নেতার জন্য জীবন উৎসর্গ করব।’’ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এই ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, রাজধানী তেহরান ছাড়াও দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজ এবং দক্ষিণের শিরাজেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতে জড়াবে না, ধারণা ৬০ শতাংশ মার্কিনির

চলমান ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়ানো নিয়ে তর্কবির্তকের শেষ নেই। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে সংঘাতে জড়ানো আগুনে ঘি ঢেলেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে এ সংঘাতে দেখতে চান না মার্কিনিদের একটা বিরাট অংশ। খোদ ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকানরাও যুদ্ধের বিরোধী। সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়ানো নিয়ে একটি জরিপ চালানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিস্ট বা ইউগভ এ জরিপ চালায়। জরিপে অংশ নেওয়া ১৬ শতাংশ মার্কিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এ সংঘাতে জড়াবে। পক্ষান্তরে ৬০ শতাংশ মনে করেন, সংঘাতে জড়াবে না। আর ২৪ শতাংশ বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। দলের হিসাবে ৬৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট, ৬১ শতাংশ স্বাধীনচেতা রাজনীতিক ও ৫৩ শতাংশ রিপাবলিকান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়ানোর বিরোধী। জরিপটিতে অংশ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ১ হাজার ৫১২ প্রাপ্ত বয়স্ক। এদিকে ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য মার্কিন হামলার ইঙ্গিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধে জড়ানোর শঙ্কায় তাঁর ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ (মাগা) শিবিরের অনেকেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পেছনে এ শিবিরের বড় ভূমিকা ছিল। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালী কিছু রিপাবলিকান নেতাও তাঁর এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। অনুরোধ করছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে এ যুদ্ধে না জড়াতে। এই ঘনিষ্ঠজন ও নেতাদের মধ্যে রয়েছেন প্রেসিডেন্টের সাবেক শীর্ষ উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননও। তিনি বরাবরই ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ দর্শনের অন্যতম মুখ। ট্রাম্প প্রশাসনের ইরানবিষয়ক নীতির হঠাৎ মোড় ঘুরে যাওয়ায় তাঁরই সমর্থক ‘মাগা’ শিবিরের রক্ষণশীল অংশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও ট্রাম্প যেখানে ইরানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক সমঝোতার কথা বলছিলেন, এখন সেখানে ৩০ হাজার পাউন্ডের মার্কিন ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ব্যবহার আলোচনায় আসছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানবিরোধী পদক্ষেপে গেলে ট্রাম্প তাঁর নিজের শক্তিশালী শিবিরের বিরোধিতার মুখে পড়তে পারেন। এ সমর্থক শিবির মূলত তাঁর পররাষ্ট্রনীতি-সংক্রান্ত সতর্কতা ও যুদ্ধবিরোধী অবস্থানকে সমর্থন করেই পাশে ছিল। ইরান ইতোমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি হামলায় জড়ায়, তবে এর জন্য মার্কিনিদের চড়া মূল্য দিতে হবে। যদিও সেই মূল্য কী হবে, তা স্পষ্ট করেনি তেহরান।ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়ালে, সেটি হবে বৈদেশিক ঝামেলায় যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে ট্রাম্পের সতর্ক থাকার নীতির বিপরীত। সংবিধান অনুযায়ী, তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে না পারলেও ২০১৬ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হতে সাহায্য করা ‘মাগা’ জোট ট্রাম্পের জন্য এখনও গুরুত্বপূর্ণ। এ জোটের মনোভাব ক্ষুণ্ন হলে তাঁর জনপ্রিয়তায় ধস নামতে পারে, যা ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। খবর আনাদোলুর।

‘হতাশ’ নেতানিয়াহু, ট্রাম্পকে দ্রুত যুদ্ধের মাঠে চান: বিশ্লেষক

ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ-এর কলাম লেখক ও বিশ্লেষক গিডিওন লেভি বলেছেন, ইরান-ইসরাইল সংঘাত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ট্রাম্প কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারেন এ ইঙ্গিতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার জোট গভীর হতাশায় পড়ছেন। কারণ নেতানিয়াহু চান, ট্রাম্প যেন যত দ্রুত সম্ভব এই যুদ্ধে যুক্ত হন। গিডিওন লেভি আল-জাজিরাকে বলেন, এই বাস্তবতায় দুই সপ্তাহ মানে অনন্তকাল। যদি ট্রাম্প সত্যিই দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে চান এবং এটা কোনো ছলচাতুরী না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের এ যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। লেভি আরও বলেন, ইসরাইল যদি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় ব্যাপক ক্ষতি করতে সক্ষমও হয়, তবু দীর্ঘ মেয়াদে ইসরাইল নিজেদের আরও নিরাপদ ভাবতে পারবে না। এই বিশ্লেষক বলেন, ‘কিছুই সমাধান হবে না, কারণ ইরান তার সক্ষমতা পুনরায় অর্জন করতে পারবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ইসরাইলের আরও অনেক নিরাপত্তা সমস্যা রয়েছে, যেগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে না- যেমন গাজা। গত ১৩ জুন শুরু হয় অষ্টম দিনে গড়িয়েছে ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ। এ পর্যন্ত দু’দেশের অনেক মানুষ হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত, দাবি ইসরায়েলের

ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি ভবনে হামলায় দেশটির এক পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম। শুক্রবার (২০ জুন) ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম ‘কান’-সহ একাধিক সূত্র এ খবর প্রকাশ করেছে। তবে এ ঘটনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত ইরান সরকার কিংবা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। ফলে স্বাধীনভাবে তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, তেহরানে যে ভবনে হামলা চালানো হয়, সেখানে ওই বিজ্ঞানী একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও নিহত বিজ্ঞানীর নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহ থেকে ইসরায়েল ইরানে ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে আসছে। জবাবে ইরানও পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলে। এরই অংশ হিসেবে কয়েকজন ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে ইসরায়েলি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি স্থবির করে দিতে ইসরায়েল লক্ষ্যভিত্তিক এ হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। এদিকে ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইতোমধ্যে শত শত মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন। এ অবস্থায় তেহরানে পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হওয়ার ঘটনা নতুন করে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জনসমক্ষেই ট্রাম্পের সাহায্য চাইলেন ইসরায়েলিরা

অপারেশ ‘রাইজিং লায়ন’-এর অংশ হিসেবে গত ১৩ জুন শুরু হওয়া ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) শীর্ষ নেতারা এবং পরমাণু কর্মসূচিতে যুক্ত প্রধান বিজ্ঞানীদের টার্গেট করে হামলা চালায়। ইরানও ড্রোন, মিসাইলসহ অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে জবাব দিতে শুরু করে। এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনা তৈরি করেছে। আঞ্চলিক এই সংঘাতে বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলোও জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলের এই মুহূর্তে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ ইউরোপে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সীমান্তে ভিড় করছেন। আল জাজিরার খবর অনুযায়ী, ইরানের হামলায় ৮ হাজারের বেশি ইসরায়েলি ঘরবাড়িছাড়া হয়েছেন। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি ইসরায়েলি। এই পরিস্থিতিতে দেশটিতে এখন দুটি জিনিস লক্ষ করা গেছে। ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে নিষিদ্ধ হওয়ায় আল জাজিরা জর্ডান থেকে এক প্রতিবেদন এ দুটি বিষয় জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী, সামরিক গোয়েন্দা, দেশটির মন্ত্রীরা সবাই নিজেদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের ছবি আঁকতে মরিয়া। কারণ তাদের আছে চৌকস বিমান বাহিনী, যারা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম এবং ইরানের আকাশসীমার ওপর গিয়ে প্রায় অবাধে উড়তে সক্ষম। অন্যদিকে এই যুদ্ধে ইসরায়েলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নিয়েও গুরুতর বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সেটা হলো যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ না করে এবং ইরানে আঘাত না করে, তবে এ যুদ্ধ হতে পারে দীর্ঘ। সম্প্রতি তেল আবিবের বিভিন্ন সড়কে বিলবোর্ডের দেখা মিলেছে, যেখানে যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে লেখা : ‘মি. প্রেসিডেন্ট, ফিনিশ দ্য জব’। তার মানে ইরান ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দ্রুত কাজ শেষ করার আহ্বান জানান ইসরায়েলের নাগরিকরা। এদিকে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইসরায়েলের দক্ষিণে ইরানের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতাল পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলের অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেন তিনি। এটাকে ‌‘অবিশ্বাস্য’ বলেও অভিহিত করেছেন এই ইহুদিবাদী নেতা। এ সময় চলমান সংঘাত কত দিন স্থায়ী হবে, সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি তা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তবে সপ্তাহ, এমনকি মাসও লাগতে পারে বলে জানান। সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য জড়িত থাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটি প্রেসিডেন্টের (ট্রাম্প) সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। কিন্তু তারা ইতোমধ্যেই অনেক সাহায্য করছে। কারণ এই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত খুবই ব্যয়বহুল হবে, জড়িত সবার পক্ষে সহ্য করা খুবই কঠিন।’ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু ছিলেন কিনা জানতে চাইলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘কেউই নিরাপদ নয়’। আল জাজিরার জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা মনে করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো এখনো দুই সপ্তাহের ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই ইরানে হামলা চালাতে পারেন। বিশারা বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) এই সময়সীমাকে হয়তো একটা কৌশল বা ছল হিসেবে ব্যবহার করছেন, যাতে তার আসল পরিকল্পনা আড়াল থাকে এবং তিনি হয়তো আগামীকালই সেই হামলা চালাতে পারেন।’

তেহরানে হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলা, ভয়াবহ জবাবের হুঁশিয়ারি ইরানের

এক সপ্তাহ ধরে চলমান হামলা-পাল্টা হামলার মাঝে ইরানের রাজধানী তেহরানের আরেকটি হাসপাতালে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার এই তথ্য জানিয়েছেন। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান এক বিবৃতিতে বলেছেন, এ নিয়ে তৃতীয় হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রও নির্মমভাবে ইহুদিবাদী শত্রুদের আক্রমণের শিকার হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা ইরনায় প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘গত সাত দিনে কাপুরুষোচিত আগ্রাসনের মাঝে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি লঙ্ঘনের ছয়টিরও বেশি ঘটনা ঘটিয়েছে।’’ ইরানের প্রেসিডেন্টের কঠোর হুঁশিয়ারি এদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাতের অবসানের বিষয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, সংঘাত অবসানের একমাত্র উপায় হলো ইসরায়েলের বিমান হামলা বন্ধ করা। ইরানের গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সবসময় শান্তি ও স্থিতিশীলতার নীতি বজায় রাখি।’’ মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থায়ী শান্তি কেবল তখনই সম্ভব, যখন ইহুদিবাদী শত্রুরা তাদের আগ্রাসন বন্ধ করবে এবং সন্ত্রাসবাদী উসকানি দেওয়া থেকে বিরত থাকার বিশ্বাসযোগ্য নিশ্চয়তা দেবে।’’ ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়ে ইরানের এই প্রেসিডেন্ট বলেন, যদি তারা তা না করে, তাহলে ইরান আরও শক্তিশালী ও ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হবে। মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, শত্রুর আগ্রাসন নিঃশর্তভাবে বন্ধ এবং ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অভিযান চিরতরে অবসানই আরোপিত এই যুদ্ধ বন্ধের একমাত্র পথ।’’ অন্যথায় শত্রুদের প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া আরও বেশি গুরুতর এবং ভয়াবহ হবে, বলেও হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন তিনি। সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরানি প্রেসিডেন্ট। সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা।

ইরানি হামলায় গৃহহীন ৮ হাজারের বেশি ইসরায়েলি

চলমান সংঘাতে গত এক সপ্তাহে ইসরায়েলজুড়ে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলায় আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে আট হাজারের বেশি ইসরায়েলি গৃহহীন হয়ে পড়েছেন, এরমধ্যে অধিকাংশই রাজধানী তেল আবিবের বাসিন্দা। খবর আলাজাজিরার। শুক্রবার (২০ জুন) ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়েদিয়োথ আহরোনোথের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ইসরায়েলি সম্পত্তি কর ক্ষতিপূরণ তহবিলের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই ইরানি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবন বা যানবাহনের ক্ষতিপূরণের জন্য প্রায় ৩০ হাজার আবেদন জমা হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজ এক প্রতিবেদনে জানায়, ইরানের হামলায় ইসরায়েলের বহু মানুষ হতাহত হয়েছে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে এসব তথ্য গোপন রাখতে উঠে পড়ে লেগেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সরকারি দফতর ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ গোপন রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ বিষয়ে ইসরায়েলের সামরিক সেন্সর অফিস একাধিকবার সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছবি বা তথ্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাসনিমের দাবি, আল-কুদস (জেরুজালেম), তেল আবিবসহ বেশ কয়েকটি দখলকৃত শহরে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানে। এতে বহু ভবন ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি আরও দাবি করে, ইরানের ছোড়া অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি কিছু প্রতিরক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র নিজের ভূখণ্ডেই ভেঙে পড়েছে, যেগুলোর কারণে শহরগুলোতে বাড়তি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সমঝোতা করতে ইরানকে বারবার অনুরোধ করছে যুক্তরাষ্ট্র

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার প্রেক্ষাপটে ইরানকে বারবার সমঝোতার প্রস্তাব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এসব প্রস্তাব দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে তেহরান। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। খবর আনাদোলু এজেন্সির। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৯ জুন) রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আরাগচি জানান, ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে একাধিক ‘গুরুত্বপূর্ণ ও আন্তরিক বার্তা’ ইরানের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি ‘ইসরায়েলের আগ্রাসনের অংশীদার’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের বলার কিছু নেই।‘ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে কোনো আলোচনার প্রশ্নই আসে না। এটি আমাদের আত্মরক্ষার অধিকার। কোনো সুস্থবুদ্ধিসম্পন্ন দেশই নিজের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়ে আলোচনায় বসে না।’ আরাগচি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেন, ‘ইসরায়েলি হামলা যতদিন চলবে, ততদিন ইরান কারও সঙ্গেই কোনো আলোচনা করবে না।’ তবে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। তার নেতৃত্বে জেনেভায় একটি কূটনৈতিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে অংশ নেবেন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান কায়া কালাস। ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আরাগচি বলেন, আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি সুনির্দিষ্ট, প্রতিরক্ষামূলক এবং নৈতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে পরিচালিত। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী কেবল সামরিক ও অর্থনৈতিক স্থাপনাগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু বানায়। আমরা কখনোই আবাসিক ভবন, হাসপাতাল বা বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালাই না। প্রসঙ্গত, ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর থেকে দুই দেশের এই সংঘাত শুরু হয় গত সপ্তাহে, যখন ইসরায়েল একযোগে ইরানের বেশ কয়েকটি সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে তেহরানও ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যা এখনো চলমান। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত এবং কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছেন। অপরদিকে, ইরানি গণমাধ্যমের দাবি, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে ৬৩৯ জন নিহত এবং ১,৩০০-র বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার বিপর্যয় ডেকে আনবে: রাশিয়া

ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের সম্ভাব্য ব্যবহারে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভের বরাত দিয়ে রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা তাসের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ইরানে যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত পারমাণব্কি অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলে গত কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের জল্পনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। গণমাধ্যমের এমন প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই মন্তব্য করেছেন পেসকভ। তাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র এই বিষয়ে মন্তব্য করলেও কোনও সংবাদমাধ্যমের নাম উল্লেখ করেননি। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের ভূগর্ভস্থ ফোরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার কাজে প্রচলিত বোমা কার্যকর হবে না বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ব্রিফ করা হয়েছে। ওই স্থাপনা ধ্বংস করতে হলে প্রথমে প্রচলিত বোমা দিয়ে হামলা চালাতে হবে এবং তারপর বি-২ বোমারু বিমান থেকে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ফেলতে হবে। তবে ব্রিটিশ এই দৈনিক বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফোরদোতে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাবছেন না। এছাড়া হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন এই বিষয়ে কোনও প্রস্তাব দেননি। এর আগে বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং সরায়েলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে মস্কো। সূত্র: রয়টার্স।

বিশ্বে শিশু হতাহতের ২০ শতাংশই ঘটিয়েছে ইসরায়েল: জাতিসংঘের প্রতিবেদন

শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সম্পর্কিত জাতিসংঘের বার্ষিক প্রতিবেদনে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো যুক্ত হলো ইসরায়েলের নাম। শিশু হত্যা, পঙ্গুত্ব, স্কুল ও হাসপাতালের ওপর হামলা এবং শিশুদের সশস্ত্র সংঘাতে নিয়োগ—এসব গুরুতর লঙ্ঘনের প্রমাণ থাকার ভিত্তিতেই তাদের এই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। জাতিসংঘের স্বাধীন যাচাইয়ের ভিত্তিতে তৈরি করা হয় এই প্রতিবেদন। ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ৪১ হাজার ৩৭০টি ঘটনা নথিভুক্ত করতে পেরেছে জাতিসংঘ, যার মধ্যে ৮ হাজারের বেশি ঘটিয়েছে ইসরায়েল। অর্থাৎ, বৈশ্বিকভাবে মোট সহিংসতার প্রায় ২০ শতাংশের জন্যই দায়ী ইসরায়েল। প্রতিবেদনের অনুষঙ্গে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী শিশুদের হত্যা ও পঙ্গু করে এবং স্কুল ও হাসপাতালে হামলা চালানোর মাধ্যমে কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সব মানদণ্ড পূরণ করেছে। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো শিশু অধিকার লঙ্ঘনের তালিকায় ইসরায়েলের নাম যুক্ত করে জাতিসংঘ। তবে, বহু বছর ধরেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপকর্মের যথেষ্ট প্রমাণ ছিল। অনেকের মতে, রাজনৈতিক চাপের কারণে এতদিন তাদের তালিকাভুক্ত করতে পারেনি জাতিসংঘ। অবশেষে সেই নীতিগত স্থবিরতা ভেঙে ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের নাম যুক্ত করা হয়। এবার, ২০২৪ সালেও সেই অবস্থানেই আছে ইসরায়েল। এদিকে, গাজা নিয়ে আরেকটি গভীর উদ্বেগজনক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ। তারা বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে কয়েকবার করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে গাজার বেশির ভাগ মানুষ, যা ১৯৪৮ সালের ‘নাকবা’র (আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘বিপর্যয়’) সঙ্গে তুলনীয়। সংস্থাটির ভাষ্যমতে, ৭৭ বছর পরও ফিলিস্তিনিরা নিয়মিত উচ্ছেদের শিকার হচ্ছে। তাদের মতে, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে যেভাবে ঘরছাড়া করা হয়েছিল, বর্তমানেও গাজায় তেমনি আরেকটি মানবিক বিপর্যয় ঘটছে।

ইরানের ৩ মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংস, কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের

ইরানের তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংস এবং সামরিক বাহিনীর এক কমান্ডারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। শুক্রবার এক বিবৃতিতে আইডিএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাজধানী তেহরান এবং অন্যান্য শহরে ১২৫ মিনিটব্যাপী বিমান অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী (আইএএফ)। আইএএফের ৫০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান এ অভিযানে অংশ নিয়েছিল। সেই অভিযানে ধ্বংস করা হয়েছে এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলো। একই অভিযানে নিহত হয়েছেন ওই কমান্ডারও।” ধ্বংস হওয়া ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলোর অবস্থান কোথায়— সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি বিবৃতিতে। তেমনি নিহত ওই কমান্ডারের নাম-পরিচয়ও জানা যায়নি। তবে আইডিএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিহত ওই কমান্ডার ধ্বংস হওয়া উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে কোনো একটিতে ছিলেন এবং ‘ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার’ প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ইসরায়েলের গতরাতের অভিযান নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু বলেনি তেহরান, তবে আজ শুক্রবার ভোর থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে দেশটি। সূত্র : আলজাজিরা

দুটি হাসপাতালে বোমা হামলা, কেন শুধু একটি শিরোনাম হলো?

সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ঘটে যাওয়া দুটি হৃদয়বিদারক ঘটনা বৈশ্বিক গণমাধ্যমের কাভারেজে এক অপ্রত্যাশিত বৈষম্য তুলে ধরেছে, যা অনেক ইরানিকে ক্ষুব্ধ করেছে। একদিকে, ইসরায়েলের বিরশেবা শহরের একটি হাসপাতালে বোমা হামলার খবর দ্রুত এবং ব্যাপক আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। অন্যদিকে, এর মাত্র তিন দিন আগে ইরানের কেরমানশাহ শহরের একটি হাসপাতালেও একই ধরনের হামলা চালানো হয়েছিল, অথচ সেটি বিশ্বের নজরে আসেনি বললেই চলে। এই আকাশ-পাতাল পার্থক্যের একটি বড় কারণ হলো গণমাধ্যমে প্রবেশাধিকার ও স্বচ্ছতা। ইসরায়েল বিদেশি সাংবাদিকদের দ্রুত ঘটনাস্থলে প্রবেশাধিকার দেয়, তাদের ব্রিফ করে এবং মুক্তভাবে সংবাদ পরিবেশনের সুযোগ করে দেয়। ফলে হতাহতের সংখ্যা এবং ঘটনার নিয়মিত আপডেট দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এর বিপরীতে, ইরান সরকার সাংবাদিকদের আটকে রাখে, দেশের অভ্যন্তরীণ গণমাধ্যমের ওপর কঠোর সেন্সরশিপ আরোপ করে এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার সীমিত করে। এর ফলস্বরূপ, কেরমানশাহের ঘটনার ক্ষেত্রে কেবল অস্পষ্ট এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পাওয়া অর্থাৎ বেসরকারি সূত্র থেকে যে ভিডিও পাওয়া যায়, সেগুলোই খবরের উৎস হয়ে দাঁড়ায়। ইসরায়েলি হামলার দুদিন পর ইরান সারাদেশে ২২৪ জন নিহতের তথ্য দিলেও, স্থান অনুযায়ী কোনো বিস্তারিত বিশ্লেষণ দেওয়া হয়নি। কেরমানশাহর হাসপাতালটি আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেও আর কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়নি। গণমাধ্যমে প্রবেশাধিকার এবং স্বচ্ছতার অভাবে ইরানের অনেক মর্মান্তিক গল্প হারিয়ে যাচ্ছে। শোকাহত পরিবারগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করছে বটে, কিন্তু ব্যক্তিগত পোস্ট কখনো পরিকল্পিত সংবাদ কাভারেজের বিকল্প হতে পারে না। যুদ্ধের সময়ে যখন বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গিই প্রতিক্রিয়ার গতিপথ নির্ধারণ করে, তখন কেরমানশাহর চারপাশে এই নীরবতা ইঙ্গিত দেয় যে, সেন্সরশিপ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একঘরে হয়ে যাওয়ার ফলে কত ভয়াবহ ঘটনাও বিশ্বের দৃষ্টির আড়ালে থেকে যেতে পারে। সূত্র- বিবিসি বাংলা

ইসরায়েলে মাইক্রোসফট-এর কার্যালয় ঘিরে হামলা, যা জানাল ইরান

ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বীরশেবায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মাইক্রোসফটের কার্যালয়ের কাছাকাছি এলাকায় আগুন ধরে যায়। এতে সেখানে কয়েকটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুক্রবার (২০ জুন) সকালেসংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফায়ার সার্ভিস ও প্যারামেডিক টিম ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ চালায়। এ পর্যন্ত পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে এবং তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।ধারণা করা হচ্ছে, ইরান আবারও গাভ-ইয়াম অ্যাডভান্সড টেকনোলজি পার্ক লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ইরানি কর্মকর্তারা এর আগের দিন জানিয়েছিলেন, এই প্রযুক্তি পার্ক লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হচ্ছিল, কিন্তু তখন কাছাকাছি সরোকা হাসপাতাল আক্রান্ত হয়। সংবাদমাধ্যম বিবিসিতে শুক্রবার (২০ জুন) প্রকাশিতপ্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে। এদিকে, চলমান সংঘাতে প্রথমবারের মতো প্রাণঘাতী অস্ত্র ‘ক্লাস্টার বোমা’ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। ইসরায়েলের অভিযোগ, ইরান যেসব প্রাণঘাতী ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে, তা বেসামরিক মানুষের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচিত, কারণ যুদ্ধ শেষ হওয়ার বহু পরেও এগুলো বিস্ফোরিত না হয়ে মাটির নিচে থেকে যেতে পারে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরান অন্তত একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে যা আকাশে বিস্ফোরিত হয়ে ছোট ছোট বোমা ছড়িয়ে দেয়-এর উদ্দেশ্য ছিল বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি বাড়ানো। সাত দিন ধরে চলা এই সংঘাতে এটাই প্রথম ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের অভিযোগ। গত শুক্রবার (১৩ জুন) থেকে ইসরায়েল ও ইরান একে অপরের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা অব্যাহত রেখেছে।

যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জড়ালে নরক নেমে আসবে: ইরান

ইরানে হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যোগ দিলে তা সমগ্র অঞ্চলে নরক নেমে আসবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধে নিজেকে জড়িয়ে ফেললে তা হবে পঙ্কিলময়। এতেগোটা অঞ্চলই নরকে পরিণত হবে। বৃহস্পতিবার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। সাঈদ খতিবজাদে বলেছেন, ‘এটা আমেরিকার যুদ্ধ নয়। যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধে জড়ান তাহলে ইতিহাস তাকে মনে রাখবে এমন একজন প্রেসিডেন্ট হিসাবে যিনি একটি যুদ্ধে নাম লিখিয়েছেন, যা তার যুদ্ধছিল না।’ ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা এই সংঘাতকে একটি জটিল ফাঁদে পরিণত করবে। এতে আগ্রাসন চলতে থাকবে। নৃশংস নির্যাতনের অবসান আরও বিলম্বিত হবে। সাক্ষাৎকারে খতিবজাদেহ বলেন, ইরান কূটনীতি চায়। কিন্তু তার দেশের বিরুদ্ধে বোমাবর্ষণ অব্যাহত থাকলে কেউ আলোচনায় যেতে পারবে না। যে মুহূর্তে এই আগ্রাসন বন্ধ হবে, অবশ্যই কূটনীতিই হবে প্রথম বিকল্প। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরান পারমাণবিক চুক্তির দ্বারপ্রান্তে ছিল। কিন্তু সেই চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার আগেই নাশকতা চালিয়ে সুযাগ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল রোববার। কিন্তু শুক্রবার রাতে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালায়। এরপরই ইরান জানায়, ইসরায়েলের হামলার পর এই আলোচনার আর কোনও অর্থ হয় না। এদিকে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য আরও দুই সপ্তাহ সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিএনএনের খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন ল্যাভিট এ বিষয়ে ব্রিফিং করেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি বলেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রে ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ না করার বিষয়টি’ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের অবস্থান পুনরায় তুলে ধরে বলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেওয়া যাবে না। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৩ জুন ইরানে ইসরায়েলের অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত রাজধানী তেহরান ও অন্যান্য শহরে নিহত হয়েছেন মোট ৫৮৫ জন। এই নিহতদের মধ্যে ১২৬ জনকে সামরিক এবং ২৩৯ জনকে বেসামরিক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। ইসরায়েলের হামলা শুরুর পরের দিন ১৪ জুন নিহত ও আহতদের একটি পরিসংখ্যান জানিয়েছিল ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছিল, তেহরান ও আক্রান্ত অন্যান্য শহরে ২২৪ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৭৭ জন। যদিও ইরান সংঘাতের ঘটনায় নিয়মিত মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করেনি। সোমবার প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদে মৃতের সংখ্যা ২২৪ জন এবং আহতের সংখ্যা ১২৭৭ জন বলে জানানো হয়েছে।

ফ্রান্স-জার্মানি-ব্রিটেন-ইইউ’র সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইরান

নিজেদের পরমাণু প্রকল্প এবং ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাত ঠেকাতে ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বৈঠকে বসছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি। আজ শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় হবে এ বৈঠক। আব্বাস আরাগচির সঙ্গে এ বৈঠকে থাকবেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেন-নোয়েল ব্যারট, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াদেফুল, ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান কাজা কালাস। ইরান পরমাণু বোমা তৈরি করছে— অভিযোগ তুলে গত ১৩ জুন থেকে দেশটিতে বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। হামলায় ইতোমধ্যে ইরানের বেশ কয়েকজন প্রথম সারির সামরিক কমর্কর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও পরমাণু প্রকল্পের প্রধানসহ নিহত হয়েছেন ৬ শতাধিক মানুষ। ইসরায়েল অভিযান শুরুর পর পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইরানও। সেই হামলায় ইসরায়েলে নিহত ও আহত হয়েছেন ৫ শতাধিক। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেসামরিক ও শান্তিপূর্ণ খাতে পরমাণু শক্তির ব্যবহার সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ইরান। তবে ২০১৭ সালে প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘জ্যাকোপা’ নামের সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রেকে বের করে আনেন। গুরুত্বপূর্ণ সেই জ্যাকোপা চুক্তিতে সহযোগী দেশ হিসেবে স্বাক্ষর করেছিল জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং রাশিয়া। সূত্র : বিবিসি

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে পৌঁছতে কতক্ষণ সময় লাগে?

ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা লক্ষ্যবস্তু হওয়ার পর, পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে। এর অনেকগুলো প্রতিহত করা গেলেও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আঘাত হেনেছে, যার ফলে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে ইরানের হাতে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত রয়েছে—সংখ্যায় ৩,০০০-এরও বেশি। এর মধ্যে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র এতটাই দ্রুতগামী যে মাত্র ১২ থেকে ১৫ মিনিটেই ইসরায়েলে পৌঁছাতে পারে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, গত তিন দশকে ইরান একটি সুসংগঠিত এবং আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি গড়ে তুলেছে। এদের ক্ষেপণাস্ত্রসমূহ বিভিন্ন পরিসরের ও গতির, যেগুলো ভূমি, স্থল ও আকাশপথে চালানো সম্ভব। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের কাছে স্বল্প পাল্লার থেকে শুরু করে ২ হাজার কিমি এরও বেশি পাল্লার মিসাইল রয়েছে। কয়েক বছর আগে ইরানের একজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা দাবি করেন, ইসরায়েলকে মাত্র ৮ মিনিটের মধ্যে ধ্বংস করার সামর্থ্য রয়েছে তাদের। তিনি মূলত ইরানের হাইপারসনিক মিসাইলের গতিকে ইঙ্গিত করেন। জানা গেছে, ইরানের হাতে ফাত্তাহ-১ সিরিজের মধ্যম পাল্লার হাইপারসনিক মিসাইল রয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ম্যাক ১৫ গতিতে (শব্দের চেয়ে ১৫ গুন গতিতে) লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। চলমান ইরান ইসরায়েল সংঘাতে এই সিরিজের মিসাইল ব্যভহারও করেছে ইরান। এই মিসাইলের গতি হিসেব করলে ইরান মাত্র ৮ মিনিটেই ইসরায়েলে আঘাত হানতে সক্ষম। তবে, ইরান ইসরায়েলে হামলা চালাতে হাইপারসনিক মিসাইল ছাড়াও প্রচলিত মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বেশি ব্যবহার করছে। ইরানের এসব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ১২ থেকে ১৫ মিনিটেই ইসরায়েলে পৌঁছাতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও বলছেন, উচ্চ গতির কারণে এসব ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে আটকানো কঠিন, ফলে চলমান সংঘাতে ইরান অনেকটাই সফলতা পাচ্ছে।

যুদ্ধের জন্য নতুন সামরিক গোয়েন্দাপ্রধান নিয়োগ দিলো ইরান

নিজেদের সামরিক বাহিনীর এলিট ফোরাম ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)- এর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজিদ খাদামিকে নিয়োগ দিয়েছে ইরান। বৃহস্পতিবার আইআরজিসি’র শীর্ষ কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ পাকপৌর তার নিয়োগ চূড়ান্ত করেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা ইরনা। এই নিয়োগপ্রাপ্তির মাধ্যমে আইআরজিসির গোয়েন্দা ইউনিটের সাবেক প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মেদ কাজেমি-এর স্থলাভিষিক্ত হলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজিদ খাদামি। গত ১৩ জুন ইরানে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর (আইএএফ) অভিযান শুরুর ২ দিন পর ১৫ জুন নিহত হন মোহাম্মেদ কাজেমি। মাজিদ খাদেমিকে যিনি নিয়োগ দিয়েছেন, সেই মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ পাকপৌরও আইআরজিসির শীর্ষ কমান্ডার হয়েছেন মাত্র কয়েক দিন হলো। ইরানে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর অভিযান শুরুর দিনই নিহত হন আইআরজিসির সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি। তার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর মেজর জেনারেল পাকপৌরকে এই পদে নিয়োগ দেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। প্রসঙ্গত, ইরানের সামরিক বাহিনীর চেইন অব কমান্ডকে তছনছ করে দিতে হামলার শুরু থেকেই দেশটির উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের ‘টার্গেট’ করেছিল ইসরায়েল। গত ১৩ জুন থেকে ১৫ জুনের মধ্যে দেশটির বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডার ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তবে ইসরায়েলের উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হয়নি। কারণ হামলায় যেসব কমান্ডার নিহত হয়েছেন— অত্যন্ত দ্রুত তাদের শূন্যপদে নতুন নিয়োগ দিয়েছে তেহরান। সূত্র : এএফপি, এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের সম্মানিত মানুষদের আনন্দিত করেছে: খামেনি

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের সম্মানিত মানুষদের আনন্দিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা একটি ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি এই মন্তব্য করেছেন। শুক্রবার (২০ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। ওই ভিডিওর শুরুতে গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা ও বেসামরিক লোকজনের ওপর চালানো সহিংসতার দৃশ্য দেখা যায়। এরপর ভিডিওতে দেখানো হয়, ইসরায়েলের ওপর ইরানের নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর মানুষজন আনন্দ উদযাপন করছে এবং সেই হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে— “এমন ক্ষেপণাস্ত্র, যা বিশ্বের সম্মানিত ও মর্যাদাবান মানুষদের আনন্দ দিয়েছে।” ধারণা করা হচ্ছে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির এই বক্তব্য তাকে সমর্থনকারী জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে ফিলিস্তিন ও অন্যান্য মুসলিম দেশের জনগণের আবেগকে উসকে দিতেই প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া এটিকে একটি স্পষ্ট বার্তা বলেও মনে করা হচ্ছে যেখানে ইরান নিজেদের হামলাকে ‘ন্যায্য প্রতিক্রিয়া’ হিসেবেই তুলে ধরছে। আর আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির এক্স অ্যাকাউন্টে এই ভিডিও এমন এক সময় প্রকাশ পেল, যখন ইসরায়েল-ইরান সংঘাত ভয়াবহভাবে বিস্তার লাভ করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।