সাহসিকতার সঙ্গে লড়েছে ইরান: ডোনাল্ড ট্রাম্প

নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে ন্যাটো সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘ইরান সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে।’ ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পরিকল্পনা ওয়াশিংটনের আছে কিনা এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেছেন, ‘ইরান মাত্রই একটি যুদ্ধে ছিল এবং তারা সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে।’ খবর বিবিসি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যদি তারা তেল বিক্রি করতে যায়, তারা তেল বিক্রি করতে যাচ্ছে। চীন চাইলে ইরানের কাছ থেকে তেল কিনতে পারে। দেশটির (ইরানের) আবার ঠিক হওয়ার জন্য অর্থের প্রয়োজন।’ নেদারল্যান্ডসের হেগে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাট সম্মেলনে গিয়ে বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইরানকে এই হুঁশিয়ারি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান যদি ফের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালু করে তাহলে আবারও দেশটিতে হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র। ইরান আবার পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্র ফের হামলা করবে কিনা- সাংবাদিকের এই প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ‘অবশ্যই। আমি মনে করি না তারা আবার কখনও এটি (পামাণবিক কর্মসূচি) করবে।' খবর- টাইমস অব ইসরায়েল ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করবে। তারা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। তারা পরমাণু বোমা পাবে না। তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না।' ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে মার্কিন হামলাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমায় পরমাণু বোমা হামলার সঙ্গে তুলনা করে ট্রাম্প বলেন, সেই হামলার ফলে যুদ্ধ থেমেছিল। আমি হিরোশিমা-নাগাসাকির উদাহরণ দিতে চাই না। তবে ঘটনা একই। এর মাধ্যমেই যুদ্ধ থেমেছিল।' ন্যাটো সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, হামলার পর ইরান ঘটনাস্থলে গেছে। তারা বলেছে, স্থাপনাগুলো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আমরা কী করেছি সেটা দেখার পরই তারা স্থির হয়েছে। আমরা এটা না করলে তারা প্রচুর অস্ত্র তৈরি চালিয়ে যেত। তারা থামতো না। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর যে অবস্থা হয়েছে, তাতে সেগুলোতে পুনরায় কাজ শুরু করা কঠিন।

ইসরায়েলে আবারও হামলা

ইসরায়েলে আবারও ড্রোন হামলা হয়েছে। ইয়েমেন থেকে দেশটিতে এ হামলা চালানো হয়েছে। বুধবার (২৫ জুন) মেহের নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। আল জাজিরা জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে ড্রোন ছোড়া হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলের দিকে ড্রোন নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ সময় কোনো সতর্কীকরণ সাইরেন বাজানো হয়নি। ইসরায়েলি টিভি চ্যানেল ১২ দাবি করেছে, ইয়েমেনের এই ড্রোনটি আটকে করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার বিষয়ে ইয়েমেনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। এর আগে ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি হয়। গত সোমবার (২৩ জুন) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ শেয়ার করা এক পোস্টে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘ইরান ও ইসরায়েল একটি সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে চূড়ান্তভাবে সম্মতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই যুদ্ধবিরতি ১২ ঘণ্টা ধরে চলবে, এরপরই যুদ্ধকে সমাপ্ত হিসেবে ঘোষণা করা হবে।’ ট্রাম্প আরও জানান, প্রথমে ইরান যুদ্ধবিরতি শুরু করবে, এরপর ১২ ঘণ্টা পর ইসরায়েলও আনুষ্ঠানিকভাবে এতে যোগ দেবে। মোট ২৪ ঘণ্টা পর এই ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বিশ্বব্যাপী সমাপ্ত হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। তিনি লেখেন, যুদ্ধবিরতির সময় দুপক্ষই শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ বজায় রাখবে। আমরা ধরে নিচ্ছি, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলবে যা অবশ্যই হবে। এ জন্য আমি ইসরায়েল ও ইরান উভয় দেশকে সাহস, ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার জন্য অভিনন্দন জানাই।

ইরানে ৭ শতাধিক ইসরায়েলি গুপ্তচর গ্রেপ্তার

ইরানি গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনী দেশটিতে ইসরায়েলের ‘গুপ্তচর নেটওয়ার্কে’ যুক্ত থাকার অভিযোগে ৭০০-এর বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। ইতোমধ্যে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। ইরানের ফার্স সংবাদ সংস্থা ও রাষ্ট্র অধিভুক্ত নুরনিউজ জানিয়েছে, সন্দেহভাজনদের ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধের সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ইরানের ওপর ইসরায়েলের সামরিক হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলি গোয়েন্দা অভিযানও চলছিল, যে অভিযানে ইরানের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের লক্ষ্যবস্তু করে হত্যা করা হয়েছিল। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বরাবরই ইরান সরকারের পূর্ববর্তী গণগ্রেপ্তারের সমালোচনা করেছে, কারণ এসব ক্ষেত্রে প্রায়ই যথাযথ প্রক্রিয়ার অভাব দেখা যায়। আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার দায়ে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় বুধবার তাদের বিরুদ্ধে এই সাজা কার্যকর হয়। ইরানি বিচার ব্যবস্থার ক্রোড়পত্র মিযান বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত ওই ব্যক্তিরা ইরানের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে গোপনে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম চোরাচালানিতে যুক্ত ছিল। ওই কর্মকর্তার নাম বা অন্য কোনো বিস্তারিত তথ্য মিযান প্রকাশ করেনি। সাম্প্রতিক সংঘর্ষের আগে বহু বছর ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধে জড়িত ছিল ইরান। এ সময় মোসাদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা এবং ইরানের অভ্যন্তরে ইসরায়েলি স্বার্থ প্রতিষ্ঠায় জড়িত থাকার দায়ে অসংখ্য মানুষকে প্রাণদণ্ড দিয়েছেন ইরানি আদালত। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে দেশটির পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা থেকে শুরু করে পারমাণবিক কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড। ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করার সন্দেহে ইরানের খুজেস্তান প্রদেশে ২৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে। ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম এমন তথ্য প্রকাশ করেছে। তাসনিমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরাক সীমান্তঘেঁষা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আহভাজের সরকারি কৌঁসুলিরা এই ২৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড’ এবং ‘শত্রুর পক্ষে তথ্য সংগ্রহ ও প্রচার চালানোর’ মতো অভিযোগ এনেছেন। তবে স্বাধীন গণমাধ্যম বা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এসব অভিযোগ যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

‘ট্রাম্প শান্তির নামে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তির কথা বলছেন, একইসঙ্গে তার মিত্রদের সামরিক ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। ট্রাম্প শান্তির নামে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আর বিশ্ব তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছে। এমন মন্তব্য করেছেন কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক অধ্যাপক আদনান হায়াজনে। তিনি জানান, যেখানে উচিত ছিল কূটনীতির পথ বেছে নেয়া, অন্য দেশগুলোকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করা-সেখানে সবকিছুকে ছাপিয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সামরিক খাতে খরচ বাড়ানো। এই অধ্যাপক বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তির কথা বলছেন, একইসঙ্গে তার মিত্রদের- ন্যাটোভুক্ত সদস্যদের-সামরিক ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্পকে ‘শান্তির মানুষ’ হিসেবে প্রশংসা করা হলেও বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।’ তিনি সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, ‘ইরানে যে হামলা চালানো হয়েছে, সেটি এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথের সঙ্গে একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ট্রাম্প কূটনীতিকে সঠিক সময়ে প্রয়োগ করেননি।’ তার মতে, ‘ট্রাম্প চান প্রশংসিত হতে, প্রশংসা পেতে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আজকের দুনিয়া ট্রাম্পকে তুষ্ট করতেই ব্যস্ত। কেউ, কোনো ব্যক্তি, কোনো রাষ্ট্র—তার মতামতের বিরুদ্ধাচরণ করতে সাহস পাচ্ছে না। আর এটা বিশ্ববাসীর জন্য মোটেই ভালো নয়।’

বিমান চলাচল বন্ধ রাখার সময় বাড়িয়েছে ইরান

ইরান সব ধরনের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখা সময় আগামীকাল স্থানীয় সময় বেলা দুইটা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। ইরানের আধা-সরকারি মেহর সংবাদ সংস্থা এ খবর দিয়েছে। তারা ইরানের সড়ক ও শহর উন্নয়ন মন্ত্রীর মুখপাত্র মাজিদ আখাভানকে উদ্ধৃত করেছে। রিপোর্টে বলা হয় যে আখাভান বলেছেন পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কোনো এয়ারলাইন্স বা তাদের এজেন্টরা টিকেট বিক্রি করতে পারবে না। সুত্রঃ বিবিসি

ইসরায়েলের ৬ গবেষণাগার ধ্বংস, অপূরণীয় ক্ষতি

ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরায়েলের বেন গুরিওন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৬টি গবেষণাগার সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়াও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও অন্তত ৯টি গবেষণাগার। এ ঘটনাকে ‘তেল আবিবের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৯ জুন ইসরায়েলের সোরোকা ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার ক্যাম্পাসে ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানে, যার ফলে এই বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চিকিৎসা ও জীববিজ্ঞানের বহু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকল্পের ওপর বছরের পর বছর যে পরিশ্রম হয়েছে, তা এক মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেছে।’ ধ্বংসপ্রাপ্ত গবেষণাগারগুলোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের শ্রেণিকক্ষ, গবেষণাগার ও ডিসেকশন রুম। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের মারকাস ফ্যামিলি ক্যাম্পাসের প্রায় ৩০টি ভবন এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি, তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে এই ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি থেকে কয়েক শত কোটি শেকেল (ইসরায়েলি মুদ্রা) পর্যন্ত হতে পারে। খবরে বলা হয়, ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জন শিক্ষক ও কর্মচারী এবং ৪৮ জন ছাত্র-এর বাসভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জন কর্মচারী এবং ৪১ জন ছাত্রকে তাদের বাসস্থান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শহরের ৪টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরি বা ছাত্রাবাসে রাখা হয়েছে, যেখানে কিছু কর্মচারীও অস্থায়ীভাবে অবস্থান করছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজ্ঞান ও শিক্ষাক্ষেত্রে এই ক্ষয়ক্ষতি শুধু বেন গুরিওন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, বরং পুরো ইসরায়েলি গবেষণা ক্ষেত্রের জন্য এক বিশাল ধাক্কা। বিশেষ করে চিকিৎসা ও জীববিজ্ঞানের বহু দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা প্রকল্প ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে এই সেক্টরে এক গভীর শূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করেনি ইরান: উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা বন্ধ করে দিলেও 'শত্রুতা স্থগিত করার জন্য' কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে সই করেনি। ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খাতিবজাদেহ এ কথা জানিয়েছেন। খাতিবজাদেহ বলেন, 'জায়নিস্ট সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো লিখিত চুক্তি হয়নি। যা ঘটেছে তা হলো, ইহুদিবাদীদের আগ্রাসন বন্ধ করা। একই সঙ্গে ইরান প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও আর কোনো আক্রমণ চালাবে না।' গত ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে আগ্রাসন অভিযান শুরু করে। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ইরান প্রতিশোধ নেয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে ইসরায়েলি হামলার জবাবে পাল্টা হামলা চালায় ইরান। ২২ জুন ভোরে মার্কিন বোমারু বিমানগুলো তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ করে। পরের দিন সন্ধ্যায় তেহরান কাতারে অবস্থিত এই অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক বিমান ঘাঁটি আল উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এরপর ২৪ জুন ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল এবং ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ইসরায়েলও ঘোষণা করে, তারা মার্কিন প্রস্তাবে রাজি। পরিবর্তে তেহরান জানায়, তারা তেল আবিবকে আগ্রাসন বন্ধ করতে বাধ্য করে বিজয় অর্জন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইল ইরান, জাতিসংঘে অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি

বোমা ফেলে ইরানের স্থাপনাগুলোর ক্ষতি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে অভিযোগ দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তেহরান। ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খাতিবজাদেহ আল মায়াদিন টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইরানকে পারমাণবিক স্থাপনায় হওয়া ক্ষতিপূরণ ওয়াশিংটনকে দিতে হবে। গত ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে আগ্রাসন অভিযান শুরু করে। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ইরান প্রতিশোধ নেয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে ইসরায়েলি হামলার জবাবে পাল্টা হামলা চালায় ইরান। ২২ জুন ভোরে মার্কিন বোমারু বিমানগুলো তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ করে। পরের দিন সন্ধ্যায় তেহরান কাতারে অবস্থিত এই অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক বিমান ঘাঁটি আল উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এরপর ২৪ জুন ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল এবং ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ইসরায়েলও ঘোষণা করে, তারা মার্কিন প্রস্তাবে রাজি। পরিবর্তে তেহরান জানায়, তারা তেল আবিবকে আগ্রাসন বন্ধ করতে বাধ্য করে বিজয় অর্জন করেছে। সাঈদ খাতিবজাদেহ বলেন, ২৪ জুন কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি যুদ্ধ বন্ধ করে দিয়েছে। যুদ্ধ বন্ধের বার্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই পাঠিয়েছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরানি জাতি প্রতিরোধের মাধ্যমে জায়নিস্ট সরকারের ওপর তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিয়েছে এবং শত্রুকে একতরফাভাবে তাদের আগ্রাসন বন্ধ করতে বাধ্য করেছে। ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন মাধ্যমে ইরানকে বার্তা পাঠালেও তেহরান বলে দিয়েছিল, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। ইরান জায়নিস্ট সরকারের সাথে এমন কোনো লিখিত চুক্তি করেনি, যাতে নির্দিষ্ট কিছু ধারা থাকতে পারে। যা ঘটেছে তা হলো জায়নবাদের আগ্রাসন বন্ধ করা। ইরান প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও হামলা চালাবে না।

গাজায় ‘যুদ্ধবিরতি’ শিগগিরই, জানালেন ট্রাম্প

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পর গাজা নিয়ে সরব হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। বুধবার (২৫ জুন) টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নেদারল্যান্ডসে ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই হামলার কারণে আমরা খুব শিগগিরই কিছু ভালো খবর পাব... গাজায় ‘যুদ্ধবিরতি’ শিগগিরই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা তথ্য প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ গোয়েন্দা তথ্যে মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ট্রাম্প বলেন, তারা আসলে কিছুই জানে না। তিনি দাবি করেন, এই হামলায় ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়েছে এবং এটি ছিল একটি বিধ্বংসী আক্রমণ। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের ফলে তেহরান যুদ্ধবিরতির জন্য বাধ্য হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ইরানের প্রয়োজনীয় সুবিধা ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ঐ পাহাড়ের নিচের সবকিছু খারাপ অবস্থায় রয়েছে। তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এখন আগের তুলনায় ‘অনেক পিছিয়ে’ রয়েছে।

আইএইএ’র সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিতে সম্মতি ইরানের পার্লামেন্টের

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিতে সম্মতি দিয়েছে ইরানের পার্লামেন্টের। দেশটির পার্লামেন্ট সদস্যরা বুধবার (২৫ জুন) ভোটাভুটির মাধ্যমে আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার পরিকল্পনা অনুমোদন করেন। এই প্রস্তাবের বিপক্ষে কোনো প্রতিনিধি ভোট দেননি। বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এর আগে, ইরানি পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি কমিশন একটি “খসড়া অনুমোদন করে যাতে সরকারকে আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করতে বলা হয়।” কমিশন সংস্থার প্রতিবেদনকে ইরানের ওপর হামলার অজুহাত বলে অভিহিত করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, “নিরীক্ষণ ক্যামেরা স্থাপন, পরিদর্শন এবং সংস্থায় রিপোর্ট প্রদানের” মতো কার্যক্রম স্থগিত থাকবে, যদি না ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। ইসলামী পরামর্শদাতা পরিষদের স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না, “আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা তাদের দায়িত্ব পালন করেনি এবং একটি রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।” সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে, ইরানকে অসহযোগিতার জন্য সমালোচনা করা হয়েছে। সংস্থাটি ইরানকে অঘোষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে বলেছিল এবং ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। ইরানি পার্লামেন্টের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা বাড়াতে পারে এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির স্বচ্ছতা ও এর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। এর আগে ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র লক্ষ্য করে গত সপ্তাহে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এরমধ্যে অত্যাধুনিক বি-২ স্টিলথ বোমারু ব্যবহার করে ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা হয়। তবে মার্কিন গোয়েন্দারা তাদের প্রাথমিক মূল্যায়নে জানিয়েছেন, হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল উপাদান ধ্বংস হয়নি। এ হামলা দেশটির পারমাণবিক কার্যক্রম শুধুমাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে। মূল্যায়নটি প্রদান করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা শাখা ডিফেন্স ইন্টিলিজেন্স এজেন্সি। হামলার পর পর ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড মূল্যায়নটি তৈরি করে। মূল্যায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র জানিয়েছে, ইরানের সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের মজুদ ধ্বংস হয়নি। অপর একজন জানিয়েছেন, দেশটির পারমাণবিক সেন্ট্রিফিউজের বেশিরভাগও অক্ষত রয়েছে। যার অর্থ যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কাঠামো ধ্বংস করতে পারেনি। বরং তাদের হামলা ইরানি পারমাণবিক কার্যক্রমকে শুধুমাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে।

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলা যুদ্ধের অবসানের পর বুধবার (২৫ জুন) বিশ্বের অধিকাংশ শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। তবে চুক্তি নিয়ে 'সতর্কতা' থাকায় তেলের দাম কিছুটা বেড়ে আছে। গত ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন অভিযান শুরু করে। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ইরান প্রতিশোধ নেয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে ইসরায়েলি হামলার জবাবে পাল্টা হামলা চালায় ইরান। ২২ জুন ভোরে মার্কিন বোমারু বিমানগুলো তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ করে। পরের দিন সন্ধ্যায় তেহরান কাতারে অবস্থিত এই অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক বিমান ঘাঁটি আল উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এরপর ২৪ জুন ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল এবং ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ইসরায়েলি ঘোষণা করে, তারা মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। পরিবর্তে তেহরান জানায়, তারা তেল আবিবকে আগ্রাসন বন্ধ করতে বাধ্য করে বিজয় অর্জন করেছে। ২৪ জুন থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। এ খবর আসার পর শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা দিতে শুরু করে ও তেলের দাম অনেকতাই কমে যায়। এএফপির তথ্য অনুসারে, বুধবার প্রত্যাশা ছাড়িয়ে হংকং, সাংহাই, সিডনি ও সিঙ্গাপুর এশিয়াজুড়ে লাভের শীর্ষে রয়েছে। তবে টোকিওর শেয়ারবাজার কমে গেছে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েল কংগ্রেসে এক শুনানিতে বলেন, যদি মুদ্রাস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে, তাহলে আমরা শিগগিরই সুদের হার কমাতে পারব।

জীবিত আছেন ইরানের কুদস ফোর্স কমান্ডার ইসমাইল কানি

ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এলিট কুদস ফোর্সের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কানি বেঁচে আছেন এবং সুস্থ আছেন। এমনটাই দেখা গেছে মঙ্গলবার তেহরানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ‘বিজয়’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের সময়। ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সি প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, ওই অনুষ্ঠানে জনতার ভিড়ের মধ্যে ছিলেন কানি। সংস্থাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছে, অপারেশন ডিভাইন ভিক্টরির পর আজ তেহরানের জনগণের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কমান্ডার কানি। সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত প্রেস টিভিও ভিডিওটি প্রকাশ করে জানিয়েছে, আইআরজিসি কুদস ফোর্সের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কানি আজ তেহরানে বিজয় উদযাপনের সময় উচ্ছ্বসিত জনতার কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন। খবর এএফপি।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কয়েক দশক পিছিয়েছে: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কারণে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কতটা পিছিয়েছে বলে মনে করেনি তিনি। জবাবে বলেন, তিনি মনে করেন, ‘মূলত কয়েক দশক। আমি মনে করি তারা যদি এটি পেত তাহলে তারা নরকে যেত। সবশেষ তারা সমৃদ্ধকরণ করতে চেয়েছিল। ওই আঘাত যুদ্ধের সমাপ্তি টেনেছে।’ খবর-বিবিসি। উল্লেখ্য, পেন্টাগনের একটি গোয়েন্দা পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা দেশটির পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি। সম্ভবত এটি ‘কয়েক মাস পিছিয়েছে’। ট্রাম্প ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাতের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে, ‘দুটি বাচ্চা একই স্কুল প্রাঙ্গণে’।এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজা যুদ্ধের ক্ষেত্রেও ‘বড় অগ্রগতি’ হচ্ছে। গাজার বিষয়ে একটি চুক্তির একেবারেই কাছে আমরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেদারল্যান্ডসে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ন্যাটো জোটের মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে কথা বলেনছেন। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট মার্কিন হামলার প্রশংসা করে বলেন, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমেরিকা ‘ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’ এদিকে হেগ শহরে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রিত গুরুত্বপূর্ণ চার দেশ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের নেতারা অংশ নিচ্ছেন না। এ সম্মেলনে বিশ্বের বৃহত্তম নিরাপত্তা সংস্থাটির জন্য নতুন প্রতিরক্ষা ব্যয়ের অনুমোদন দিয়ে এর ৩২টি সদস্য দেশ ঐক্যবদ্ধ হতে পারে অথবা তাদের মধ্যে বিভেদ আরও বাড়তে পারে। রয়টার্সের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ন্যাটো সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। এ ছাড়া পশ্চিমা সামরিক জোটের এই বৈঠকে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড– ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের তিন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশের নেতারাও। এ ধরনের সমন্বিত অনুপস্থিতি একদিকে যেমন ন্যাটোর সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভবিষ্যৎ অংশীদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তেমনি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি বড় সংকেত হিসেবেও দেখা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে সফর বাতিলের সিদ্ধান্তকে অনেকেই কৌশলগত হিসেবেই দেখছেন। এদিকে সম্মেলনের এক ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন ট্রাম্প। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্সির সূত্র জানায়, দুই পক্ষের টিম বৈঠকের বিস্তারিত চূড়ান্ত করছে। বৈঠকটি স্থানীয় সময় দুপুরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ বৈঠকে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও কিয়েভের জন্য অস্ত্র সংগ্রহের বিষয়ে আলোচনা হবে।

ক্ষতিপূরণ চেয়ে ৩৯ হাজার ইসরায়েলির আবেদন

ইরানের একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন হামলায় পর্যুদস্ত ইসরায়েলিরা এখন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইছেন। এজন্য প্রায় ৩৯ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে মঙ্গলবার এ খবর জানিয়েছে আনাদোলু। সংবাদমাধ্যমটির খবর, ইরানি হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য একটি ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠন করেছে ইসরায়েলের কর কর্তৃপক্ষ। ১৩ জুন ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ চেয়ে মোট ৩৮ হাজার ৭০০টি আবেদন জমা পড়েছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ঘরবাড়ি-ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে ৩০ হাজার ৮০৯টি। এ ছাড়া ৩ হাজার ৭১৩টি আবেদন জমা পড়েছে যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কারণে। যন্ত্রপাতি আর অন্যান্য জিনিস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে ৪ হাজার ৮৫টি। ইসরায়েলি ওয়েবসাইট বেহাদ্রেই হারেদিমের তথ্যমতে, শুধু তেলআবিবেই ক্ষতিপূরণ চেয়ে ২৪ হাজার ৯৩২টির বেশি আবেদন জমা পড়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের আশকেলন শহরে আবেদন জমা পড়েছে ১০ হাজার ৭৯৩টি। ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ইসরায়েলিদের কী পরিমাণে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, সেটা এখনও জানানো হয়নি।

ইরানে নিহত কমান্ডার-বিজ্ঞানীদের জানাজা শনিবার

ইসরায়েলের হামলায় নিহত ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার ও শীর্ষ বিজ্ঞানীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা আগামী শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে টিআরটি ওয়ার্ল্ড এ খবর জানিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ১২ দিন ধরে চলা ইহুদি রাষ্ট্রের আগ্রাসনে শহীদ কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা আগামী শনিবার রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে এই আয়োজন শুরু হবে। ১৩ জুন ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। জবাবে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা শুরু করে ইরান। এই সংঘাতের মধ্যে ২১ জুন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালায়। এর জবাব দেয় ইরান। সংঘাতে ইরানের অন্তত ১৪ জন বিজ্ঞানীকে হত্যা করার দাবি করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাও।

যুদ্ধবিরতিতে এখনও স্বীকৃতি দেননি খামেনি

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি মঙ্গলবার দেশটির প্রেসিডেন্টসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু এরপরেও দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির দিক থেকে বিষয়টি স্বীকার করে প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য আসেনি। দেশটির কোনো বিষয়ে তার বক্তব্যই শেষ কথা। সে কারণে দেশটির ভেতরে ও বাইরে থেকে এখন নজর দেওয়া হচ্ছে, যে তিনি এ বিষয়ে কখন কথা বলেন। খবর বিবিসি খামেনি তেহরানে তার নিয়মিত বাসবভনে অবস্থান না করে নিরাপদ বাঙ্কারে অবস্থান করছেন- এমন খবর আগেই এসেছে, যদিও তা ইরান নিশ্চিত করেনি। সবশেষ গত ১৮ জুন তার আগে থেকে রেকর্ড করা একটি ভিডিও বার্তা টেলিভিশনে প্রচার হয়েছে। ওই ভাষণে তিনি ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ করতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ইসরায়েল ও ইরান পুরোপুরি ও সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সোমবার রাতে কাতার ও ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি এ ঘোষণা দেন। তবে ঘোষণার পরপরই ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তোলে। ইসরায়েল হামলা চালিয়ে ইরানের একজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে সপরিবারে হত্যা করে। জবাবে ইরান ইসরায়েলের টেক সিটি বিরশেবাতে হামলা চালায়। এতে নিহত হন চারজন। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে জানান, ‘যুদ্ধবিরতি এখন কার্যকর হয়েছে। দয়া করে কেউ এটি লঙ্ঘন করবেন না।’ বিবিসির খবরে বলা হয়, এর আগে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ইসরায়েল ও ইরান পুরোপুরি ও সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানান, সামরিক অভিযান বন্ধে কোনো চুক্তি হয়নি। তবে ইসরায়েল ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে তাদের অবৈধ হামলা বন্ধ রাখলে পাল্টা হামলা চালানোর কোনো ইচ্ছা নেই। পরে একই কথা বলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। পরে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে আবারও পোস্ট করেন। সেখানে তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সম্মানের। সমস্ত পারমাণবিক স্থাপনা ও সক্ষমতা ধ্বংস করা আমার জন্য বিরাট সম্মানের ছিল। তারপরও যুদ্ধ বন্ধ করুন। গতকাল হেগে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে যাওয়ার পথে তিনি ওই পোস্ট করেন। তাতে তিনি আবারও বলেন, ইসরায়েল-ইরান উভয়েই সমানভাবে যুদ্ধ বন্ধ করতে চেয়েছিল। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে স্বস্তি নিয়ে এলেও এক ধরনের সন্দেহ-উদ্বেগ রয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সংঘাতে যুদ্ধবিরতি ভেঙে হামলা চালানোর নজির আছে তেল আবিবের।

এবার জেলেনস্কিকে ‘ভালো মানুষ’ বললেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটো সম্মেলনের ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছেন। দুই নেতার আলোচনার বিষয়বস্তু হবে ইউক্রেনের চলমান সংকট এবং সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতি। ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আমরা স্বাভাবিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। উনার (জেলেনস্কির) সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব। এ সময় জেলেনস্কিকে ‘ভালো মানুষ’ বলে অভিহিত করে ট্রাম্প জানান, তাদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আগে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হলেও তিনি ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টকে সম্মান করেন। উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতে কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে দুই নেতার বৈঠক নির্ধারিত থাকলেও ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তড়িঘড়ি করে হোয়াইট হাউসে ফিরে যান ট্রাম্প। ফলে সেই বৈঠক বাতিল হয়ে যায়। আশা করা হচ্ছে, আসন্ন বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ, সামরিক সহায়তা, এবং রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। ট্রাম্প ইতোমধ্যেই বলেছেন, তিনি ইউক্রেন ইস্যুতে ‘বিস্তৃত ও কার্যকর সমাধান’ খুঁজে বের করতে চান। এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বৈঠকে তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে মতপার্থক্য একসময় চিৎকার-চ্যাঁচামেচির পর্যায়ে চলে যায়। ‘জেলেনস্কি যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন’ দাবি করে ট্রাম্প বলেন, ‘মানুষ মারা পড়ছে। যুদ্ধের জন্য সেনার সংখ্যাও কমছে ক্রমশ। আপনার হাতে কার্ড (বিকল্প) নেই।’ রাশিয়ার সঙ্গে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে ট্রাম্পের পূর্বসূরি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে কয়েক শ কোটি ডলারের অস্ত্র ও অর্থসহায়তা পেয়েছে ইউক্রেন; কিন্তু গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। জেলেনস্কির সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। যুদ্ধের জন্য জেলেনস্কিকে দোষারোপ করে আসছিলেন তিনি।

কাতারের আমিরের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট

কাতারের ভূখণ্ডে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে গত সোমবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির কাছে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। কাতার আমিরের দপ্তর (দিওয়ান) থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মঙ্গলবার টেলিফোনে কথা বলেছেন দুই নেতা। এ সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘হামলার লক্ষ্যবস্তু কাতার বা দেশটির জনগণ ছিল না। বরং কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। এটা উপসাগরীয় দেশটির (কাতার) জন্য কোনো হুমকি নয়।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ফোনালাপে ইরানের প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেছেন, একটি প্রতিবেশী ও মুসলিম দেশ হিসেবে কাতারের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক রয়ে যাবে। পেজেশকিয়ান আশা করেন, দুই দেশের সম্পর্ক সর্বদা সার্বভৌমত্ব আর সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণের নীতির ওপর ভিত্তি করে বজায় থাকবে। গত সোমবার কাতারের ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ১৯টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যে এটাই সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। কাতারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কাতারের প্রতিরক্ষা বাহিনী ১৮টি ক্ষেপণাস্ত্র নিষ্ক্রিয় করে। আল জাজিরা

ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে আরো তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। দেশটির বিচার বিভাগের অধীনস্থ সংবাদ সংস্থা মিজান এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযুক্তরা শুধু গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গেই জড়িত ছিলেন না, বরং তারা দেশটিতে ‘হত্যাকাণ্ড সংঘটনের জন্য’ সরঞ্জাম পাচারের চেষ্টাও করেছেন। মিজান সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন ইদ্রিস আলি, আজাদ শোজাই এবং রাসুল আহমাদ রাসুল। তাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ আনা হয় এবং আদালতের রায় অনুযায়ী তাদের দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসি কার্যকর করা হয়।এদিকে, ইরান-ইসরায়েল সাম্প্রতিক ১২ দিনের সংঘাত চলাকালীন সময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে আরও ৭০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্র-সমর্থিত সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ। ইরানি কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশের নিরাপত্তা রক্ষা ও বৈদেশিক হুমকি মোকাবিলায় তারা কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং দেশদ্রোহিতার মতো গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে শাস্তি অব্যাহত থাকবে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়াল ভারত-চীন-রাশিয়া জোট

ভারত-চীন-রাশিয়া নেতৃত্বাধীন জোট-ব্রিকস ইরানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। পাশাপাশি ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে এ জোট। খবর আলজাজিরার। ব্রাজিল, চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, রাশিয়াসহ উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর একটি জোট ব্রিকস। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক হামলার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এটিকে আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের সনদের লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করেছে তারা। মঙ্গলবার (২৪ জুন) ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর জারি করা এক বিবৃতিতে, ব্রিকস ইরানের “শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা”গুলোতে হামলার সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ম লঙ্ঘন করে হামলা পরিচালিত হয়েছে। জোটটি যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে কূটনীতিতে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ‘পরিস্থিতি উত্তেজনামুক্ত করার এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের মতভেদ নিরসনের লক্ষ্যে আলোচনার বিকল্প নেই।’ ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও ব্রিকস সদস্য। জোটের মতে, সংলাপের মাধ্যমে ‘হিংসার চক্র ভাঙা এবং শান্তি পুনরুদ্ধারের প্রয়োজন’ রয়েছে।

হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়নি: মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালেও দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির মূল অংশ ধ্বংস হয়নি বলে প্রাথমিক এক মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যে বলা হয়েছে। এতে কর্মসূচিটি কয়েক মাসের জন্য পেছানো হয়েছে মাত্র। বুধবার এক এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন। সিএনএন বলছে, সাতটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই মূল্যায়ন এর আগে প্রকাশিত হয়নি। এই মূল্যায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা। ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের যুদ্ধপরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনার ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো “সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস” করা হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথও বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা “মুছে ফেলা হয়েছে।” কিন্তু প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) প্রাথমিক মূল্যায়ন সেই দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে। দুই সূত্র জানায়, ইরানের মজুতকৃত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ধ্বংস হয়নি এবং বেশিরভাগ সেন্ট্রিফিউজ এখনও অক্ষত রয়েছে। একটি সূত্র জানায়, হামলার আগে ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। ডিআইএ-এর মূল্যায়নে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ইরানকে কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে দিতে পেরেছে, সর্বোচ্চ।” হোয়াইট হাউজ এই মূল্যায়নের অস্তিত্ব স্বীকার করলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট সিএনএনকে বলেন, “এই তথাকথিত মূল্যায়ন সম্পূর্ণ ভুল এবং একটি ‘টপ সিক্রেট’ নথি থেকে ফাঁস হয়েছে। এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হেয় ও সাহসী পাইলটদের অবমূল্যায়নের চেষ্টা।” ট্রাম্প, বর্তমানে নেদারল্যান্ডসে ন্যাটো সম্মেলনে অবস্থান করছেন। তিনি ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে সিএনএনের প্রতিবেদনের সমালোচনা করে লিখেছেন, “ইতিহাসের অন্যতম সফল সামরিক অভিযান… ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস।” মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, অপারেশনটি পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে এবং “সম্পূর্ণ সফল” ছিল। তবে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। বিশেষজ্ঞ ও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের যে তিনটি কেন্দ্র আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, সেগুলোর নিচের স্তরের স্থাপনাগুলোর কোনো উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি। আঘাত হয়েছে মূলত উপরের কাঠামো, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও ইউরেনিয়ামকে অস্ত্রোপযোগী ধাতুতে রূপান্তরের সুবিধাগুলোর ওপর। ইসরায়েলি মূল্যায়নেও ফোরদোতে প্রত্যাশিত পরিমাণ ক্ষতি হয়নি বলে জানানো হয়েছে। তবে তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে অন্তত দুই বছরের জন্য থামিয়ে দিয়েছে— যদি ইরান পুনর্গঠনের সুযোগ পায়, যা তারা দেবে না। অন্যদিকে, পারমাণবিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ জেফ্রি লুইস স্যাটেলাইট চিত্র পর্যালোচনা করে জানান, “ফোরদো, ইসফাহান ও পারচিনসহ বেশ কয়েকটি কৌশলগত স্থাপনা এখনও অক্ষত রয়েছে, যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির দ্রুত পুনর্গঠনে সহায়ক হতে পারে।” এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভায় নির্ধারিত ক্লাসিফায়েড ব্রিফিং হঠাৎ করেই স্থগিত করা হয়েছে। ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান প্যাট রায়ান এক্স-এ বলেন, “ট্রাম্প কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই হাউজের ব্রিফিং বাতিল করেছেন। কারণ— তিনি জানেন, তার দাবি বাস্তবে টিকে না।” যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমাগুলো, বিশেষ করে ফোরদো ও ইসফাহানের গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় আঘাত হানতে কতটা কার্যকর, তা নিয়েও বহুদিন ধরেই প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি ইসফাহানে ‘টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, কারণ বোমা সেখানে কার্যকর নাও হতে পারত। সূত্র আরও জানায়, ইরানে আরও গোপন পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে, যেগুলো এই হামলার টার্গেট ছিল না এবং এখনও সচল রয়েছে। সূত্র: সিএনএন

গাজায় ত্রাণ বিতরণে আরও ৩ কোটি ডলার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ত্রাণ বিতরণ করা এক বিতর্কিত মানবিক সংস্থাকে ৩ কোটি ডলার দিচ্ছে। এই সংস্থার মাসব্যাপী কার্যক্রম এবং খাবার বিতরণ কেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের হতাহতের ঘটনায় ‘কিছু মার্কিন কর্মকর্তার উদ্বেগ’ রয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। চারটি সূত্র ও রয়টার্সের হাতে আসা একটি নথির বরাতে এ তথ্য জানা গেছে। ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফকে’ কূটনৈতিকভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে। তবে এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সরকার সরাসরি এ সংস্থাকে অর্থ সহায়তা দিল। মার্কিন বেসরকারি সামরিক এবং লজিস্টিকস কোম্পানির মাধ্যমে এই সংস্থা গাজায় ত্রাণ পাঠায় এবং তা তথাকথিত নিরাপদ জায়গায় বিতরণ করা হয়। রয়টার্সের হাতে আসা নথি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি জিএইচএফকে ৩ কোটি ডলারের অনুদান দিয়েছে। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউস এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘অগ্রাধিকারভিত্তিক নির্দেশনায়’ অনুমোদন করা হয়। এরই মধ্যে ৭০ লাখ ডলারের প্রথম কিস্তি ছাড় করা হয়েছে। দুটি সূত্র জানায়, প্রতি মাসে জিএইচএফ-কে আরও ৩ কোটি ডলারের অনুদান দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করেনি, বরং সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছে। তবে পররাষ্ট্র দপ্তরও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। জিএইচএফ-ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বা মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্বেগ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সূত্র জানায়, জিএইচএফ-কে অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর সংস্থাটিকে সাধারণত যে নিরীক্ষার (অডিট) মধ্যে পড়তে হয়, তা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। ইউএসএআইডি থেকে প্রথমবার অনুদান পেতে যেসব সংস্থার অর্থনৈতিক কার্যক্রমের খুঁটিনাটি যাচাই করা হয়, জিএইচএফ-এর ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এক সাবেক মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘এমন নিরীক্ষা সাধারণত কয়েক সপ্তাহ, কখনো মাসখানেকও লেগে যায়।’ সূত্র আরও জানায়, গাজায় যেসব সংস্থা ত্রাণ দেয়, তাদের ক্ষেত্রে চরমপন্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু জিএইচএফ-কে এই অতিরিক্ত যাচাই থেকেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। জিএইচএফ গাজায় মার্কিন লভ্যাংশভিত্তিক লজিস্টিকস প্রতিষ্ঠান ‘সেইফ রিচ সলিউশনসের’ সঙ্গে কাজ করছে। এটি এক সাবেক সিআইএ কর্মকর্তার নেতৃত্বে পরিচালিত। পাশাপাশি নিরাপত্তা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেনাসদস্যদের নিয়ে গড়া প্রতিষ্ঠান ‘ইউজি সলিউশনস।’ এর আগে রয়টার্স জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে জিএইচএফ-কে ৫০ কোটি ডলার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। এই অর্থ ইউএসএআইডি—এর বাজেট থেকেই দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে চারটি সূত্র জানায়, অনেক মার্কিন কর্মকর্তা এ অর্থ সহায়তার বিরোধিতা করেছেন। কারণ, তারা মনে করেন, খাবার বিতরণ কেন্দ্রে সহিংসতা, জিএইচএফ-এর অভিজ্ঞতার ঘাটতি এবং বেসরকারি সামরিক-লজিস্টিকস কোম্পানির সম্পৃক্ততা নিয়ে উদ্বেগ আছে। গত ১৯ মে ইসরায়েল গাজায় ১১ সপ্তাহের ত্রাণ অবরোধ শিথিল করে সীমিত পরিসরে জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রম চালুর অনুমতি দেয়। এরপর জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ৪০০—এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে জিএইচএফ-এর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশেই নিহত হয়েছে বেশি। অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ ত্রাণ কর্মকর্তা জনাথন হুইটল গত রোববার বলেন, ‘নিহতদের বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ বা গোলার আঘাতে মারা গেছেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে এমন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে, যেগুলো সামরিকীকৃত অঞ্চল।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর বাইরে, ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনি জনতার মধ্যে অনেকেই নিহত হয়েছে। কেউ কেউ আবার সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় হতাহত হয়েছে।’ এ বিষয়ে মঙ্গলবার জিএইচএফ জানায়, তারা এখন পর্যন্ত গাজায় ৪ কোটি খাবার বিতরণ করেছে। তবে জাতিসংঘ এবং অন্য সংস্থাগুলো লুটপাটের কারণে তাদের ত্রাণ পৌঁছাতে পারছে না। জিএইচএফ-এর এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের কোনো ট্রাক লুটপাটের শিকার হয়নি। মূল কথা হলো, আমাদের ত্রাণ নিরাপদে পৌঁছে যাচ্ছে। বাদানুবাদ বা কাদা ছোড়াছুড়ির বদলে আমরা জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাকে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আমন্ত্রণ জানাই, যাতে সবাই মিলে গাজার জনগণকে খাদ্য সরবরাহ করা যায়।’

বাঙ্কার বাস্টারেও ধ্বংস হয়নি ইরানের পরমাণু কেন্দ্র

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ)। পেন্টাগনের গোপন বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা স্থায়ী নয়। কেবল ৬ থেকে ৯ মাসের জন্য পিছিয়ে যেতে পারে। বুধবার (২৫ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যেই গত সপ্তাহে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রে বাঙ্কার বাস্টার বোমা নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। পরমাণু স্থাপনাগুলো হলো নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহান। হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। তবে পেন্টাগনের এই প্রতিবেদন উঠে এলো নতুন তথ্য। সংস্থাটি জানায়, মাটির নিচে থাকা ইরানের গবেষণা ল্যাব ও সেন্ট্রিফিউজ ইউনিটগুলো আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এগুলোর অধিকাংশই আবার চালু করার মতো অবস্থায় রয়েছে। এ হামলা ইরানের কার্যক্রমে মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে যেতে পারে। গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামলার আগেই ইরান তাদের অধিকাংশ ইউরেনিয়াম নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। ফলে স্থায়ী কোনো ক্ষতি হয়নি। এর আগে গত রোববার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, আমরা জানি না, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বর্তমানে কোথায় রাখা হয়েছে। আমরা আগামী সপ্তাহগুলোতে তা বের করার চেষ্টা করব। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেছেন, আমরা ৪০০ কেজি ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কোনো হিসাব রাখতে পারছি না। অবশ্য মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ দাবি করেন, সফল হামলায় স্থাপনাগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে। তবে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের প্রধান জেনারেল ড্যান কেইন বলেন, তিনটি কেন্দ্রই আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, তবে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এমন কথা বলা এখনই সম্ভব নয়। চূড়ান্ত মূল্যায়ন এখনো আসেনি। এদিকে, ডিআইএর প্রতিবেদন ফাঁস হওয়ার পর হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই তথাকথিত প্রতিবেদন ফাঁস করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং আমাদের সাহসী পাইলটদের সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চলছে। হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না করলেও কংগ্রেসে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ডেমোক্র্যাট সিনেটররা বলছেন, কোটি কোটি ডলারের সামরিক অভিযান চালিয়ে যদি কেবল সময় কেনা হয়, তবে এটি সামরিক কৌশলের ব্যর্থতা। অন্যদিকে ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আমরা ভয় পাইনি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা পারমাণবিক প্রকল্প আবার চালু করব। ইরানি কর্মকর্তারা এটিকে রাজনৈতিক শো বলেও মন্তব্য করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা কৌশলগত নয়; বরং কূটনৈতিক চাপে রাখার একটি প্রচেষ্টা মাত্র। ভবিষ্যতে যদি ইরান চায়, তবে কয়েক মাসের মধ্যেই তারা পুরোনো সক্ষমতা ফিরে পেতে পারে।

ভারতের সঙ্গে সংলাপে প্রস্তুত পাকিস্তান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সৌদি আরবের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানকে জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীর, পানি, বাণিজ্য ও সন্ত্রাসবাদসহ সকল অনিষ্পন্ন বিষয় নিয়ে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপের জন্য ইসলামাবাদ প্রস্তুত। মঙ্গলবার (২৪ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এআরওয়াই নিউজ। মঙ্গলবার এক টেলিফোনালাপে তিনি এ কথা বলেন। সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে গভীর সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে দুই নেতা একে অপরের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ সৌদি আরবের অব্যাহত সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি নিয়েও তাদের মধ্যে মতবিনিময় হয়। ইরান-ইসরাইল সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ বলেন, পাকিস্তান এই সংঘাতের তাৎক্ষণিক নিরসন এবং সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে। তিনি বলেন, সোমবার রাতে সংঘটিত হামলার আলোকে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের প্রতি প্রতিটি পক্ষের শ্রদ্ধাশীল থাকা জরুরি। এ প্রসঙ্গে তিনি সৌদি আরবের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার প্রতি পাকিস্তানের অকুণ্ঠ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। আলাপচারিতায় শাহবাজ শরিফ পবিত্র দুই মসজিদের খাদেম, সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি সফল হজ আয়োজনের জন্য সৌদি নেতৃত্বকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান এবং পাকিস্তানি হজযাত্রীদের প্রতি সৌজন্যমূলক আতিথেয়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা বিশ্বমঞ্চে সৌদি আরবের নেতৃত্বের পরিচায়ক। তিনি বলেন, সৌদি আরব এক শান্তিপ্রেমী শক্তি হিসেবে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব বহন করছে। জবাবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ফোনকলের জন্য প্রধানমন্ত্রী শাহবাজকে ধন্যবাদ জানান এবং সৌদি আরবের প্রতি পাকিস্তানের সংহতি ও সমর্থনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় সৌদি আরব পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ লক্ষ্যে পাকিস্তানের গঠনমূলক ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।