
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ছেলে কাসিম খান তার বাবার জেলজীবনকে ঘিরে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, ইমরান খান ইতিমধ্যেই ৮৪৫ দিন ধরে কারাগারে বন্দি আছেন। গত ছয় সপ্তাহ ধরে তাকে একা ‘ডেথ সেলে’ রাখা হয়েছে, যেখানে কোনো পরিবার সদস্য তাকে দেখতে পারছেন না। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও জেল কর্তৃপক্ষ কারো সাক্ষাৎ অনুমতি দিচ্ছে না।
কাসিম খানের কথায়, তার বাবার বোনদেরও জেলের ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, তিনি ও তার ভাইদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই এবং ‘জীবিত থাকারও কোনো প্রমাণ নেই’। তিনি লিখেছেন, ‘এই পুরো অন্ধকার পরিস্থিতি কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নয়। এটি ইচ্ছাকৃতভাবে তার অবস্থা গোপন করার চেষ্টা।’ তিনি সতর্ক করেছেন যে, সরকার ও ‘তার হ্যান্ডলারদের’ জবাবদিহি করতে হবে।
কাসিম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের ‘সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতাকে’ যে ‘অমানবিক বিচ্ছিন্নতায়’ রাখা হয়েছে তা বন্ধ করা উচিত এবং অবিলম্বে তার জীবিত থাকার প্রমাণ দেখাতে হবে।
ইমরান খানের বোন নুরিন নিয়াজি বলেন, পাকিস্তানে কঠোর সেন্সরশিপ চলছে। এএনআইকে তিনি বলেছেন, সাংবাদিক এবং মিডিয়ার মালিকদের আটক করা হচ্ছে এবং তাদের ওপর ভয় দেখানো হচ্ছে। নুরিনের কথায়, ‘পাকিস্তানে সেন্সরশিপ এতটাই কঠোর যে মিডিয়ার মানুষদের ধরে নিয়ে যায়… তাদের এত চাপ দেওয়া হয় যে, বাইরে আসার পরও তারা কিছু বলতে পারে না।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, পরিচিত কিছু সাংবাদিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এবং তাদের পাসপোর্ট ও সম্পদও আটকা পড়েছে। নুরিন বলেন, ‘হিটলারের সময়ের কথা পড়েছি… পাকিস্তানে এখন একই ঘটনা ঘটছে।’
নুরিনের মতে, শাহবাজ শরিফের সরকার ‘একেবারেই জনপ্রিয় নয়’। তিনি বলেন, নির্বাচন ‘কারচুপির মাধ্যমে’ হয়েছে এবং সরকার দুর্বল ও দমনমূলক। তিনি মনে করেন, পশ্চিমা দেশগুলো পাকিস্তানের ‘প্রতারণা’ জানে, কিন্তু পদক্ষেপ নেবে না।
এদিকে, পিটিআই নেতৃত্বও তীব্র প্রতিবাদ করছে। খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোহাইল আফ্রিদি অষ্টমবারের মতো ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে ব্যর্থ হন। ২৭ নভেম্বর তিনি আদিয়ালা জেলের বাইরে ধর্ণা দিয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ তাকে এবং পিটিআই কর্মীদের জেল ফটকে ঢুকতে দেয়নি। আফ্রিদি বলেন, আদালতের আদেশ মানা হচ্ছে না এবং প্রশ্ন তোলেন, ‘২.৫ কোটি মানুষের’ প্রতিনিধিকে কেন আটকানো হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, খানের বোন, আইনজীবী এবং চিকিৎসকদেরও জেলের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
পিটিআই নেতারা, যেমন জুলফি বুখারি ও মেহর বানো কুরেশি, সরকারের কাছে খানের স্বাস্থ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ তথ্য প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো খবর ‘ভিত্তিহীন’। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইমরান খান ‘পুরোপুরি সুস্থ’ আছেন এবং তাকে কোথাও সরানো হয়নি। তাদের দাবি, কোনো জরুরি চিকিৎসা বা বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়নি।
সম্প্রতি অনলাইনে গুজব আরও ছড়িয়েছে, যেখানে কয়েকটি বিদেশি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট দাবি করেছে যে ইমরান খান কারাগারে মারা গেছেন। তবে এসব দাবিকে কোনো নির্ভরযোগ্য সংস্থা নিশ্চিত করেনি।
গুজব আরও শক্তিশালী হয়, যখন খানের তিন বোন নুরিন নিয়াজি, আলিমা খান ও ড. উজমা খান; দাবি করেছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে জেলের বাইরে অবস্থান করছিলেন, কিন্তু পুলিশ ‘নৃশংস ও পরিকল্পিত’ভাবে হামলা চালায়। তাদের মতে, স্ট্রিটলাইট নিভিয়ে টানা-হিঁচড়ে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। নুরিন নিয়াজি বলেন, তাকে চুল ধরে টেনে ফেলা হয় এবং তিনি আহত হন। তারা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে খানের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না।
আদিয়ালা জেল পাঞ্জাব সরকারের অধীনে, যার নেতৃত্বে মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ আছেন। তিনি বলেছেন, খানের সাক্ষাত-সংক্রান্ত বিষয়টি তার ‘কোনও নিয়ন্ত্রণে নেই’। অন্যদিকে, ইমরান খান আগে জানিয়েছিলেন যে, জেলের সব বিষয় একজন সেনা কর্নেল নিয়ন্ত্রণ করছেন।