
শোবিজ অঙ্গন যেন টান টান উত্তেজনায়, পরপর আলোচিত দুই অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী ও তানজিন তিশার আইনি ঝামেলায় জড়ানোয় শোবিজপাড়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বিষয়টিকে নেতিবাচক প্রবণতা হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে অভিযোগ করছেন- এভাবে জনপ্রিয় তারকাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
গত ১৬ নভেম্বর বিকেলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মেহজাবীন চৌধুরীর গ্রেপ্তারি সংক্রান্ত খবর ছড়িয়ে পড়ে। পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি বিষয়টিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেন। তবে পরে জানা যায়, টাকা আত্মসাৎ, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও হুমকির অভিযোগে করা এক মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। একই মামলায় তার ভাই আলিসান চৌধুরীর নামও রয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, রোববার (১৬ নভেম্বর) আসামিদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ ছিল, কিন্তু হাজির না হওয়ায় গত ১০ নভেম্বর ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক আফরোজা তানিয়া তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এদিকে এর কয়েকদিন আগেই আলোচনায় আসেন তানজিন তিশা। অনলাইনভিত্তিক ফ্যাশন হাউস ‘অ্যাপোনিয়া’ তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে মামলা করে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ১৮ নম্বর কোর্টে ৪২০/৪০৬ ধারায় মামলাটি করেন প্রতিষ্ঠানটির এক্সিকিউটিভ আমিনুল ইসলাম।
অভিযোগে বলা হয়, প্রচারণার উদ্দেশ্যে তিশা ফ্যাশন হাউসটির কাছ থেকে ২৮ হাজার ৮০০ টাকার একটি শাড়ি নিলেও তা প্রচার না করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন এবং মূল্যও পরিশোধ করেননি। ২২ অক্টোবর অ্যাপোনিয়া কর্তৃপক্ষ তাকে আইনি নোটিশ পাঠায়। নোটিশে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ঝিনুককে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যাচারের জন্য ক্ষমা চাইতে বলা হয়।
নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও তিশা কোনো জবাব দেননি। পরে প্রতিষ্ঠানটি মামলা করে। তবে অভিনেত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অভিযোগকে ‘মিথ্যে ও ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেন। এতেও থামেনি বিতর্ক। গুলশান থানায় তিশার বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে জিডি করেন আরেক নারী উদ্যোক্তা ও ফ্যাশন ডিজাইনার আয়েশাহ আনুম ফায়যাহ সানায়া চৌধুরী। জিডির নম্বর ৯৮৫, তারিখ ১২ নভেম্বর ২০২৫।
আইনজটিলতার তালিকায় রয়েছে পরীমনি ও নুসরাত ফারিয়ার নামও।
পরীমনির বিরুদ্ধে গৃহকর্মী পিংকি আক্তার মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আদালতে মামলা করেন। এর আগে ৩ এপ্রিল একই অভিযোগে ভাটারা থানায় জিডিও করেন তিনি। এছাড়া ২০২২ সালের ১৮ জুলাই ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ পরীমনির বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে নালিশি মামলা করেন। মামলাটি এখনও বিচারাধীন।
অন্যদিকে নুসরাত ফারিয়াকে গত মে মাসে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় তাকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় করা একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় করা মামলায় তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আসামি করা হয়।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপীই তারকাদের নানা বিতর্ক ও আইনি জটিলতা নতুন নয়। তবে দেশীয় বিনোদন অঙ্গনে অতীতে এমন ঘটনা কম দেখা গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে বলে অনেকে মনে করেন।
শোবিজ সংশ্লিষ্টদের মতে, এখন অনেক নায়িকা অভিনয়ের চেয়ে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনায় আসেন। কাজের পরিবর্তে নিজেদের আলোচনায় রাখতে নানা বিতর্কে জড়িয়েই যেন বেশি সময় কাটাচ্ছেন তারা।