ব্যাংক এশিয়ার বিরুদ্ধে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা
- ফরিদ শ্রাবণ
- প্রকাশঃ ১১:২৭ এম, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তদন্তে উঠে এসেছে ব্যাংক এশিয়ার কিছু গ্রাহকের মাধ্যমে আরএফসিডি (রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট) হিসাব ব্যবহার করে নিয়মভঙ্গ করার ঘটনা। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটিকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের পরিদর্শনে দেখা যায়, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ব্যাংক এশিয়ার দুটি আরএফসিডি হিসাবের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ নগদ মার্কিন ডলার জমা হয়েছে, যা পরে বিদেশে ব্যয় করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা নীতিমালার নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশ ভ্রমণের পর দেশে ফেরার সময় ১০ হাজার মার্কিন ডলারের কম মুদ্রা ব্যক্তিগতভাবে রাখা বা ব্যাংকে জমা দেওয়া যায়। ১০ হাজার ডলারের বেশি থাকলে বিমানবন্দরে এফএমজে ফরমে ঘোষণা দেওয়া বাধ্যতামূলক এবং ৩০ দিনের মধ্যে ব্যাংকে জমা দিতে হয়।
তদন্তে দেখা গেছে, ব্যাংক এশিয়ার কিছু গ্রাহক এই নিয়ম মানেননি। ফারহানা করিম নামে এক গ্রাহক বিদেশ ভ্রমণের পুরোনো তারিখ দেখিয়ে একাধিকবার, কখনো একই দিনেও, ১০ হাজার ডলারের বেশি নগদ জমা দেন। এসব জমা তিনি নিজে না করে অন্য কেউ তার হয়ে ব্যাংকে প্রদান করেছেন। এভাবে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার ডলার জমা হয়। বিদেশে থাকা অবস্থায়ও তার আরএফসিডি হিসাবের মাধ্যমে দেশের ভেতর থেকে অর্থ জমা দেওয়া হয়েছে এবং পরে তা বিদেশে খরচ করা হয়েছে। একইভাবে আলায়না চৌধুরী বিদেশে থাকাকালীন অন্য একজনের মাধ্যমে তার হিসাবের ৬৮ হাজার ডলার জমা দেন, যা পরবর্তীতে বিদেশে ব্যয় করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব লেনদেন সম্পূর্ণ নিয়মবিরোধী। দেশীয় কার্ব মার্কেট থেকে সংগৃহীত বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে জমা দেওয়া হলেও মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশে ব্যয় করা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংকের সহযোগিতা ছাড়া এই ধরনের নিয়মভঙ্গ সম্ভব নয়। তদন্তের পরে ২৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংক এশিয়াকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর কে হুসেইন জরিমানার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, "ঘটনাটি ঘটার সময় আমি এমডি ছিলাম না। তবে দুজন গ্রাহকের ক্ষেত্রে এ ধরনের অনিয়ম হয়েছে বলে জেনেছি। নিয়ম অনুযায়ী কোনো গ্রাহক বিদেশ থেকে আসার পর সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার সঙ্গে রাখতে পারেন। এর বেশি হলে তা আরএফসিডি হিসাবে জমা দিতে হয়। ওই দুই গ্রাহক একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণের পর অতিরিক্ত ডলার নিজেদের কাছে রেখে পরবর্তী সময়ে ব্যাংকে বিক্রি করেছেন। ঘোষণা ছাড়া ব্যাংক এ ধরনের ডলার কিনতে পারে না। নিয়মবহির্ভূত কাজের কারণে ব্যাংককে জরিমানা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের অনিয়ম না ঘটে, সে বিষয়ে সব শাখায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।"
ব্যাংকিং খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অনিয়ম শুধু ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করে না, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতাকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। তাই ভবিষ্যতে ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকের আরএফসিডি হিসাবের ওপর আরও কঠোর নজরদারি চালাতে হবে।