নাগালের বাইরে ইলিশের দাম


April 2025/Ilish price.jpg

এক কেজি বা তারচেয়ে বড় ইলিশ কিনতে চাইলে আপনাকে দুই-তিন বাজার ঘুরতে হবে। কারণ বাজারে বড় সাইজের ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। এরপর যখন কোথাও এ মাছে খুঁজে পাবেন, সেখানে দাম শুনে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার অবস্থা হবে। এখন এক কেজি বা এর চেয়ে কিছুটা বড় ইলিশের দাম ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৪ হাজার টাকায় উঠেছে।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষ। যে কারণে এখন রাজধানীর বাজারে ইলিশ মাছের দাম বেশ ‘চড়া’। বিশেষ করে বড় সাইজের ইলিশের সরবরাহ একদমই কম। দাম আকাশচুম্বী। বৈশাখের আগের দিন রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।

ক্রেতাদের অভিযোগ, বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখে পান্তা-ইলিশের প্রধান অনুষঙ্গ ইলিশের এ ‘নগরকেন্দ্রিক’ চাহিদাকে পুঁজি করে ফায়দা লুটছেন পাইকারি ও খুচরা মাছ ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের দাবি, বৈশাখী উৎসব ঘিরে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বাজারগুলোয় ইলিশের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু বর্তমানে জাটকা ধরা নিষেধাজ্ঞায়, অনেক নদীর মোহনায় ইলিশ ধরা বন্ধ, ফলে বাজারে সরবরাহ কমেছে। এতে খুচরা ও পাইকারি- দুই বাজারেই ইলিশের দাম বেড়েছে।

মালিবাগ, রামপুরা ও মধ্যবাড্ডার বাজার ঘুরে এদিন ইলিশের যে খুচরা দাম পাওয়া গেছে সেটা হলো- ৭০০-৮০০ গ্রাম সাইজের ইলিশের দাম ২০০০-২৪০০ টাকা, ৫০০-৬০০ গ্রামের কেজি ১৩০০-১৫০০ টাকার মধ্যে, ৪০০-৫০০ গ্রামের কেজি ১০০০-১২০০ টাকা আর চার-পাঁচটা মাছ মিলে এক কেজি অর্থাৎ ২০০-২৫০ গ্রামের কেজি ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রামপুরা বাজারের মাছ বিক্রেতা আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এখন জাটকা ধরা বন্ধ, যে কারণে অনেক স্থানে মাছ ধরা বন্ধ আছে। আবার বৈশাখের পরের দিন থেকে মাছ আর পাওয়ায় যাবে না। যে কারণে মাছের বাজারে একটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে, যেখানে বৈশাখের মধ্যে চাহিদা বেড়েছে।’

বর্তমানে জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধ রয়েছে। যে কারণে দেশের বিভিন্ন অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এছাড়া আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন ইলিশ ধরা ও বাজারজাত সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে বিশেষ করে চট্টগ্রামের মাছ বেশি এসেছে বাজারে।

এদিকে খুচরা বাজারের পাশাপাশি পাইকারি বাজারেও ইলিশের দাম বেড়েছে। ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী ও মেরুল বাড্ডার পাইকারি আড়তে সরবরাহ সংকটে ইলিশের মণ ছুঁয়েছে লাখ টাকা। ছোট আকারের ইলিশের মণও ছাড়িয়েছে অর্ধ লাখ টাকা।

ইলিশ বিক্রেতা মাসুম আহমেদ বলেন, ‘গতরাতে প্রতি কেজি মাছের দাম আগের দিনের চেয়ে ২০০ টাকা বেড়েছে। এমনকি বরিশাল ও চট্টগ্রামের যেসব মোকাম থেকে ইলিশ আসছে, সেখানেও বেশি।’

কার্তিক সূত্রধর নামের একজন বলেন, ‘বরিশালের মাছ নেই। মেঘনা নদীর অভয়াশ্রমে দুই মাস ধরে মাছ শিকার নিষেধাজ্ঞা। এছাড়া অন্য সব নদ-নদীতেও বর্তমানে ইলিশসহ অন্য মাছের বেশ আকাল চলছে।’

বাড্ডার বাজারে ৭০০ গ্রাম সাইজের ইলিশের হালি ১০ হাজার টাকা হাঁকছিলেন বিক্রেতা আব্বাস উদ্দিন। তার কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে এসব মাছ ২ হাজার টাকার নিচে ছিল প্রতিপিস। অর্থাৎ হালিতে ২ হাজার টাকার বেশি বেড়েছে।’

ওই বাজারে ইলিশ কিনতে আসা একজন ক্রেতা বলেন, ‘কিছুই না, এরা (মাছ বিক্রেতারা) সুযোগ বুঝে কোপ মারছে। কিছু বড়লোক আছে, তারা কিনছেনও। তবে আমাদের মতো যারা হিসাব করে সংসার চালায় তাদের বৈশাখে মাছ জুটবে না।’

এদিকে বাজারে বড় মাছের সরবরাহ একেবারেই কম কেন জবাবে জাহাঙ্গীল আলম নামের একজন বিক্রেতা বলেন, ‘এক কেজি সাইজের ইলিশ পাইকারিতে ৩২০০-৩৫০০ টাকা। কিনে এনে কী দামে বেচবো? আর যদি বিক্রি না হয় তাহলে কী হবে? বৈশাখের পরে ইলিশ বেচা নিষিদ্ধ।’

এদিকে চড়া মাছের দাম ও ঈদের পরপরই বৈশাখ বলে এবার ইলিশের কাটতি কম বলে জানিয়ে পাইকারি মাছ বিক্রেতা শান্ত হোসেন বলেন, ‘ঈদের পরে মানুষের হাতে টাকা নেই। যে কারণে বিক্রি ভালো নয়।’

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×