
নরসিংদীর মাধবদীতে ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি কাঁপন অনুভূত হয়েছে উঁচু ভবনগুলোতে। উৎপত্তিস্থলের কাছাকাছি হওয়ায় ১৪ তলা জে অ্যান্ড জে টাওয়ারের ভেতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভবনের তিনতলা জুড়ে হাসপাতাল ও ওপরের তলাগুলোতে বসবাসকারী শতাধিক মানুষ ভূমিকম্পে হুড়োহুড়ি করে নিচে নামতে থাকেন।
হাসপাতালের চেয়ারম্যান সনেট মো. নোমান জানান, ভবনটি দুই পাশেই কেঁপে ওঠায় রোগীরা জীবন বাঁচাতে স্যালাইন হাতে নিয়েই বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন। একাধিক এক্সিট থাকায় বড় কোনো বিপদ হয়নি।
ভবনটির তত্ত্বাবধায়ক ইয়াসির আরাফাত ও নিরাপত্তাকর্মী ফালু মিয়া বলেন, এত তীব্র ঝাঁকুনি তাঁরা আগে কখনো দেখেননি। কম্পন থামার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাসিন্দারা আবার ফ্ল্যাটে ফিরে যান।
পুলিশ জানিয়েছে, ভূমিকম্পে দৌড়াদৌড়ি, পড়ে যাওয়া ও আতঙ্কে আহত হয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে অন্তত ৮০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
ভূমিকম্পের সময় ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ
কেন্দ্রের একটি সাবস্টেশনে আগুন লাগে। যন্ত্রাংশ পুড়ে যাওয়ায় পলাশ ও ঘোড়াশালের বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রকৌশলীরা জানান, ভূমিকম্পের ঝাঁকুনির কারণেই আগুনের সূত্রপাত হয় এবং দুপুরের পরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসে।
ভবনে ফাটল ও মানুষের আতঙ্ক
ঘোড়াশাল ঈদগাহ রোডের একটি মাদ্রাসার ছয়তলা ভবনের চার-পাঁচটি জায়গায় ফাটল দেখা গেছে। ভবনে থাকা শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে ছুটোছুটি করেন। মাধবদী, ছোট মাধবদী ও আশপাশের এলাকায় বাসিন্দাদের মাঝেও তীব্র ভয় ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে পরিবার নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে আসেন। কেউ কেউ ভবন থেকে নামতে গিয়ে হাত-পায়ে আঘাতও পান।
বিভিন্ন উপজেলায় পাঁচজনের মৃত্যু
ভূমিকম্প-সম্পর্কিত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নরসিংদীর তিন উপজেলায় পাঁচজন মারা গেছেন; সদর উপজেলায় নির্মাণসামগ্রী ছিটকে পড়ে একতলা বাড়ির ছাদ ধসে বাবা-ছেলে নিহত হয়, পলাশে মাটির ঘরের দেয়াল ধসে একজন এবং স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু হয় এদিকে শিবপুরে গাছ থেকে পড়ে একজন নিহত হন।
মাটিতে ফাটল
পলাশ উপজেলায় দুটি স্থানে মাটিতে লম্বা ফাটল দেখা গেছে; একটি পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে কাঁচা সড়কে, আরেকটি ঘোড়াশাল ডেইরি ফার্মের আঙিনায়। স্থানীয়রা বলছেন, ভূমিকম্পের তীব্র দোলায় এসব ফাটল তৈরি হয়।