
কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলে আবারও নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। মাছ ধরার সময় নাফ নদীর জলসীমা অতিক্রম করায় মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি ছয় রোহিঙ্গা জেলে ও তাদের ট্রলারটি আটক করেছে। বুধবার সন্ধ্যায় শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকাম চ্যানেলের কাছে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আটক হওয়া জেলেরা টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকাল ১১টা পর্যন্ত তাদের অবস্থান বা মুক্তির বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীঘাট ট্রলারমালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমেদ জানিয়েছেন, “আবদুল মতলবের মালিকানাধীন ট্রলারটি মাছ ধরার পর ফেরার পথে নাফ নদীর সীমা অতিক্রম করে নাইক্ষ্যংদিয়ার দিকে চলে যায়। এরপর আরাকান আর্মির সদস্যরা ট্রলারসহ ছয় জেলেকে আটক করে নাইক্ষ্যংদিয়ার ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।”
আটক জেলেদের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন: মো. ইয়াছিন, মো. আয়াছ, আতাউর রহমান, জিয়াউর রহমান, কেফায়েত উল্লাহ ও রশিদ উল্লাহ।
ঘটনার পর থেকে স্থানীয় জেলেদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও অনেক ট্রলার এখনো ঘাটে নোঙর করে রয়েছে, অনেকে নদীতে নামতে সাহস পাচ্ছেন না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “রোহিঙ্গারা যেন আশ্রয়শিবির থেকে মাছ ধরতে বাইরে না যায়, সে বিষয়ে নজরদারি করা হচ্ছে।”
নাফ নদীতে জেলেদের আটক বা অপহরণের ঘটনা নতুন নয়। এর আগে ২৭ অক্টোবর চারজন বাংলাদেশি জেলে এবং ২৮ অক্টোবর সাত জেলেসহ আরেকটি ট্রলার আরাকান আর্মির হাতে পড়ে।
ট্রলারমালিক ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ মাসে আরাকান আর্মি নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর থেকে মোট ৩২৮ জন জেলেকে অপহরণ করেছে। এর মধ্যে ১৮৯ জন জেলেসহ ২৭টি ট্রলার উদ্ধার করা গেলেও এখনো ১৩৯ জন জেলে ও ১৮টি ট্রলার রাখাইন রাজ্যের কারাগারে বন্দি রয়েছে।
সীমান্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপসহ প্রায় ৮০ শতাংশ সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। সেখানে চলমান সংঘাতের কারণে সীমান্তজুড়ে গুলির আশঙ্কা ও অপহরণের ভয় বাড়ছে, পাশাপাশি টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচলও বন্ধ রয়েছে।