স্ত্রীর মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে স্বামীর মরদেহ ছিনিয়ে নিল প্রতিপক্ষ
- নরসিংদী প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৯:৫৮ পিএম, ০৪ আগস্ট ২০২৫

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পান্থশালা ফেরিঘাট এলাকায় সোমবার (৪ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে এক ব্যবসায়ীর মরদেহ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুযায়ী, মৃত ব্যবসায়ী তাজুল ইসলামের স্ত্রীর মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে লাশ নিয়ে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে দুপুর আড়াইটায় মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে।
তাজুল ইসলাম (৪৫) ছিলেন সায়দাবাদ বালুচর এলাকার মৃত মোতালিব মিয়ার ছেলে এবং পেশায় একজন মুদি ব্যবসায়ী।
স্থানীয় সূত্র ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, ২১ জুলাই উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়দাবাদ এলাকায় হানিফ মাস্টার ও এরশাদ মিয়ার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে এক নারী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। একই দিনে মুদি দোকানি তাজুল ইসলামকেও হানিফ মাস্টারের সমর্থকরা আটক করে মারধর করেন এবং তার পায়ে গুলি করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রবিবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় তাজুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউ সংকটের কারণে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই রাত ১২টার দিকে তিনি মারা যান।
সোমবার ভোরে নিহত তাজুলের মরদেহ নিয়ে তার স্ত্রী মর্জিনা খাতুন রায়পুরায় ফিরছিলেন। পথে অ্যাম্বুলেন্সটি পান্থশালা ফেরিঘাট এলাকায় পৌঁছালে হানিফ মাস্টারের অনুসারীরা তাকে থামিয়ে দেন এবং মর্জিনার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে মরদেহটি নিয়ে যান।
মর্জিনা খাতুন বলেন, “আমি মরদেহ থানায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই সময় হানিফ মাস্টারের লোকজন আমার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে লাশ নিয়ে যায়। ২১ জুলাই চাঁদার দাবিতে না পেয়ে ওরা আমার স্বামীকে গুলি করেছিল, আর এখন মরদেহও কেড়ে নিল।”
তিনি আরও বলেন, “আমার স্বামী তাজুল ইসলাম কোনো পক্ষের লোক ছিলেন না। তার ছোট মুদি দোকানের আয়ে চলত আমাদের সংসার। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে আমি এখন কীভাবে বাঁচব?” তিনি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
এদিন দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিপক্ষ তাজুলের মরদেহটি তার মামা, প্রবাসী সেন্টু মিয়ার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গোপনে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের প্রস্তুতি চলছিল। তবে পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বাড়ির পুরুষ ও নারী সদস্যরা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হানিফ মাস্টারের অনুসারী জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, “আমরা এসব ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
বাঁশগাড়ি তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক আতিয়ার রহমান জানান, “মরদেহটি মামা বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে নিহতের কোনো কাছের আত্মীয় উপস্থিত ছিলেন না। এক পায়ে প্লাস্টার ছিল, এবং মরদেহটি ময়নাতদন্ত ছাড়াই এলাকায় আনা হয়েছিল। তবে স্ত্রীকে অস্ত্র দেখিয়ে মরদেহ নেওয়ার বিষয়ে আমি অবগত নই। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সায়দাবাদ এলাকায় বিগত এক বছরে হানিফ মাস্টার ও এরশাদ মিয়া গ্রুপের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় এরশাদ অনুসারী সাতজন এবং হানিফপন্থী একজন প্রাণ হারিয়েছেন।