পচে যাচ্ছে পা: বিদেশে নিতে দীপংকরের দরকার বিজনেস ক্লাস টিকিট, সরকার দিল ইকোনমি!
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১১:২৩ এম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৬ মাস কাতরানোর পর দীপংকর বালার বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেয় ইকোনমি ক্লাসের প্লেনের টিকিট। তাকে এমন গুরুতর অবস্থায় বিদেশে নিতে প্রয়োজন নিদেনপক্ষে বিজনেস ক্লাসের টিকিট। ফলে ফিরিয়ে দেয় এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেউই দীপংকরের খোঁজ নিচ্ছে না। ফলে পা পচে যাওয়ার উপক্রম।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত মাদারীপুরের দীপংকর বালা বাম পায়ে গুলি লাগার পর থেকে ঢাকা মেডিকেলে শয্যাশায়ী। অভ্যুত্থানের ওপর গঠিত সরকারের ৬ মাস পার করার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গত ২৭ জানুয়ারি তুরস্কে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে সেই সিদ্ধান্তও আলোর মুখ দেখেনি গাফেলতির কারণে। দীপংরের পা ভাঁজ করা অসম্ভব, এমন দশায় বিদেশে নিতে নিদেনপক্ষে উড়জাহাজের বিজনেস ক্লাসে টিকিট করতেই হবে। জুলাইয়ে আহতদের চিকিৎসায় সরকারি বরাদ্দ আছে দেড়শো কোটি টাকা অথচ অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, দীপংরের তুরস্কাযাত্রা আটকে গেছে ইকোনমি ক্লাসে টিকিট কাটার কারণে। গুলিবিদ্ধ পায়ে এখন পচন ধরার উপক্রম।
সংবাদ মাধ্যমকে দীপংকর বালা বলেন, ‘আইসিইউটিতে ছিলাম ৬ দিন। এ পর্যন্ত আমার শরীরে ২২-২৩ বার রক্ত দেয়া লেগেছে। তুর্কি বিমানের টিকিট কাটার আগে আমার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছে। আমি ছবি ও ভিডিও পাঠিয়েছি। কিন্তু ইকোনমি ক্লাসের টিকিট কেটে দিয়েছে। বিমানবন্দরে যাওয়ার পর আমার অবস্থা দেখে তুর্কি এয়ারলাইন্স আমাকে বসিয়ে নিতে রাজি হয়নি। তারা বলেছেন, আমাকে নিতে হলে শুইয়ে নিতে হবে, বসিয়ে নেয়া সম্ভব না। কারণ আমার পা ভাঁজ করা যায় না। পরে যাত্রা বাতিল হয়ে যায়। পরে এসএমএস দিয়েছি। কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘আমার পা রাখার জন্য চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ইনফেকশনের কারণে আমার পা কাটা লাগবে।’
বিমানবন্দর থেকে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ ফিরিয়ে দেয়ার পর সপ্তাহ পেরোলেও এখন আর কেউ তার খোঁজ নিচ্ছেন না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডাক্তার মাহমুদুল হাসানকে কয়েক দিন ধরে চেষ্টা করেও তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।
দীপংকরের মতো জুলাই আন্দোলনে আহত প্রত্যেকেরই রয়েছে আলাদা আলাদা গল্প, ভিন্ন ভিন্ন ট্র্যাজেডি, যার নীরব সাক্ষী ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের ৬১৭ নম্বর কক্ষ। এই যেমন দিনের পর দিন দ্বারে দ্বারে ঘুরেও অর্থ সহায়তা পাননি ১৯ বছরের ইব্রাহিম। মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব পড়ছে হাজার হাজার জুলাই যোদ্ধার আহত জীবনে। ভবিষ্যতের চিন্তায় স্ট্রোকও করেছেন গুলিবিদ্ধ আলামিন। আন্দোলনের পর থেকে কোনো সমন্বয়কের দেখা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ তারা।
ইব্রাহিম বলেন, ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে আবেদন করেছি গত ২ জানুয়ারি। এরপর আমি ৪-৫ বার গেছি। প্রসেসিং চলছে বলে বার বার জানানো হয়। অপারেশনের আগে গিয়েও জানিয়েছি। কিন্তু এখনও কিছু পাইনি।’
আর আলামিন বলেন, ‘অনেক খরচ হয়েছে। কিন্তু তারা যেভাবে চায়, সেভাবে তো দিতে পারছি না। আমি ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হই। ৫ আগস্ট সরকারের পতন হয়। তখন তো ভাবিনি যে সরকারের পতন হবে, আর আমাদের খরচ কেউ দেবে। এজন্য কোনো রিসিট বা কোনো ডকুমেন্ট রাখিনি। ৬ মাস পারহয়ে গেছে। অথচ যাদের ডাকে রাস্তায় নেমেছি, তাদের সঙ্গে এখনও ওরকমভাবে দেখা হয়নি।’
অথচ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে দায়িত্ব নেয়ার পর জেলায় জেলায় চেক বিতরণ আর জনসংযোগ করেছেন সারজিস আলম। যদিও পরবর্তীকালে সমালোচনার মুখে পদ ছাড়েন তিনি। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যেই গঠন করা হয় গণ-অভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেল। এর সম্পাদক হাসান ইনাম বলছেন, ‘করপোরেট হাউজের মতো করে চালানোয় ব্যর্থ হয়েছে জুলাই ফাউন্ডেশন।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন বলেন আর যেটাই বলেন, তারা কিন্তু এখানে একটা অফিস খুলে বসে আছে। আহতরা এখানে আসছে। কিন্তু আমাদের দরকার ছিল, আহতদের কাছে জেলা পর্যায়ে, ইউনিয়ন পর্যায়ে যাওয়া। যেহেতু এটা ব্যর্থ হয়েছে, তাই এখন নতুন করে সময় এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকার অথবা জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ এখন ফাংশন না করলে এই ব্যর্থতার দায় আমাদের সবাইকে নিতে হবে। কিন্তু এটার জন্য আমরা প্রস্তুত না।’
নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে ‘২৪- এ যারা জীবন দিলেন অকাতরে, স্বৈরাচারের বুলেটে আহত হলেন নির্মমভাবে সেসব বীরদের সম্মান নিশ্চিত করুক রাষ্ট্র। সুচিকিৎসা ও অর্থ সহায়তা পেতে আহতরা অফিসে-অফিসে না ঘুরুক বরং সহায়তা পৌঁছাক বীরদের ঘরে- সেটাই চান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক।