আবু সাঈদকে গালি দেয়ায় প্রতিবাদ করতে গিয়ে হামলার শিকার জামায়াতের দুই নেতা
- মাদারীপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৭:১১ পিএম, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী বলায় প্রতিবাদ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর দুই নেতা। গত শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে উপজেলার হোসেনপুর পরিষদে এই ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, হোসেনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আলামিন খালাসির নেতৃত্বে এ সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এ সময় ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মহসিন ফকির ও সাংগঠনিক সম্পাদক আলী শেখ আহত হন। এ ঘটনায় উল্টো মহসিনকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পরে আওয়ামীপন্থীদের চাপ ও হামলা আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার রাতে রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর পরিষদে একটা বিবাহ-বিচ্ছেদের ঘটনা নিয়ে সালিশ বৈঠক বসানো হয়। এ সময় একজনের নামকে অনুসরণ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহিদ আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী-নেশাখোর বলে আখ্যায়িত করেন আলামিন খালাসি। সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিবাদ করেন মহসিন ফকির। এ নিয়ে মহাসিনের ওপর চড়াও হন আলামিন ও পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদি ইউনিয়নের মানোয়ার হোসেন। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তারা লোকজন নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর মহসিন ফকির ও আলী শেখকে মারধর করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো মহসিন ফকিরকে জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে রাজৈর উপজেলা জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীরা। এরপরই বিভিন্ন চাপ ও হামলা আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান মহসিন।
এদিকে, আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী বলায় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, অভিযুক্ত মানোয়ার ও তার লোকজন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদি ইউনিয়নের বাসিন্দা হলেও তারা প্রভাব বিস্তার করেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নে। তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। মানোয়ারের ভাতিজা রাঘদি ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য সাদ্দাম হোসেন তাদের এই দল নিয়ন্ত্রণ করেন। সাদ্দাম রাঘদি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
ভুক্তভোগী মহসিন ফকির বলেন, ‘নিহত আবু সাঈদকে যুবলীগের সভাপতি আলামিন সন্ত্রাসী ও নেশাখোর বলায় আমি প্রতিবাদ করেছি। এ জন্য তিনি ও রাঘদি ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা মানোয়ার ও তাদের লোকজন আমার ওপর হামলা করে হত্যাচেষ্টা চালায়। এ সময় স্থানীয়রা আমাকে বাঁচিয়েছে। এ ঘটনায় বিচার দাবি করায় উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির ও সাধারণ সম্পাদক উল্টো আমার বিপক্ষে অভিযোগ তুলে আমাকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে, যে কোন সময় আমার ওপর হামলা হতে পারে। এ জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি। এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।’
আলী শেখ বলেন, ‘মহসিন ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে আমি মার খেয়েছি। তার কোনো দোষ ছিল না। মানোয়ার ও তার লোকজন শহিদ আবু সাঈদ, বিএনপি ও জামায়াতকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। এর প্রতিবাদ করায় মহাসিনের ওপর হামলা চালিয়েছে।’
এ ব্যাপারে রাজৈর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আলী আহমেদ আকন বলেন, ‘মহসিনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাই, দল মনে করেছে তাকে অব্যাহতি দেয়ার দরকার তাই দিয়েছে। আর সাংগঠনিক সম্পাদক আলী শেখের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, তা পরবর্তী আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী আফরান জামি বলেন, ‘নিহত আবু সাঈদকে নিয়ে যারা গালাগালি করেছে, তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না। ইতিমধ্যে আমরা জেলা পর্যায়ে কথা বলেছি। দ্রুতই পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজনের ফোন পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল থেকে মহসিনকে উদ্ধার করেছি। কিন্তু এ বিষয়ে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।