
ঢাকার মোহাম্মদপুরের বহুতল ফ্ল্যাটে শান্তিপূর্ণ জীবন কাটানো আজিজুর রহমানের পরিবার একটি ভয়াবহ ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে যায়। আজিজুর রহমান, যিনি উত্তরার সানবিমস স্কুলে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক, তাঁর স্ত্রী লায়লা আফরোজ ও কন্যা নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। আজিজুর গ্রামের বাড়ি নাটোর সদর উপজেলায়। ২০১২ সাল থেকে তিনি পরিবারসহ ঢাকায় বসবাস করছিলেন।
পুলিশের ধারণা, চারদিন আগে আজিজুর বাড়িতে অস্থায়ী গৃহকর্মী হিসেবে যোগ দেওয়া আয়েশা হত্যাকাণ্ডে জড়িত। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যার দিন সোমবার সকাল ৭টা ৫২ মিনিটে কালো বোরকা পরে গৃহকর্মী বাসায় প্রবেশ করে। পরে ৯টা ৩৬ মিনিটে স্কুলের ইউনিফর্ম পরে ব্যাগসহ বাইরে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় তাকে। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।
আজিজুর রহমান জানান, সোমবার সকাল ৭টার দিকে তিনি স্বাভাবিকভাবে স্কুলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। পরীক্ষার কারণে দ্রুত ফিরে এসে ১১টার পরে বাসায় পৌঁছালে প্রথমে মেয়ের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান। এরপর রান্নাঘরে গিয়ে স্ত্রীর রক্তাক্ত দেহ দেখতে পান।
পুলিশ সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর বাসা তল্লাশি করলে বাথরুমে একটি চাইনিজ সুইচ গিয়ার এবং একটি ধারালো ছুরি পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এই দুইটি অস্ত্র দিয়ে মা-মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।
সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা গেছে, লায়লা আফরোজের শরীরজুড়ে ৩০টি জখমের চিহ্ন রয়েছে। তার কন্যা নাফিসা (১৫) গলায় চারটি গভীর ক্ষত রয়েছে। আফরোজের বাম গালে ৩টি, থুতনিতে ৪টি, গলার নিচে বাম পাশে ৫টি, বাম হাতে ৩টি, বাম হাতের কব্জিতে ১টি, ডান হাতের কব্জিতে ২টি, বুকের বাম পাশে ৯টি, পেটের বাম পাশে ২টি এবং তলপেটের নিচে ১টি জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। নাফিসার বুকের দুই পাশে ৪টি গভীর ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। ধারালো ছুরিকাঘাতের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তারা এমন ভয়ঙ্কর সুরতহাল দেখেননি। হত্যার পদ্ধতি ও নৃশংসতা দেখে ধারণা করা হচ্ছে, খুনি প্রশিক্ষিত।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান বলেন, "আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য পেয়েছি, সেসব যাচাই বাছাই চলছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি, হত্যার আগে পরে তার উপস্থিতি ও কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করে পরবর্তী তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাব।"