
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পাঠশালা থেকে কলেজ এবং পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়া এ বিদ্যাপীঠ দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল কলেজ পর্যায়ে, যা ছিল প্রায় ৩৮ বছর আগে।
বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন-২০২৫। আগামী ৩০ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে এক বছরের জন্য গঠিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন। দীর্ঘদিনের সংকট কাটিয়ে নতুন দিনের প্রত্যাশায় শিক্ষার্থীরা।
২০০৫ সালের ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন’-এ ছাত্র সংসদের বিধান না থাকায় দীর্ঘ ১৯ বছর কোনো ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন জকসু নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯তম সিন্ডিকেট সভায় জকসুর খসড়া নীতিমালা অনুমোদিত হয়। সর্বশেষ ২৭ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় জকসু নীতিমালা।
নির্বাচন ও সংসদের কাঠামো
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জকসুর কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদে ২১টি পদ এবং হল শিক্ষার্থী সংসদে ১৩টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের অধিকার, একাডেমিক ও আবাসন সংকট, পরিবহন, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে ভূমিকা রাখবেন।
প্রার্থী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্র
জকসু নির্বাচনে মোট ৩৪টি পদের বিপরীতে ১৯০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ১৫৭ জন এবং হল সংসদে ৩৩ জন প্রার্থী রয়েছেন।
কেন্দ্রীয় সংসদে পুরুষ প্রার্থী ১৩৯ জন এবং নারী প্রার্থী ১৮ জন। সদস্য পদে সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাতটি কার্যনির্বাহী সদস্য পদের বিপরীতে লড়ছেন ৫৭ জন প্রার্থী।
কেন্দ্রীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রার্থী সংখ্যা:
সহ-সভাপতি (ভিপি): ১২ জন
সাধারণ সম্পাদক (জিএস): ৯ জন
সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস): ৮ জন
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র সম্পাদক: ৪ জন
শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক: ৭ জন
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক: ৭ জন
সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক: ৭ জন
ক্রীড়া সম্পাদক: ৮ জন
পরিবহন সম্পাদক: ৪ জন
সমাজসেবা ও শিক্ষার্থী কল্যাণ সম্পাদক: ১০ জন
পাঠাগার ও সেমিনার সম্পাদক: ৬ জন
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক: ৫ জন
ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক: ১৫ জন
আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক: ৫ জন
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক: ৮ জন
কার্যনির্বাহী সদস্য: ৫৭ জন
হল সংসদ নির্বাচন
বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনে মোট ৩৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সহ-সভাপতি (ভিপি): ৩ জন
সাধারণ সম্পাদক (জিএস): ৩ জন
সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস): ২ জন
সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক: ২ জন
সংস্কৃতি সম্পাদক: ৪ জন
পাঠাগার সম্পাদক: ২ জন
ক্রীড়া সম্পাদক: ২ জন
সমাজসেবা ও শিক্ষার্থী কল্যাণ সম্পাদক: ৩ জন
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক: ৪ জন
কার্যনির্বাহী সদস্য: ৮ জন
ভোটকেন্দ্র ও ভোটগ্রহণ
কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনে মোট ৩৯টি ভোটকেন্দ্রে ১৭৮টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য ৩৮টি এবং হল সংসদের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি ১০০ জন ভোটারের জন্য একটি করে বুথ রাখা হয়েছে।
ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে। হলের নারী ভোটাররা হল সংসদের ১৩টি পদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সংসদের ২১টি পদে ভোট দিয়ে মোট ৩৪টি ভোট দিতে পারবেন। অন্যদিকে অন্যান্য ভোটাররা কেন্দ্রীয় সংসদের ২১টি পদে ভোট দেবেন।
ব্যালট পদ্ধতি ও ফলাফল
নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে ওএমআর শিটে। ভোটগ্রহণ শেষে মেশিনের মাধ্যমে ভোট গণনা করা হবে। নির্বাচন শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে ৩০ অথবা ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তন থেকে।
প্যানেল ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ
জকসু নির্বাচনে চারটি পূর্ণাঙ্গ ও একটি আংশিক প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। পূর্ণাঙ্গ প্যানেলগুলো হলো - ছাত্রদল ও ছাত্র অধিকার পরিষদের যৌথ প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’, শিবির সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’, বামপন্থী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের ‘মওলানা ভাসানী ব্রিগেড’ এবং ছাত্রশক্তি সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান’। এছাড়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ‘তরুণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামে একটি আংশিক প্যানেলও নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন থেকে শিক্ষার্থীরা একটি কার্যকর, প্রতিনিধিত্বশীল ও জবাবদিহিমূলক শিক্ষার্থী সংসদ প্রত্যাশা করছেন। আবাসন সংকট, পরিবহন সমস্যা, একাডেমিক পরিবেশ উন্নয়ন, ক্যাম্পাস নিরাপত্তা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় নির্বাচিত সংসদের সক্রিয় ভূমিকা দেখার আশা তাদের। অনেক শিক্ষার্থী মনে করছেন, জকসু নির্বাচনের মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে চলা বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের পথ খুলে যাবে।