
জনগণের ভোটে গঠিত সরকারকে জনগণের কাছেই জবাবদিহি করতে হবে, এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, “অবশ্যই কারও দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই সরকারের কাজ নয়।”
শনিবার (০৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত ‘হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলন–২০২৫’-এ লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোট। সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন, মঠ-মন্দির কমিটি ও নেতাকর্মীরা অংশ নেন। শুরুতে বেদ ও গীতা পাঠ এবং প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়।
তারেক রহমান সতর্ক করে বলেন, দেশ অস্থিতিশীল হলে “পতিত ও পলাতক ফ্যাসিবাদী অপশক্তির” পুনরুত্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে এই ‘গুপ্ত রাজনীতি’ সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
তিনি গুপ্ত কৌশলের উল্লেখ করে বলেন, অতীতে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় অনেকেই ফ্যাসিবাদের রোষানল এড়াতে ‘গুপ্ত কৌশল’ নিয়েছিল। এখন পরাজিত ফ্যাসিবাদী চক্রও একই কৌশলে গণতন্ত্রের উত্তরণ ব্যাহত করার চেষ্টা করতে পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
তারেক রহমান আরও বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের কারও কারও কর্মকাণ্ড আজ “আপনার, আমার, আমাদের” বহু মানুষের অধিকার ও সুযোগ ক্ষুণ্ন করছে। তাই পতিত শক্তিগুলোকে কোনো সুযোগ না দিতে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের গুরুত্বের বিষয়ে জোর দিয়ে তিনি বলেন, “গুপ্ত বাহিনীর সেই অপকৌশল থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম উপায় হলো ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা।” এজন্য বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকার ও আন্দোলনের সহযোগী দলের সঙ্গে সমঝোতার মনোভাব বজায় রেখেছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি সবসময়ই “শান্তিকামী, সহনশীল ও গণমুখী” দল—এমন মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ভিন্ন মত ও আদর্শের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নই দলের রাজনীতির মূল লক্ষ্য বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সম্মেলনে তারেক রহমান ঘোষণা দেন, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর জন্য ৫০ লাখ ‘ফ্যামিলি কার্ড’ বিতরণ এবং তরুণদের জন্য বৃহৎ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, “তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে তাদের কারিগরি ও ভাষা প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি।”
বাংলাদেশে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান আরও বলেন, “বৈচিত্র্যের মধ্যেই ঐক্যের বন্ধনই আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের সৌন্দর্য। এই বৈচিত্র্যময় সমাজে ঐক্যের মূল সূত্রই হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।
সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকারের বিষয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসাবে এই দেশে আপনার যতটুকু অধিকার, আমারও ঠিক ততটুকুই অধিকার। কারও বেশি বা কম নয়।” এ সময় তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের উত্থাপিত বিভিন্ন দাবি পূরণের আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের আহ্বায়ক সোমনাথ সেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবিগুলো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে উপস্থাপন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের সদস্যসচিব ও মুখপাত্র কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল, যুগ্ম আহ্বায়ক সমেন সাহা, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, হিন্দু ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার এবং মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা সুবর্ণা রানী ঠাকুর প্রমুখ।