
দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবে ‘মবোক্রেসি’ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গণমাধ্যমে ধারাবাহিক হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এসব ঘটনায় সরকারের দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক, রেডিও ও টেলিভিশনের বার্তা প্রধান এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে এ সভার আয়োজন করে বিএনপি।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলার প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “প্রথম আলো-ডেইলি স্টার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ দৃশ্য সারা বিশ্ব দেখেছে। সেটা আমাদের জন্য লজ্জার। এটাকে কোনোভাবেই শুধুমাত্র দুঃখ প্রকাশ করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে সমাপ্ত করতে পারব না। এখানে সরকারের দায়িত্ব ছিল সবচেয়ে বেশি।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, হামলার বিষয়ে আগাম গোয়েন্দা তথ্য থাকার পরও কেন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তার ভাষায়, “আমরা জেনেছি হামলার বিষয়ে ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট [গোয়েন্দা প্রতিবেদন] ছিল। কিন্তু সেটা আমলে নেওয়া হলো না কেন?”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলার পরেও শুনেছি এক–দুই ঘণ্টা পরে তারা রেসপন্ড (সাড়া) করেছে। সেটা কেন? কাদের হাতে আমরা এই রাষ্ট্রব্যবস্থা দেব? নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যারা দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদের ভূমিকাটাই প্রশ্নবিদ্ধ।”
গণমাধ্যমের ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষাপটে সালাহউদ্দিন বলেন, “কিছুদিন যাবৎ গণমাধ্যমকে চিহ্নিত করে, টার্গেট করে হামলা করতে দেখেছি। কিছু স্থাপনায়, ঠিকানায় মবোক্রেসিকে এলাউ করা হয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম ডেমোক্রেসি, কিন্তু হয়ে গেছে মবোক্রেসি। এ জন্য সরকারের দুর্বলতাকেই ইঙ্গিত করছি। এগুলো আরও কঠোর হাতে দমন করতে হবে।”
দেশের গণতন্ত্র ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশ নিয়ে গণপ্রত্যাশা ও গণআকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি। বাংলাদেশের সব মানুষ পূর্ণ গণতন্ত্র চায়, গণতন্ত্রকে সর্বক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে চায়। গণতন্ত্র বিনির্মাণের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের শক্তিশালী করতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে দাঁড় করাতে হবে—যাতে সেগুলো গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।”
গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “অনেকে গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলেন। সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকেরই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকবে, আছে—কিন্তু বাংলাদেশের স্বার্থের বিবেচনায় সব সময় আমরা যেন দেশের পক্ষেই থাকি। নিরপেক্ষ না থাকি।”
বিএনপি ক্ষমতায় এলে গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে—এ বিষয়ে তিনি বলেন, “রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব যদি জনগণ দেয়, তাহলে আমাদের সহযোগিতা থাকবে সর্বোচ্চ। আমরা অতীত ভুলে যেতে চাই, তবে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী কী করেছে, সেটা স্মরণে রাখতে চাই।”
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “জনগণ আশা করছে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের খুঁটিটা শক্তিশালী হবে। তিনি বাধ্য হয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর কষ্টকর নির্বাসিত জীবন যাপন করেছেন। তার এই প্রত্যাবর্তনকে আমরা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য কাজে লাগাতে চাই। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”