
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির দূরত্বের যে কথা বলা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন। তিনি উল্লেখ করেন, "ক্রিয়াশীল বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কারের পক্ষে যারা অবস্থান নেয়, আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময় আমরা যে সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছি, সেটির সঙ্গে কখনো জামায়াত একমত হয়েছে আবার কখনো তারা অবস্থান পরিবর্তন করেছে। একই জিনিস আবার বিএনপির সঙ্গেও হয়েছে। সেই জায়গায় যখন জামায়াত আমাদের সংস্কারগুলো ও মৌলিক প্রস্তাবনাগুলোকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, তখন মনে হয়েছে জামায়াতের সঙ্গে আমাদের হৃদ্যতা রয়েছে, একই জিনিস বিএনপির ক্ষেত্রেও হয়েছে। মূলত সংস্কারের পক্ষে যারা থাকবে, এনসিপির সঙ্গে তাদের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে। এই সংস্কারের বিপক্ষে যারা অবস্থান নেবেন, এনসিপির সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হবে।"
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে পিরোজপুর জেলা শাখার সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, "এক এগারো থেকে শুরু করে ফ্যাসিবাদকালীন পুরো সময়টা বাংলাদেশ একটা গণতন্ত্রহীন সময় অতিক্রান্ত করেছে। আমাদের এই গণতন্ত্রিক উত্তরণের জন্য একটা নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে এবং এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই আমাদের এই গণতান্ত্রিক উত্তরণের যাত্রা শুরু করতে পারব। এই যাত্রায় এনসিপি অন্যতম ও সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।"
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল, যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে সংস্কারের প্রস্তাবনার প্রতি বিভিন্ন দলের অবস্থান স্পষ্ট হচ্ছে। "সংস্কারগুলোর মৌলিক প্রস্তাবনাগুলোর পক্ষে যারা আছে, তারা বলছেন ‘হ্যাঁ’, আর বিপক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছেন বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে, বিশেষ করে এনসিসির প্রশ্নে, দুদককে স্বাধীনভাবে দূর করা হবে কিনা সেই প্রশ্নে এখন তারা হ্যাঁ-না’র মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে।"
তিনি আরও যোগ করেন, যারা ‘না’ বলছেন, তারা মূলত মৌলিক সংস্কারের বিরোধী। এনসিপি পক্ষ থেকে দ্রুত গণভোট সংক্রান্ত ‘অর্ডার’ জারি করার আহ্বান জানানো হয়েছে। "এই আদেশটি কোনো অধ্যাদেশ নয়, কোনো প্রজ্ঞাপন নয়, অবশ্যই আদেশ হতে হবে। এই আদেশটি আমাদের এই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যিনি প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তাকেই জারি করতে হবে। ফ্যাসিস্টের রেখে যাওয়া লেগেসির ধারক চুপ্পুর এই আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার নেই। গণঅভ্যুত্থানের লেগেসি হিসেবে ড. ইউনুসকেই আদেশটি দিতে হবে।"
নির্বাচনে জোটে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে তিনি বলেন, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ইতোমধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেন, জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মূলত সংস্কারের প্রতি সমর্থনের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে।
আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের প্রশ্নে হাসনাত আবদুল্লাহ মন্তব্য করেন, "বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ একটি ‘ডেড চ্যাপ্টার’। আওয়ামী লীগ ইজ গন। আওয়ামী লীগ আসলে আর প্রাসঙ্গিক নেই। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পুনর্গঠন সেদিন থেকেই সম্ভব হচ্ছে যেদিন থেকে আওয়ামী লীগবিহীন বাংলাদেশ শুরু হয়েছে। আমরা দেখেছি, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীকে আওয়ামী লীগকে কাছে টানার বিভিন্ন প্রচেষ্টা চলছে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় যা দেখা যাচ্ছে। এটি দুঃখজনক। বিএনপি-জামায়াতের ত্যাগী নেতারা যারা ফ্যাসিবাদের সময় জীবন দিয়েছেন, গুম হয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন, শ্রম দিয়েছেন তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এখন যদি আবার সমঝোতা হয়, এটি জনগণই নির্ধারণ করবে তারা কাকে ভোট দেবে। আমার কাছে মনে হয় না যে এই ব্যাকডোর সমঝোতা ফলপ্রসূ হবে।"
নির্বাচন কমিশনে শাপলাকলি প্রতীক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, "আমরা বারবার বলে আসছি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে কোনো নীতিমালা নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হয় যা তাই দেয়, মাইক দেখলে মাইক, মোবাইল দেখলে মোবাইল, ট্রাইপড দেখলে ট্রাইপড, সূর্য দেখলে সূর্য! কোন নীতিমালার আওতায় শাপলাকলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। কোন নীতিমালার মধ্য দিয়ে শাপলা অন্তর্ভুক্ত করা হয় নাই তারা কিন্তু তা স্পষ্ট করে নাই আবার কোন নীতিমালার মধ্য দিয়ে বেগুনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তারা সেটাও স্পষ্ট করে নাই। নির্বাচন কমিশন এভাবে চলতে পারে না। এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং অবশ্যই নীতিমালা ও নিয়মের ভিত্তিতেই চলতে হবে।"
এ সময় এনসিপির বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন, কেন্দ্রীয় সদস্য ও বরিশাল জেলার প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাঈদ মুসা, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ও পিরোজপুর জেলার প্রধান সমন্বয়কারী মশিউর রহমান, পিরোজপুর জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী মো. আল আমিন খান, মাহবুবুল আলম নাঈম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, পিরোজপুর সদর উপজেলা অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ও পিরোজপুর জেলার প্রধান সমন্বয়কারী মশিউর রহমান।