
গাজায় ২৪৫ জন সাংবাদিক নিহত হওয়ার ঘটনায় রয়টার্সের ভূমিকাকে ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’ উল্লেখ করে পদত্যাগ করেছেন কানাডিয়ান ফটোসাংবাদিক ভ্যালেরি জিঙ্ক। তিনি অভিযোগ করেছেন, রয়টার্স ইসরায়েলের পক্ষ নেয়ার মাধ্যমে নিহত সাংবাদিকদের প্রতি ন্যায্যতা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) নিজের ফেসবুক পোস্টে জিঙ্ক লিখেছেন, “গত আট বছর ধরে আমি রয়টার্সে কাজ করেছি। আমার তোলা ছবি নিউ ইয়র্ক টাইমস, আল-জাজিরা এবং ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তবে গাজায় ২৪৫ জন সাংবাদিকের হত্যাকাণ্ডকে ন্যায়সঙ্গত দেখানোর কারণে এখন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা অসম্ভব।”
তিনি অভিযোগ করেছেন, ১০ আগস্ট গাজার নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় সাংবাদিক আনাস আল-শরীফ ও আল জাজিরা দলের নিহত হওয়ার পরেও রয়টার্স ইসরায়েলের ভিত্তিহীন দাবি প্রকাশ করে যে আল-শরীফ হামাসের সদস্য ছিলেন। জিঙ্ক বলেন, “রয়টার্স ইসরায়েলের ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি’ পুনরাবৃত্তি করেছে, যা পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর অনেক মিথ্যার অংশ।”
জিঙ্ক আরও বলেন, “গত আট বছরে আমার কাজ মূল্যবান ছিল, কিন্তু এখন আমি এই প্রেস পাস পরে শুধু গভীর লজ্জা ও শোক অনুভব করছি।” তিনি অভিযোগ করেন, রয়টার্সের ইসরায়েলি প্রচারণা সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
গতকাল সোমবার নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলায় রয়টার্সের ক্যামেরাম্যান হোসাম আল-মাসরিসহ অন্তত ছয় সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। জিঙ্ক বলেন, “রয়টার্স ইসরায়েলের প্রচারণার কারণে নিজেদের সাংবাদিকদেরও রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। নাসের হাসপাতালে হামলা ছিল ‘ডাবল ট্যাপ’, যেখানে প্রথমে বোমা বর্ষণ করা হয়, পরে উদ্ধারকারী ও সাংবাদিকরা পৌঁছালে আবার আঘাত হানা হয়।”
তিনি পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোকেও দায়ী করেছেন। সাংবাদিক জেরেমি স্কাহিলকে উদ্ধৃত করে জিঙ্ক বলেন, “নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে রয়টার্স পর্যন্ত প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলো ইসরায়েলি প্রচারণার পরিবাহক বেল্টে পরিণত হয়েছে। তারা যুদ্ধাপরাধ আড়াল করেছে, ভুক্তভোগীদের অমানবিক করেছে এবং নিজেদের সহকর্মীদেরও ত্যাগ করেছে।”
জিঙ্ক দাবি করেন, সাংবাদিকদের মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র দুই বছরে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, যুগোস্লাভিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ মিলিয়ে নিহত সাংবাদিকের সংখ্যাকে ছাড়িয়েছে। তিনি বলেন, আল-শরীফের পুলিৎজার পুরস্কার জয়ী কাজের পরও রয়টার্স তার সুরক্ষা নিশ্চিত করেনি এবং ইসরায়েলি হুমকির পরও তার পাশে দাঁড়ায়নি।
পদত্যাগের ঘোষণায় জিঙ্ক বলেন, “গত আট বছরে রয়টার্সে আমার কাজ মূল্যবান ছিল, কিন্তু এখন শুধু লজ্জা ও শোক অনুভব করছি। আমার সব অবদান আমি গাজার সাহসী সাংবাদিকদের জন্য উৎসর্গ করব।”
সূত্র: আনাদোলু