
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দ্রুত নির্বাচনের কথা বললে আমার অনেক সমালোচনা হয়। একজন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছি, যদি অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ না থাকে তাহলে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার হবে নির্বাচনকালীন।’
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। শহীদ আসাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভার আয়োজন করে শহীদ আসাদ পরিবার।
মির্জা ফখরুল সভায় আরো বলেন, ‘২৪’-এর ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে আমরা একজন ফ্যাসিস্ট শাসককে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি। ৬৯ গণঅভ্যুত্থানের তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু, আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি।’
আমরা এখনো একটা নির্বাচনী ব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এটা একটা সামগ্রিক ব্যাপার। আমরা যারা রাজনীতি করি, তারা বদলানোর চেষ্টা করি। কিন্তু, সব সময় সেটা পারি না।’
গত ১৫ বছর আমরা ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘অবশেষে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। সেই বিজয়ের মধ্যদিয়ে সামনের দিনগুলোতে প্রত্যাশা-আশা করছি, যারা প্রাণ দিয়েছে তাদের স্বপ্নগুলো যেন বাস্তবায়ন করতে পারি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষ একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চায়। সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তারা তাদের অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা তাদের মোটা ভাতকাপড় পরে থাকতে পারেন। তবুও ভোটাধিকার ফিরে পেতে চান। কথা বলার অধিকার চান। তাদের সন্তানরা যেন লেখাপড়া শিখতে পারেন সেটা চান। তারা ন্যায়বিচারের সমাজ চান।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটা কথা আমি সব সময় বলি। যেই কথা বললে আমার অনেক সমালোচনা হয়। আমি বলি নির্বাচনটা দ্রুত হওয়া দরকার। কেন বলি সেটাও অনেক বার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আমি বিশ্বাস করি বিগত ১৫ বছর নির্বাচন থেকে আমরা বঞ্চিত। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পাবে। এখন সেই বিষয়টাকে যদি জোর করে বিতর্কিত করে ফেলা হয়, তাহলে জনগণ আবার সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে ‘
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এই ধরনের নির্বাচন যদি দ্রুত না হয়, তাহলে অন্যান্য শক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তখন জনগণের যে চাহিদা সেখান থেকে তারা পুরোপুরি বঞ্চিত হয়। আমরা এই কথাটা বারবার বলতে চাই, নির্বাচনে কে ক্ষমতায় আসবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, যার জন্য গত ১৫ বছর আমরা লড়াই করেছি।’
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পরে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। একটা বিষয়ে সবাই একমত একটা নির্বাচন হওয়া দরকার। সেই নির্বাচন শুধু একটা দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। নির্বাচন হচ্ছে গণতান্ত্রিক পথে যাওয়ার একটা পথ সৃষ্টি করা।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আজকে সবগুলো সংস্কার শেষ করে নির্বাচনে যাওয়ার কথা আসছে। তাহলে কি এখন আমরা ৪-৫ বছর ধরে অপেক্ষা করব? তাহলে কি যত দিন সংস্কার না হয়, তত দিন জনগণ অপেক্ষা করবে?’
আমলাতন্ত্র আগে যে ব্যবস্থায় ছিল, এখন সেই ব্যবস্থায় সচিবায়ল থেকে প্রশাসনে সব জায়গায় দলীয়করণ করা হচ্ছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সেই কারণে আমরা বলছি, দ্রুত নির্বাচন হওয়া দরকার।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাকে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেছেন, আমি বলেছি যদি অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ না থাকে, তাহলে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার দরকার হবে। আমি কথা বলেছি, তার কারণ আছে। আমরা দেখছি বেশ কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা পালন করতে পারছে না। আমরা আশা করবে. অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা পালন করবে। দেশে যে সংকট আছে, সেটা থেকে মুক্ত করবে।’
শহীদ আসাদ আমাদের ইতিহাসের একটি নাম উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাকে যতই স্মরণ না করুক কিন্তু ইতিহাস থেকে আসাদকে কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। অমর হয়ে থাকবে আসাদ।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়নকারী জোনায়েদ সাকি, বিএনপির নেতা আমানউল্লাহ আমান, জহির উদ্দিন স্বপন, খায়রুল কবির খোকন।