
রোববার রাতজুড়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে আগুনের ঘটনায় থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির রায় ঘোষণার আগের রাতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক নাশকতা চালিয়েছে বলে জানা গেছে।
রোববার ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। পরিবেশ উপদেষ্টার বাসা ও এনসিপি কার্যালয়ের সামনে, কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারা মোড়, মিরপুর ১২ মেট্রো স্টেশনের নিচে, শ্যামপুর ফ্লাইওভারের ওপর, দারুস সালাম থানার রোজিনা পেট্রোল পাম্পের পেছনে, মহাখালী, বাড্ডা, তিতুমীর কলেজ গেটের সামনের সড়ক, আমতলী মোড় এবং ফার্মগেট রেলক্রসিংয়ে চলন্ত ট্রেনে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এসব ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই সময়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ডাম্পিংয়ে থাকা দুটি পরিত্যক্ত লেগুনায় আগুন দিয়ে দ্রুত সরে যায় দুর্বৃত্তরা।
ঢাকার বাইরে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। কিশোরগঞ্জের স্টেশন রোডে গ্রামীণ ব্যাংকের যশোদল শাখার নিচতলায় আগুন লাগানো হয়। এছাড়া পাকুন্দিয়ার শ্রীরামদী এলাকায় গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ করা হয়। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ বিভিন্ন জেলায়ও বোমাবাজি ও নাশকতার ঘটনা ঘটে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, "কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা ও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।"
পুলিশ জানায়, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য সহিংস কর্মকাণ্ড ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। রোববার থেকেই ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে দলীয় কর্মীদের সমাবেশ ঠেকাতে সকল থানাকে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। পাশাপাশি রেল ও নৌপথেও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, "যারা মানুষ ও পুলিশ সদস্যদের ওপর ককটেল হামলা ও যানবাহনে আগুন দেবেন, আইনসম্মতভাবেই তাদের ওপর গুলির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।"
ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, পুলিশের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, "কোনো দল বা গোষ্ঠী নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে, পুলিশ দেশ ও জনগণের স্বার্থে তা প্রতিরোধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।"
তিনি আরও জানান, সুপ্রিম কোর্টের মাজার গেট এলাকায় ডিএমপি, বিজিবি ও এপিবিএনের সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে দায়িত্ব পালন করবেন।