
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বর্তমানে ভারতে নির্বাসিত জীবন যাপন করা শেখ হাসিনা এক শোক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অবদানকে গুরুত্বপূর্ণ ও অমোঘ হিসেবে উল্লেখ করেন।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতিতে এবং বিশেষ করে বিএনপি নেতৃত্বে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।” তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবার ও বিএনপির নেতাদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং আল্লাহর নিকট তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করেন।
ঢাকা ও ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর এটিই শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আসা প্রথম বড় ধরনের আনুষ্ঠানিক শোক বার্তা। বার্তায় তিনি বিশেষভাবে বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন লিভার, কিডনি, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ২৩ নভেম্বর থেকে তিনি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোমবার দিবাগত রাত ২টার পর তার শারীরিক অবস্থা গুরুতরভাবে অবনতি হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা হাসপাতালে ছুটে যান। চিকিৎসকদের চেষ্টা সত্ত্বেও মঙ্গলবার ভোর ৬টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। হাসপাতালের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
খালেদা জিয়া নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের মাধ্যমে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। ৪১ বছর ধরে বিএনপির নেতৃত্বে থেকে তিনি একাধিকবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে কখনও পরাজিত হননি। তিনি তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দুবার বিরোধীদলীয় নেতার ভূমিকাও পালন করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজপথের আন্দোলন এবং জেল-জুলুম সহ্য করেও দেশে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। তার প্রয়াণে কেবল বিএনপি নয়, দেশের রাজনৈতিক কাঠামোরও এক শক্তিশালী স্তম্ভ পতিত হলো।