
মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার কেন্দ্রে যখন গাজা সংকট আরও ঘনীভূত, তখন বিশ্ব বিবেকের প্রতিনিধি হিসেবে গাজার অবরোধ ভাঙতে এগিয়ে এসেছে একটি আন্তর্জাতিক নৌবহর। সেই বহরের অন্যতম একটি জাহাজ ‘কনশানস’-এ অবস্থান করছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম। শনিবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে তিনি জানান, এই বিশাল মানবিক উদ্যোগ কোনোভাবেই থামাতে পারবে না ইসরায়েল।
"ইসরায়েল যে পরিকল্পনাই করুক; এই মানবসমুদ্র থামাতে পারবে না। আমরা কনশানসের মানুষেরা অবরোধ ভাঙতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা যদি আমাদের আটকায়, তখন অন্যরা এগিয়ে আসবে। দমন-পীড়নকারী কখনোই জনগণের শক্তির বিরুদ্ধে টিকতে পারেনি। ইসরায়েলও ব্যর্থ হবে। মুক্ত হবে ফিলিস্তিন" - এমন প্রত্যয়ই ব্যক্ত করেছেন শহিদুল।
তিনি জানান, গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ‘কনশানস’ জাহাজটি এর আগেই যাত্রা শুরু করা আটটি নৌযানকে অতিক্রম করেছে। উচ্চ গতির জন্যই এই সংযুক্তি সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে ‘কনশানস’-এর গতি হ্রাস করে পুরো বহরকে একত্রে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
জাহাজটি আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’ (FFC) এবং ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা’ (TMTG)-এর উদ্যোগের অংশ। এই দুটি সংগঠন ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের অবরোধ ভেঙে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামে একটি আন্তর্জাতিক মিশনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। যদিও বহরটিতে সরাসরি খাদ্য সহায়তা নেই, তবুও প্রতীকী ও রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট।
নিজের পোস্টে শহিদুল আলম বলেন, "থাউজেন্ড ম্যাডলিনস একটি অবিস্মরণীয় ধারণা। জাতিগত নিধন ঠেকাতে বিশ্বনেতাদের পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়তা এবং কপট ভূমিকার কারণে বিশ্বের জনগণ নিজেরাই পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হাজারো জাহাজের ধারণাটি প্রতীকী। তবে নিঃসন্দেহে এভাবে একত্রিত হওয়া সমুদ্রযানের সবচেয়ে বড় বহর এটি।"
‘কনশানস’ নামের এই জাহাজটি বহরের সবচেয়ে বড় বলে জানান শহিদুল। এটি যাত্রা শুরু করেছে ৩০ সেপ্টেম্বর ইতালি থেকে, অন্য আটটি নৌযান আগে থেকেই রওনা হয়েছিল। এছাড়া ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’-এর আরও দুটি নৌকা আগে পথে ছিল, তবে সেগুলোর বর্তমান অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গতি বেশি হওয়ায় ‘কনশানস’ পরে রওনা দিলেও অন্য জাহাজগুলোর সাথে মিলিত হয়েছে এবং এখন সবকটি একত্রে গাজার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, কনশানস জাহাজে ২৫টি দেশের সাংবাদিক ও চিকিৎসক আছেন। গত বুধবার শুরু হওয়া এই সর্বশেষ মিশনের লক্ষ্য হলো গাজায় অবরোধ ভেঙে প্রবেশ করা এবং সেখানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবিক সহায়তার গুরুত্ব তুলে ধরা।
উল্লেখযোগ্যভাবে, গত দুই বছর ধরে ইসরায়েল গাজায় আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ রেখেছে। সেইসঙ্গে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকরাও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ২৭০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং আরও অনেকে আটক ও বন্দী রয়েছেন।
এই মানবিক ফ্লোটিলা শুধু ত্রাণের নয়, এটি একটি প্রতিবাদ, একটি বার্তা যা ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ।