
সরল বিশ্বাসী মানুষের বিভিন্ন সমস্যা দূর করার নামে কক্সবাজারের মহেশখালীর পানির ছড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে তন্ত্রমন্ত্রভিত্তিক অপচিকিৎসা চালিয়ে আসছেন কায়সার, যিনি স্থানীয়দের কাছে ‘কায়সার বৈদ্য’ নামেই পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ‘গাছা’ বা ‘আসন’ বসানোর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় তিনি এখন মহেশখালী ছাড়িয়ে অন্য এলাকাতেও আলোচিত।
উত্তর ফকিরা ঘোনার বাসিন্দা কায়সার গত চার বছর ধরে হোয়ানক ইউনিয়নের পানির ছড়ার পাহাড়ি এলাকায় বসতি গড়ে তুলেছেন। প্রায় আট বছর ধরে জিন তাড়ানো থেকে শুরু করে দাম্পত্য সংকট, জাদু-টোনা বা অদৃশ্য সমস্যা নিরাময়ের দাবি করে চিকিৎসা দেওয়ার প্রচার চালিয়ে আসছেন তিনি।
তার আসনঘরে গেলে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষদের ভিড়। নানা সমস্যার সমাধান খুঁজতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোগীদের লাইন লেগে থাকে। চিকিৎসার ফি নির্দিষ্ট নয়, পরিস্থিতি দেখে যে পরিমাণ বলা হয়, রোগীদের সেটাই দিতে হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ‘আসন’ বসানোর জন্য অনেক সময় ১০০১ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। যাদের আর্থিক সামর্থ্য বেশি, তাদের কাছ থেকে আরও বড় অঙ্ক দাবি করা হয়।
কায়সারের অধীনে পাঁচজন কর্মী কাজ করেন, যাদের কারওই চিকিৎসা বিষয়ে শিক্ষা নেই। প্রত্যেকের মাসিক বেতন প্রায় ২০ হাজার টাকা। পাশাপাশি সেখানে একজন মাওলানাও রয়েছেন, যার কাজ তাবিজ লেখা।
নিজের আয়-রোজগার নিয়ে কায়সার বৈদ্য দাবি করেন, “প্রতিমাসে কর্মচারীদের বেতন দিয়ে তার সর্বনিম্ন আয় ১ লাখ থেকে ১.৫ লাখ টাকা।” তবে এসব আয়ের কোনো নথিপত্র নেই, প্রশাসনের অনুমোদনও নেই।
তার আসনঘরে দেখা যায় ভৌতিক সিনেমার মতো লাইট, নাটকীয় সাজসজ্জা, যা রোগীদের মানসিকভাবে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। তার চেয়ারের পাশে সেলফজুড়ে সাজানো রয়েছে নানা তান্ত্রিক বই। অভিযোগ রয়েছে, “কায়সার নিজেই এসব বই পড়তে জানেন না। শুধুই চিকিৎসার ভান ধরে রাখতে বইগুলো রাখা হয়েছে।”
নিজের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কায়সার স্বীকার করে বলেন, তিনি একসময় রিকশা চালাতেন। পরে কঠোর পরিশ্রম করে ধীরে ধীরে বৈদ্য পেশায় সম্পৃক্ত হন।
এদিকে অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন, “এখানে চিকিৎসার নামে প্রতারণাই চলছে। অশিক্ষিত লোক দিয়ে রোগী দেখা, অযৌক্তিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা এবং অর্থ আদায়- সব মিলিয়ে এটি মানুষের কুসংস্কারকে কাজে লাগিয়ে উপার্জনের মাধ্যম।”
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেদায়েত উল্ল্যাহ বলেন, “বিষয়টি জানা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মাহফুজ আহমেদ জানান, “এই কায়সার বৈদ্য অনেক সময় কঠিন রোগীদের চিকিৎসার নামে ধরে রাখেন, ফলে সঠিক সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়ায় রোগীর অবস্থা আরও জটিল হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”