চট্টগ্রাম শহরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিএনপি ও জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর কার্যক্রম চোখে পড়ার মতোভাবে দৃশ্যমান হয়েছে। লকডাউন ডেকেও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নামেননি, ফলে শহরের সাধারণ জনজীবনে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। যান চলাচল অন্যান্য দিনের তুলনায় সামান্য কম ছিল। তবে চোরাগোপ্তা হামলার আতঙ্কে কিছুটা উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করা গেছে যানবাহন মালিক ও চালকদের মধ্যে, ফলে যাত্রীর সংখ্যা সামান্য কম ছিল। অফিস ও আদালত স্বাভাবিকভাবে খোলা থাকলেও সেবাপ্রার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলার কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শহরের বিভিন্ন এলাকায় সতর্ক অবস্থান এবং টহল দিচ্ছে। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ও ফোর্স নিয়ে টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এছাড়া বুধবার রাত থেকে চট্টগ্রাম শহরে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
এর বিপরীতে, নাশকতা রোধের লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি, জামায়াত এবং সমমনা দলের নেতাকর্মীরা বুধবার থেকে শহরে সক্রিয়। বুধবার রাতের বিভিন্ন মিছিল ও বৃহস্পতিবার ভোর থেকে মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি এবং বাইক শোডাউন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোথাও নেতাকর্মীরা লাঠি হাতে অবস্থান করছেন।
মাঠপর্যবেক্ষণ ও স্থানীয় খোঁজে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে নগরের বিভিন্ন এলাকায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেছেন। নগরের প্রধান প্রবেশমুখ বাকলিয়া থানার শাহ আমানত সেতুর এলাকায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। চান্দগাঁও ও বহদ্দারহাট মোড়ে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা পৃথক কর্মসূচি পালন করছেন। বহদ্দারহাট মোড় ও মুরাদপুর এলাকায় মাইক বাজিয়ে সরব ছিলেন তারা। বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকায়ও বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা অবস্থান এবং মিছিল করেছেন।
ছাত্রশিবিরের মহানগর উত্তর শাখার প্রচার সম্পাদক সিরাজী মানিক জানান, "নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নাশকতা প্রতিরোধে চট্টগ্রাম শহরজুড়ে বাইক শোডাউন চলছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহানগর উত্তর সভাপতি তানজীর হোসেন জুয়েল ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইমুনুল ইসলাম মামুন। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ছাত্রশিবিরের এই কার্যক্রম দিনব্যাপী অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।"
মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) শওকত আজম খাজা বলেন, "আমাদের পাল্টা কোনো কর্মসূচি নেই।"
তিনি বিএনপি ছাত্রদলের কার্যক্রম নিয়ে বলেন, "সেটি তাদের কর্মসূচি হতে পারে। তবে আমাদের দলীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি নেই।"
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী লকডাউন কর্মসূচি চালিয়েছে। এদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। মামলার রায় আগামী ১৭ নভেম্বর (সোমবার) ঘোষণা হবে। ওই মামলার আসামি হিসেবে রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। জুলাই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় এটি প্রথম মামলা, যার রায় ঘোষণার তারিখ প্রকাশিত হলো।