
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আট বছরপূর্তিতে পশ্চিমা বিশ্বের ১১টি দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড এক যৌথ বিবৃতিতে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সোমবার সকালে ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস তাদের এক্সহ্যান্ডেল এবং ফেসবুক পেইজে যৌথ বিবৃতিটি প্রকাশ করে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আট বছর পেরোনোর পর আমরা মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সেই কর্মকাণ্ড স্মরণ করছি, যার ফলে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, এবং আশ্রয়শিবিরে নতুন আগমণও চলছে।
বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ধৈর্য এবং সহনশীলতার প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে কঠিন বাস্তবতা ও বাস্তুচ্যুতি সহ্য করছেন, বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যের বর্তমান নিরাপত্তাহীনতা ও মানবিক সংকটের মধ্যেও তারা দৃঢ়তার সঙ্গে বেঁচে আছেন।
১১ দেশের বিবৃতিতে বাংলাদেশের সরকার ও সাধারণ জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নতুন আগত রোহিঙ্গাদেরও আশ্রয় ও নিরাপত্তা দিচ্ছেন, এবং জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।
রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে চায়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রত্যাবাসনের সম্ভাব্য পথ খুঁজে বের করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে সীমান্ত পারাপারের মাধ্যমে বাস্তুচ্যুতি এখনো চলমান এবং রাখাইনে অনেক রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত অবস্থায় আছেন। মিয়ানমারে এখন এমন পরিস্থিতি নেই, যেখানে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, সম্মানের সঙ্গে এবং স্থায়ীভাবে ফিরে যেতে পারে।
যৌথ বিবৃতিতে ১১ দেশ বলেন, প্রত্যাবাসনের শর্ত পূরণ করতে হলে বাস্তুচ্যুতির মূল কারণ সমাধান করা প্রয়োজন, যা শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মিয়ানমার দ্বারা সম্ভব। তাই আমরা সব পক্ষকে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাই।
তাদের বক্তব্যে আরও বলা হয়েছে, মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংঘটিত সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানাই। সহিংসতা বন্ধ এবং মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যায়ভাবে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিও আমরা পুনর্ব্যক্ত করছি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও গুরুতর লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে আমরা সমর্থন দিচ্ছি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের পক্ষে। মানবিক তহবিল হ্রাসের মধ্যে তাদের ভবিষ্যৎ প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতিও নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি, যারা উদারভাবে রোহিঙ্গাদের আতিথ্য প্রদান করছেন।
যৌথ বিবৃতিতে ১১ দেশ রোহিঙ্গাদের অর্থবহ অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার গুরুত্বও তুলে ধরেছে, যাতে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্ষমতাবান হতে পারে এবং বাংলাদেশে নিরাপদ, সম্মানজনক ও গঠনমূলক জীবন যাপন করতে পারে। আট বছর পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।